বেআইনি হাতি শিকার বন্ধ হয়নি
১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৬১৯৮৯ সালে যখন বিশ্বব্যাপী হাতির দাঁত নিয়ে ব্যবসা নিষিদ্ধ করা হয়, তখন অনেকে ভেবেছিলেন, এবার বোধহয় হাতিরা বিলুপ্ত হওয়ার হাত থেকে বাঁচল৷ তার আগের দশ বছরে হাতিদের সংখ্যা কমে অর্ধেক হয়ে গিয়েছিল৷ এবার তারা কিছুটা রেহাই পাবে৷
কিন্তু তার বছর ২৫ পরেই দেখা যাচ্ছে, হাতির দাঁত নিয়ে রমরমা ব্যবসা চলেছে – এবং তা পুরোপুরি বৈধ৷ মজার কথা, ইউরোপীয় ইউনিয়ন সেই ব্যবসায় একজন মেজর প্লেয়ার – তারা হাতির দাঁত বেচছে যেখানে বস্তুটির চাহিদা সবচেয়ে বেশি, অর্থাৎ এশিয়ায়৷ সংরক্ষণকারীদের বক্তব্য, এই বৈধ ব্যবসা শুধু নিষেধাজ্ঞাকে এড়িয়ে যাচ্ছে না, হাতির দাঁত নিয়ে অবৈধ ব্যবসাতেও ইন্ধন যোগাচ্ছে৷ যার ফলে আফ্রিকায় প্রতিবছর ৩০ হাজার হাতিকে চোরাশিকারীদের হাতে প্রাণ দিতে হচ্ছে৷
আইনের ফাঁক ও ফাঁকি
নিষেধাজ্ঞায় যে ব্যতিক্রমগুলো রাখা হয়েছে, তা নিয়েই সমস্যা, বলছেন পরিবেশ ও প্রকৃতি সংরক্ষণবাদীরা৷ বিপন্ন প্রজাতির বন্যপ্রাণী ও উদ্ভিদ নিয়ে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সংক্রান্ত চুক্তি ‘সাইটস' সম্পাদিত হয় ১৯৮৯ সালে৷ সেই চুক্তিতে হাতির দাঁত নিয়ে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য নিষিদ্ধ করা হলেও, দেশের অভ্যন্তরে হাতির দাঁত নিয়ে ব্যবসা নিষিদ্ধ করা হয়নি৷
এ ধরনের লুপহোল বা আইনের ফাঁক আরও আছে; যেমন এক দেশ থেকে আরেক দেশে বাস তুলে নিয়ে যাওয়ার সময় একক ব্যক্তিরা তাদের নিজস্ব শিকার করা গজদন্ত সাথে নিয়ে যেতে পারেন৷ এমনকি ‘‘প্রাক-চুক্তি'' হাতির দাঁতও বেচা চলতে পারে, যেমন চলে প্রাগৈতিহাসিক ম্যামথ হাতির দাঁত নিয়ে ব্যবসা৷
ওদিকে ইউরোপে গজদন্ত কিংবা গজদন্তের তৈরি হাতের কাজ কেনার প্রবণতা কমলেও, এশিয়ায় এখনও আইভরিকে ‘হোয়াইট গোল্ড' বা সাদা সোনা বলা হয়, সেখানে তার এমনই কদর ও চাহিদা৷ অপরদিকে বোটসোয়ানা, নামিবিয়া, জিমবাবওয়ে ও দক্ষিণ আফ্রিকা হাতিদের বিপন্ন প্রজাতির মর্যাদা দেওয়ার বিরুদ্ধে সফল উমেদারি চালিয়ে গেছে, যার ফলে তারা ১৯৯৯ ও ২০০৮ সালে ‘‘একবারের মতো'' তাদের জমানো গজদন্ত বিক্রি করার সুযোগ পেয়েছে৷ এর ফলশ্রুতি: চোরাশিকার বেড়েছে বৈ কমেনি৷
ব্লাড আইভরি
২০০৮ সালে আফ্রিকা থেকে আইভরি বেচা হয় চীনকে; তার পরের কয়েক বছরে প্রতিবছর ৩০ থেকে ৫০ হাজার হাতি মারা হয়েছে বেআইনিভাবে৷ শুধু তানজানিয়াতেই ২০০৯ থেকে ২০১৪ সালের মধ্যে প্রতিবছর এক হাজার করে হাতি চোরাশিকারিদের শিকার হয়েছে৷ কাজেই হাতির দাঁতের বৈধ বেচাকেনার সঙ্গে পোচিং বা চোরাশিকারের সম্পর্কটা স্পষ্ট৷
এছাড়া কালো টাকা সাদা করার মতো, বেআইনি আইভরি বৈধ করতেই বা কতক্ষণ, বিশেষ করে যখন আইভরির বয়স বলার কোনো উপায় নেই? প্রাক-চুক্তি আইভরির সঙ্গে সার্টিফিকেট থাকার কথা, কিন্তু তা জাল করাটাই বা এমন কি শক্ত কাজ৷
প্রতিরোধ দানা বাঁধছে
হংকং হলো হাতির দাঁত নিয়ে আন্তর্জাতিক ব্যবসার একটি বড় কেন্দ্র৷ গত জানুয়ারি মাসে হংকং ঘোষণা করে যে, আইভরির আমদানি ও রপ্তানি নিষিদ্ধ করা হবে; এছাড়া হংকং-এর অভ্যন্তরেও ধাপে ধাপে আইভরি বেচাকেনা বন্ধ করার ব্যবস্থা নেওয়া হবে৷ গতবছর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীন একটি যৌথ চুক্তিতে অনুরূপ প্রতিশ্রুতি দেয়৷ বিশ্বে হাতির দাঁতের চাহিদা চীনেই সবচেয়ে বেশি; তার পরেই নাকি আসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র৷ অথচ বিশ্বে ‘‘প্রাক-চুক্তি'' আইভরির সবচেয়ে বড় রপ্তানিকারক হল ইউরোপীয় ইউনিয়ন৷ কাজেই এখন দাবি উঠেছে, ইউরোপীয় ইউনিয়নকেও কোনো একটা নিদর্শন রাখতে হবে৷
ফ্রান্স, জার্মিন, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রিয়া, সুইডেন ও নেদারল্যান্ডস ইতিমধ্যেই প্রাক-চুক্তি গজদন্ত রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে - এবং অন্যান্য ইইউ-দেশের প্রতি সেই পন্থা অনুসরণের আহ্বান জানিয়েছে৷ ওদিকে ইইউ-এর অভ্যন্তরে আইভরি পাচারের ওপর কোনো নিষেধাজ্ঞা না থাকায়, নিষেধাজ্ঞা-যুক্ত দেশগুলি থেকে আইভরি সহজেই নিষেধাজ্ঞা-মুক্ত দেশগুলিতে গিয়ে পড়ছে৷ ইউরোপীয় কমিশন বলছে, সমস্যাটি নিয়ে নাকি আগামী মার্চ মাসে ‘‘চিন্তা-ভাবনা'' করা হবে৷