দারিদ্রের কবলে বৃদ্ধ অভিবাসী
১৭ জুলাই ২০১৩তবে অধিকাংশ অভিবাসীর অবস্থাটা কিন্তু অন্যরকম৷ পড়াশোনার পর এসার গ্যোকলার বড় এক কোম্পানিতে কন্ট্রোলার হিসাবে কাজ করেন৷ পরে সে চাকরি না পোষালে স্বাধীনভাবে ব্যবসা শুরু করেন তিনি৷ ছোট ছোট বাড়ি কিনে টাকা বিনিয়োগ করতে শুরু করেন৷ ‘‘এজন্য আমার আজ বাড়ি ভাড়া দিতে হয় না৷ এবং বাড়ির আয়ের সঙ্গে পেনশনের ১২০০ ইউরো মিলে দ্বিগুণ অর্থ আসে আমার হাতে'', বলেন গ্যোকলার৷ কিন্তু এটা তো শুধু তাঁর গল্প নয়৷ তাঁর বয়সি অধিকাংশ অভিবাসীকে যে একরকম কায়ক্লেশেই বেঁচে থাকতে হয়৷
বহু মানুষ জার্মানিতে আসেন কাজের সন্ধানে
১৯৬০ এবং ৭০-এর দশকে দক্ষিণ ও ইউরোপের পূর্বাঞ্চল থেকে লাখ লাখ মানুষ জার্মানিতে আসেন কাজের সন্ধানে, দারিদ্র্যের হাত থেকে পরিত্রাণ পেতে৷ জার্মানির অর্থনীতির তখন রমরমা অবস্থা৷ প্রয়োজন ছিল কর্মী ও শ্রমিকের৷ এই সব শ্রমিক ইস্পাতের কারখানা, খনি, গাড়ি নির্মাণের কারখানা ইত্যাদি ক্ষেত্রে শ্রম দিয়েছেন৷ তবে সম্পদ ও সমৃদ্ধির মুখ দেখেছেন খুব কম জনই৷
প্রবীণ অভিবাসীদের অনেকেই দরিদ্র
অর্থনীতি ও সমাজবিজ্ঞান ইন্সটিটিউট হান্স ব্যোকলার ফাউন্ডেশন-এর এক সমীক্ষায় জানা গেছে যে, পেনসনভোগী বা এই বয়সি অভিবাসীর মধ্যে ৪০ শতাংশই দারিদ্র্যের শিকার৷ সমবয়সি জার্মানদের তুলনায় প্রায় তিনগুণ বেশি৷ ইউরোপীয় ইউনিয়নের দারিদ্র্যের সংজ্ঞা অনুযায়ী, জার্মানিতে একজনকে ৮৪৮ ইউরোর কম অর্থ দিয়ে মাস চালাতে হলে তাকে দরিদ্র বলা যায়৷ আর স্বামী-স্ত্রী বা দুইজনের জন্য এই অর্থের পরিমাণ ১২৭৮ ইউরো৷
সমাজ গবেষকরা অভিবাসীদের দারিদ্র্যের জন্য কয়েকটি কারণের কথা উল্লেখ করেছেন৷ তাঁদের মতে, ‘‘যে সব বিদেশি এখানে কাজের জন্য আসেন তারা বড় বড় প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ পেলেও সাধারণ ও ছোট খাট কাজগুলিই তাদের করতে হয়৷ যাতে বেতন খুব বেশি নয়৷''
দ্বিতীয়ত: ১৯৮০-এর দশকে শিল্প কলকারখানায় কাজ কমে গেলে বিশেষ করে বিদেশিদেরই ছাঁটাইয়ের কবলে পড়তে হয়েছিল৷ সেজন্য জার্মানদের চেয়ে বিদেশিদের মধ্যে বেকারের হারও বেশি দেখা যায়৷
এছাড়া, অনেক বিদেশি পরিণত বয়সে এখানে এসেছেন৷ তাই পেশা জীবনেও নানা রকম বাধা পড়েছে তাদের৷ স্বদেশে তারা কাজ করলেও অনেকে সামাজিক বিমার আওতায় ছিলেন না৷ তাই সেই কাজের সময়টাকে পেনশনের খাতে ধরা হয় না৷ ফলে, বৃদ্ধ বয়সে পেনশনও কম পান তারা৷
জার্মানির অর্থনৈতিক গবেষণা ইন্সটিটিউট-এর উদ্যোগে ২০০৬ সালেও প্রবীণ অভিবাসীদের ক্রমবর্ধমান দারিদ্র্য নিয়ে একটি সমীক্ষা হয়েছিল৷ সেই সময় থেকে আজ পর্যন্ত অবস্থার খুব একটা পরিবর্তন হয়নি৷ প্রবীণ অভিবাসীদের মধ্যে দরিদ্রের সংখ্যা ছিল ২০০৬ সালে ১ লাখ ৭০ হাজার৷ আজ এই সংখ্যাটা ২ লাখ ৭০ হাজারে দাঁড়িয়েছে৷ সম্ভবত সংখ্যাটা আরো বাড়তে পারে৷
একটি নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা হয়
ভবিষ্যতের অভিবাসী প্রজন্মকে বৃদ্ধ বয়সে দারিদ্র্যের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য ২০০৯ সালে বাডেম ভ্যুর্টেমব্যার্গ রাজ্যের ইন্টিগ্রেশন মন্ত্রী ও কয়েকটি জনককল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠান একসঙ্গে মিলে একটি বিশাল প্রকল্প গঠন করে৷ কিন্তু পেনশন সংক্রান্ত বিভিন্ন কোর্সে অভিবাসীদের খুব একটা সাড়া পাওয়া যায়নি৷ তাই পরে ‘অভিবাসন ও সামাজিক নিরাপত্তা বিষয়ক একটি নেটওয়ার্ক' গড়ে তোলা হয়৷ নেটওয়ার্কের পরিচালক আন্ড্রেয়াস শোয়ারৎস বলেন, ‘‘বিশেষ করে অভিবাসীদের তিনটি গ্রুপ তুর্কি, ইটালিয়ান ও গ্রিকদের পেনশন ও স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে তথ্যদি পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয় এই নেটওয়ার্কে৷ সামাজিক নিরাপত্তার বিষয়টি অত্যন্ত জটিল৷ আমরা এমন সব সেমিনারের আয়োজন করে থাকি, যেখানে কঠিন বিষয়গুলিকেও খুব সহজে বুঝিয়ে দেওয়া হয়৷ এছাড়া অংশগ্রহণকারীরা যাতে মাতৃভাষায় প্রশ্ন করতে পারে, সে ব্যবস্থাও রাখা হয় সেমিনারে৷''
২০১২ সালে নেটওয়ার্কটির বিভিন্ন কোর্স চলেছে৷ ভালো সাড়াও পাওয়া গেছে৷ তবে অন্যান্য রাজ্যে এই ধরনের ব্যবস্থা থাকলেও খুব একটা প্রচার হয়নি বিষয়টি নিয়ে৷ এছাড়া কেন্দ্রীয় পর্যায়ে এই রকমের একটি তথ্য-ক্যাম্পেনের অভাব রয়েছে৷
সামাজিক ভাতার দ্বারস্থ হতে দ্বিধাবোধ
আজকের পেনশনোভোগী বা বৃদ্ধ অভিবাসীরা অবশ্য এই ধরনের ‘ক্যাম্পেন' থেকে লাভবান হবেন না৷ তাদের সামাজিক ভাতার জন্য আবেদন করা ছাড়া উপায় নেই৷ সমাজ গবেষক এরিক সাইলস বলেন, ‘‘পেনশনভোগী দুঃস্থ অভিবাসীদের সবাই যদি সামাজিক ভাতার দ্বারস্থ হতেন, তাহলে পরিসংখ্যানে দরিদ্র বৃদ্ধ অভিবাসীর সংখ্যাটা আরো বেশি হতো৷ অভাবে পড়লে জার্মানদের চেয়ে বিদেশিরা সামাজিক ভাতার জন্য হাত পাততে দ্বিধা বোধ করেন অনেক বেশি৷''