বুকে গুলির পরামর্শ বিজেপি প্রার্থীর!
১ এপ্রিল ২০১৯বিজেপির জাতীয় সভাপতি অমিত শাহ, যিনি নিজেও এবার সংসদীয় নির্বাচনে দলের প্রার্থী হয়েছেন গুজরাট থেকে, তিনি পশ্চিমবঙ্গে ভোটের প্রচারে এসেই ঘোষণা করে দিলেন, বিজেপি ফের কেন্দ্রে ক্ষমতায় এলে পশ্চিমবঙ্গেও নাগরিক তালিকার সংশোধন হবে! অর্থাৎ উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্য আসামে যা হয়েছে অভিবাসীদের ক্ষেত্রে, যা কার্যত মুসলিম শরণার্থীদের বিতাড়নের প্রশ্নে গিয়ে দাঁড়িয়েছে৷ বিজেপি সরকারের গত পাঁচ বছরের সার্বিক ব্যর্থতার প্রেক্ষিতে সারা দেশেই যখন হিন্দুত্ববাদী এবং মুসলিমবিরোধী একটা জিগির তোলার চেষ্টা চলছে, তখন এ ধরনের মন্তব্য বার বার করার পেছনে যে রাজনৈতিক কৌশল, সেটা ভালোমতোই ধরা পড়ে৷
কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, সাধারণ মানুষ, যাঁরা অতটা তলিয়ে ভাবছেন না, তাঁদের ক্ষেত্রে এটা সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা ছাড়া কিছুই তৈরি করছে না৷ এই উত্তেজনা বাড়তে থাকলে ভোটের মুখে দাঙ্গা–হাঙ্গামার আশংকা উড়িয়ে দেওয়া যায় না৷
এরই মধ্যে বিতর্ক উঠেছে পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ ২৪ পরগণার বসিরহাট লোকসভা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থীর সাম্প্রতিক একটি মন্তব্য ঘিরে৷ নির্বাচনে সন্ত্রাস এবং বুথ দখলের চেষ্টা হতে পারে, এই সম্ভাবনার প্রেক্ষিতে তিনি বলেন, যদি বুথ দখলের চেষ্টা হয়, সিআরপিএফকে বলব, পায়ে গুলি না করে বুকে গুলি করতে৷ এই মন্তব্যকে প্ররোচনার চেষ্টা হিসেবে দেখেছে বিরোধী তৃণমূল কংগ্রেস এবং সায়ন্তন বসুর বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনে নালিশ করেছে - যার ভিত্তিতে সায়ন্তনকে জবাবদিহির নির্দেশ দিয়েছে কমিশন৷
অভিযোগ সম্পর্কে কী বলছেন সায়ন্তন বসু? ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘‘যে ভঙ্গিতে বলেছি, সেটা বলাটা হয়তো ঠিক হয়নি, সেটা নিয়ে প্রশ্ন থাকতে পারে৷ কিন্তু হিংসা তো হচ্ছে৷ গণতন্ত্র ধূলিসাৎ করা হচ্ছে৷ পুলিশ ঠুঁটো জগন্নাথ হয়ে বসে আছে৷ এই প্রশ্নগুলো তুলেছি৷''
সায়ন্তন বসু জানাচ্ছেন, নির্বাচন কমিশনের কৈফিয়ৎ তলবের উত্তরে তিনি যা বলেছেন, তাতে বিজেপির রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সম্পূর্ণ সায় আছে৷ কারণ এই বাস্তবতা সবাই মেনে নিয়েছেন যে রাজ্য প্রশাসন, পুলিশ, মাফিয়া এবং স্থানীয় গুন্ডারা মিলে রাজ্যে ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষে এক সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে, যা প্রতিরোধ করা দরকার৷ এবং বুথ দখলের চেষ্টা দেখলে কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা বাহিনী গুলি চালাবে, এই নির্দেশিকা সবসময়ই বলবৎ থাকে৷ কাজেই তিনি নতুন কিছু বলেননি, দাবি করেছেন সায়ন্তন বসু৷
কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, বাকি রাজ্যগুলোতে বিজেপি নিজেরা যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে, সেটাও সুষ্ঠু, অবাধ এবং শান্তিপূর্ণ নির্বাচন করার পক্ষে একেবারেই সহায়ক নয়৷ জনস্বার্থ আইনজীবী এবং সমাজকর্মী প্রশান্ত ভূষণ সোমবারই টুইট করেছেন, বিহার সরকারি আশ্রয়ে ধর্ষণ মামলায় অভিযুক্তকে গিরিরাজ সিংয়ের জনসভায় দেখা গিয়েছিল৷ এবার যোগী আদিত্যনাথের সভায় প্রথম সারিতে দেখা গেল দাদরি গণপ্রহার মামলার আসামিকে৷
বস্তুত এই অভিযোগ সারা দেশ থেকেই উঠছে, যে দাগী আসামিদের দেখা যাচ্ছে বিজেপি নেতা, মন্ত্রীদের সভায়, মিছিলে, যা আসলে সাধারণ, নিরীহ ভোটারদের এক বার্তা দেওয়ার চেষ্টা৷ যে কারণে প্রশান্ত ভূষণ তাঁর টুইটে শেষ মন্তব্য করেছেন, সমস্ত ধর্ষণকারী, খুনী এবং গুন্ডারা এখন চুপিসারে জেলের বাইরে বেরিয়ে আসছে, বিজেপি এবং মোদীর ক্ষমতায় ফেরার মরিয়া চেষ্টায় মদত করতে৷