বিহারে ধাক্কা খেতে পারেন মোদী-নীতীশ
৯ নভেম্বর ২০২০বিহারে কি বড়সড় ধাক্কা খেতে চলেছে মোদীর রথ? নির্বাচন পরবর্তী জনমত সমীক্ষায় তেমনই ইঙ্গিত মিলছে। আগামী ১০ তারিখ বিহার বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফল জানা যাবে। তার আগে ভারতের প্রায় প্রতিটি গণমাধ্যমের বুথ ফেরত সমীক্ষায় বলছে, পরাজয় ঘটবে নিতিশ কুমারের সরকারের। বিপুল ভোটে জেতার সম্ভাবনা তেজস্বী যাদবের নেতৃত্বে বিরোধী জোটের।
তিন ভাগে ভোট হয়েছে বিহারে। হাই ভোল্টেজ ভোটে গোটা বিহার জুড়ে একাধিক সভা করেছেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। নীতীশ কুমারের জনতা দল ইউনাইটেডের সঙ্গে জোট গড়ে গত পাঁচ বছর বিহার শাসন করেছে বিজেপি। নীতীশ এবং বিজেপির এই জোটের নাম এনডিএ। অন্য দিকে, এনডিএ-কে এ বছর কড়া চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছিলেন লালু প্রসাদের ছেলে তেজস্বী যাদব। তাঁর রাষ্ট্রীয় জনতা দল এ বার জোট গড়েছে প্রায় সমস্ত বিরোধী পক্ষকে নিয়ে। যার মধ্যে কংগ্রেস আছে, একাধিক বাম দল আছে।
বিহার বিধানসভায় যে দল ১২২ টির বেশি আসন পাবে, সেই সরকার গড়তে পারবে। একাধিক বুথ ফেরত সমীক্ষা বলছে, ১২২ এর চেয়ে অনেক বেশি আসন পেতে চলেছে বিরোধী মহাজোট বা মহাগোটবন্ধন। চাণক্য সংস্থা ভারতের প্রায় সমস্ত ভোটেরই জনমত সমীক্ষা এবং বুথ ফেরত সমীক্ষা করে। সাধারণত তাদের সমীক্ষা ভুল প্রমাণিত হয় না। সেই চাণক্য বিহারের বিরোধী জোটকে ১৮০টি আসন দিয়েছে। সরকারপক্ষকে দিয়েছে মাত্র ৫৫টি আসন। এনডিটিভির সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে বিরোধী জোট পেতে পারে ১২৮টি আসন। সরকার পক্ষ পেতে পারে ৯৯টি আসন। বিজেপি-পন্থী চ্যানেল হিসেবে প্রসিদ্ধ রিপাবলিক টিভি। তাদের বুথ ফেরত সমীক্ষা বলছে বিরোধী জোট পেতে পারে ১১৮টি থেকে ১৩৮টি আসন। নীতীশ কুমারের জোট পেতে পারে ৯১ থেকে ১১৭টি আসন।
প্রায় কোনো মিডিয়ায় এনডিএ-কে সংখ্যাগরিষ্ঠতা দেয়নি। প্রশ্ন হলো, কেন বিহারে বিজেপি এবং নীতীশের এই ভরাডুবির প্রবণতা দেখা যাচ্ছে?
দুইটি বিষয় এ ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এক, শেষ মুহূর্তে এনডিএ জোট সঙ্গী চিরাগ পাসোয়ানের দল লোক জনশক্তি পার্টির জোট ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়া। নীতীশের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ এনে চিরাগ প্রায় প্রতিটি আসনেই শাসক দলের বিরুদ্ধে প্রার্থী দিয়েছিলেন। বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, নীতীশের জোটে থেকেও বিজেপি চিরাগকে সাহায্য করেছেন। ফলে শাসক জোটের একটি বড় অংশের ভোট চিরাগ পাসোয়ান কেটে নিয়েছেন বলে অনুমান করা হচ্ছে। প্রায় প্রতিটি সমীক্ষাতেই দেখা গিয়েছে, চিরাগ একাধিক আসন পাচ্ছেন। অন্য দিকে, বিহারের মানুষের নিতিশের উপর ক্ষোভও যথেষ্ট। অনেকেই মনে করেন, নিতিশ গত বারের নির্বাচনের পর মানুষের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন। কারণ, সেই ভোটে নীতীশ লড়াই করেছিলেন লালুপ্রসাদের জোটসঙ্গী হয়ে। বিজেপির বিরুদ্ধে। কিন্তু ভোটের পর কিছু দিন সরকার চালানোর পর লালুকে ছেড়ে বিরোধী বিজেপিকে সঙ্গে নিয়ে তিনি সরকার পুনর্গঠন করেন। যা এখনো বিহারের বহু মানুষ মেনে নিতে পারেননি। এ ছাড়াও এ বারের ভোটে কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধেও মানুষের ক্ষোভ প্রকাশ পেয়েছে বলে কোনো কোনও বিশেষজ্ঞ মনে করছেন।
বস্তুত, নির্বাচনের শেষ পর্বে প্রকাশ্যে বিজেপির সঙ্গে নীতীশের বিতর্ক হয়েছে। এনআরসি নিয়ে উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী এবং বিজেপি নেতা যোগী আদিত্যনাথের বক্তব্যের তীব্র সমালোচনা করেছিলেন নীতীশ। তখনই বোঝা গিয়েছিল, শাসক জোটের মধ্যে অন্তর্কলহ চলছে।
গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, বাম প্রার্থীদের ভোট। ১৯৯০ সালের পরে এত ভোট বিহারের বাম প্রার্থীরা পাননি। প্রায় প্রতিটি সমীক্ষাতেই বামেদের আসন ২০টি বা তার বেশি দেখানো হয়েছে। সিপিআইএমএল-এর সাধারণ সম্পাদক দীপঙ্কর ভট্টাচার্য ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, ''লাগাতার বিহারে জমি কামড়ে কাজ করেছে বাম দলগুলি। এ বারের ভোটে তারই ফলাফল দেখা যাচ্ছে।''
জনমত সমীক্ষা সব সময় ঠিক হয় না। কোনো পক্ষই ১২২টি আসন না পেলে ঘোড়া কেনাবেচার সম্ভাবনাও যথেষ্ট রয়েছে। অতীতে বিহারে সে ঘটনা ঘটেছেও। ফলে বুথ ফেরত সমীক্ষার ফলাফল জেনেও সব পক্ষই তাকিয়ে আছে ১০ তারিখের দিকে।