বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি
২ এপ্রিল ২০১২ভর্তির বয়স যেমন কমছে, তেমনি পড়াশোনাও আগের চেয়ে হয়ে উঠেছে অনেক জটিল৷ ‘‘বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছি, এখন দেখি কী হয়'' – এই চিন্তাভাবনা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে৷ কারণ সেই দিন আর নেই৷ তাই বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি অ্যাপ্লাইড সায়েন্স ইউনিভার্সিটিগুলোও চালু করেছে ‘কেনেনল্যারনেন টাগ'৷ অর্থাৎ বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ, ক্লাসরুম, অধ্যাপক, লাইব্রেরি সবকিছুর সঙ্গেই পরিচয় করিয়ে দেয়া হবে৷ তবে রুয়র ইউনিভার্সিটি বখুম এগিয়ে গেছে আরো কয়েক ধাপ৷ যারা বিশ্ববিদ্যালয়ে নিশ্চিতভাবে ভর্তি হচ্ছে, তাদের সবাইকে দেয়া হচ্ছে একজন করে মেন্টর৷ প্রোগ্রামের নাম ‘মেল মেন্টরিং প্লাস'৷ শুধু জার্মানি নয় অন্যান্য দেশ থেকে যেসব বিদেশি ছাত্র-ছাত্রী এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে চায়, তাদের সঙ্গেও নিয়মিত যোগাযোগ করা হচ্ছে ইমেলের মাধ্যমে৷ কী কাজ মেন্টরের? সে কীভাবে সাহায্য করবে?
ফ্রেডেরিকে এবং আনিকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে দাঁড়িয়ে কথা বলছে৷ ‘‘আমাদের সামনে ক্যাম্পাসের ম্যাপ৷ আমরা এই মুহূর্তে এইখানে দাঁড়িয়ে আছি৷ আমরা এখন কোথায় যাবো? আমরা যাবো চিকিৎসাবিদ্যা অনুষদে৷ এখানে ছোট করে এমএ লেখা রয়েছে৷ এখানে রয়েছে ক্লাসরুম, এর কাছেই রয়েছে ল্যাবরেটরি এবং অফিস৷''
রুয়র ইউনিভার্সিটি বখুম'এর ক্যাম্পাস বিশাল এবং সব জায়গায় হেঁটে যেতে হয়৷ প্রথম ঝলকেই ১৭ বছরের আনিকার কাছে তা স্পষ্ট হয়ে ধরা পড়ে৷ আগামী বছর সে ভর্তি হবে চিকিৎসাবিদ্যা অনুষদে৷ আনিকা খুবই খুশি এবং আনন্দিত, কারণ তার মেন্টর তাকে সবকিছু ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখাচ্ছে৷ প্রয়োজনীয় সবকিছু বুঝিয়ে দিচ্ছে৷ ইমেলের মাধ্যমে অনেক প্রশ্ন করেছিল আনিকা৷ সব প্রশ্নের উত্তরসহ আজ সামনা-সামনি ক্যাম্পাস ঘুরিয়ে দেখাচ্ছে ফ্রেডেরিকে৷ ফ্রেডেরিকে বলল,‘‘সামনা-সামনি দেখা হলে অনেক প্রশ্নের উত্তর বেশ সহজেই বুঝিয়ে দেয়া যায়৷ ই-মেলে এত নিঁখুতভাবে সবকিছু বোঝানো সম্ভব নয়৷ আমার মনে হয়, দুই পক্ষের জন্যই এটা এক ধরণের বিশেষ একটি অভিজ্ঞতা৷ ইমেলের জগতের বাইরে একজন মানুষকে সত্যিকার অর্থে চেনার জানার একটি অপূর্ব সুযোগ৷''
ফ্রেডেরিকে চিকিৎসাবিদ্যার দশম সেমেস্টারে পড়ছে৷ সে পাঁচ জন ছাত্র-ছাত্রীর মেন্টর হিসেবে কাজ করছে৷ ২০০৬ সালে ‘মেল মেন্টরিং প্লাস' প্রোগ্রামটি চালু করা হয়েছে৷ এ পর্যন্ত প্রায় ১৬০ জন ছাত্র-ছাত্রীর মেন্টর হিসেবে ফ্রেডেরিকে কাজ করছে৷ তাই অনেক প্রশ্নের উত্তর সে আগে থেকেই জানে৷ আনিকা যেসব প্রশ্ন করেছে তার বেশির প্রশ্নই সে আগে শুনেছে৷ আনিকা জানাল,‘‘পদার্থবিদ্যার কথাই ধরা যাক৷ ফিজিক্স আমার পছন্দের বিষয় না৷ এটা খুব কঠিন৷ ফিজিক্স ছাড়া আমি এগিয়ে যেতে পারবো তো? তখন আবার শুনি – সব কিছুই কঠিন৷ এর সঙ্গে রয়েছে নুমেরুস ক্লাউসুস৷''
চিকিৎসাবিদ্যা বিষয় নিয়ে যারা পড়তে চায় তাদের জন্য নুমেরুস ক্লাউসুস থাকাটা বাধ্যতামূলক৷ অর্থাৎ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য স্কুল ফাইনালের রেজাল্ট খুব ভাল হওয়া প্রয়োজন৷ প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয় একটি ভর্তি পরীক্ষা নেয়৷ সেই পরীক্ষায় পাশ করা জরুরি৷ কারো যদি কাজের অভিজ্ঞতা বা ইন্টার্নশিপের অভিজ্ঞতা থাকে, তাহলে তা ইতিবাচক বলে গণ্য করা হবে৷ এসব কিছু ইতিমধ্যেই আনিকাকে বুঝিয়েছে ফ্রেডেরিকে৷ এখন ফ্রেডেরিকে আনিকাকে দেখাচ্ছে কোথায় ক্লাস হবে, কীভাবে লাইব্রেরি থেকে বই তুলতে হবে৷ ফ্রেডেরিকের ভাষায়, ‘‘আমরা এখন ল্যাবরেটরিতে৷ এখানে আমার পিএইচডির জন্য গবেষণা চালাচ্ছি৷ গবেষণা এখনো চলছে৷ আমি সারাক্ষণই বিভিন্ন ধরণের ডেটা এবং তথ্য সংগ্রহ করছি৷ ঠিক কী নিয়ে আমি গবেষণা করছি? পেশির বিভিন্ন প্রোটিনের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে আমার গবেষণার মূল বিষয়৷''
চিকিৎসাবিদ্যার খুঁটিনাটি বোঝা সহজ নয় তবে কোন কোন বিষয় আনিকার কাছে পরিষ্কার৷ সে নিজেও মাইক্রোস্কোপের মধ্যে দিয়ে কয়েকটি প্রোটিন সেল দেখল৷ ল্যাবরেটরিতে কাজ করার মধ্যে উত্তেজনা রয়েছে, জানাল আনিকা৷
‘মেল মেন্টরিং প্রোগ্রাম'এর দায়িত্বে রয়েছেন মাগডালেনা সমারফেল্ড৷ তিনি জানালেন, ‘‘খুব কম সংখ্যক ছাত্র-ছাত্রী রয়েছে যারা মেন্টরের সঙ্গে যোগাযোগের পর সিদ্ধান্ত নেয় – না, এই বিষয়টি আমার জন্য নয়৷ মাত্র ১০ থেকে ১৫ শতাংশ পরবর্তীতে তাদের সিদ্ধান্ত পাল্টায়৷''
তবে বেশিরভাগ ছাত্র-ছাত্রীই জানে তারা কোন বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করতে চায়, ভবিষ্যতে কোন পেশায় নিজেদের নিয়োজিত করতে চায়৷ রুয়র ইউনিভার্সিটি বোখুম'এ প্রায় ১৫০টি বিভিন্ন বিষয় নিয়ে পড়াশোনার সুযোগ রয়েছে৷ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছে প্রায় ৩৬ হাজার ছাত্র-ছাত্রী৷ দূরত্বের কারণে মেল মেন্টরিং -এর সাহায্যে প্রতিনিয়ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করছে দক্ষিণ অ্যামেরিকা এবং এশিয়ার ছাত্র-ছাত্রীরা৷
প্রতিবেদন: মারিনা জোয়ারদার
সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন