1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অর্থ বন্ধ করলেন ট্রাম্প

১৫ এপ্রিল ২০২০

দেশে যখন হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু হচ্ছে, তখন প্রতিদিন নতুন নতুন বিতর্কের জন্ম দিচ্ছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প।

https://p.dw.com/p/3av0Y
ছবি: AFP/M. Ngan

হুমকি আগেই দিয়েছিলেন। এ বার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে অর্থ দেওয়া সত্যিই বন্ধ করে দিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। জানালেন, ''আপাতত ওই সংস্থাকে অর্থ দেবে না অ্যামেরিকা।'' যা নিয়ে বিশ্ব জুড়ে নতুন বিতর্ক শুরু হয়েছে। অ্যামেরিকাই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে সব চেয়ে বেশি অর্থ দেয়। আর নতুন আর্থিক বছর সবে শুরু হয়েছে। ফলে এই সময়ে অ্যামেরিকা অর্থ বন্ধ করে দেওয়া মানে করোনা সংকটের সময়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থায় আর্থিক সংকটও শুরু হবে।  শুধু তাই নয়, দেশের পরিস্থিতি কবে স্বাভাবিক হবে, এই প্রশ্নে বিভিন্ন রাজ্যের প্রশাসনের সঙ্গেও বিতর্কে জড়িয়েছেন ট্রাম্প। নিউ ইয়র্কের ডেমোক্র্যাট গভর্নর জানিয়ে দিয়েছেন, ট্রাম্প যাই বলুন, নাগরিকদের সম্পূর্ণ সুরক্ষা দিতে না পারলে লকডাউন তিনি তুলবেন না। এরই মধ্যে মঙ্গলবার সব চেয়ে বেশি মৃত্যু দেখল মার্কিন মুলুক।

গত সপ্তাহেই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিরুদ্ধে তোপ দেগেছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। অভিযোগ করেছিলেন, সংস্থাটি সময় মতো করোনা সংক্রান্ত তথ্য দিয়ে অ্যামেরিকাকে সাহায্য করেনি। বরং ভুল পরামর্শ দিয়েছে। শুধু তাই নয়, সংস্থাটি চীনকে বেশি সাহায্য করছে বলেও অভিযোগ করেছিলেন ট্রাম্প। উত্তরে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান জানিয়েছিলেন, এটা রাজনীতি করার সময় নয়। চীনকে অতিরিক্ত গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে কারণ, সেখান থেকেই করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব হয়েছিল। ফলে ভাইরাসটির প্রকৃতি বুঝতে সেখানে গিয়ে পরীক্ষা চালাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা।

কিন্তু তাতেও শান্ত হননি ট্রাম্প। গত সপ্তাহের শেষের দিকেই তিনি হুমকি দিয়েছিলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ফান্ড বন্ধ করে দেওয়া হবে। তাঁর যুক্তি ছিল, অ্যামেরিকা সংস্থাটিকে সব চেয়ে বেশি অর্থ প্রদান করে। ফলে তার বদলে কিছু সুযোগ সুবিধাও আশা করে তারা। মঙ্গলবার সেই একই কথা বলে সংস্থাটির ফান্ড বন্ধ করে দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। যার জেরে শুরু হয়েছে নতুন বিতর্ক। বিশেষজ্ঞদের অনেকেরই বক্তব্য, বিশ্ব জুড়ে এই স্বাস্থ্য সংকটের পরিস্থিতিতে ট্রাম্প একটি হঠকারী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

জাতি সংঘের প্রধান সচিব জানিয়েছেন, ভুল সময়ে ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ট্রাম্প। বস্তুত, বিশ্ব জুড়ে চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের একটি বড় অংশ ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তের কঠোর সমালোচনা করেছে। সকলেরই বক্তব্য, প্রথম থেকেই ক্ষমতা জাহির করছেন ট্রাম্প। বাস্তবকে অস্বীকার করছেন। কারণ, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অনেকদিন আগেই অ্যামেরিকাকে করোনা নিয়ে সতর্ক করেছিল। কিন্তু ট্রাম্প তখন তা আমল দেননি। বরং বিষয়টিকে লঘু করে দেখারই চেষ্টা করেছিলেন। বর্তমান পরিস্থিতিতে অবশ্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট তা স্বীকার করতে চাইছেন না। বরং তাঁর বক্তব্য, সময়ের আগেই ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিলেন তিনি। যা নিয়ে দেশের সংবাদমাধ্যমের একাংশের সঙ্গেও বিতর্কে জড়িয়েছেন তিনি।

বস্তুত বিতর্ক পিছু ছাড়ছে না ট্রাম্পের। শুধু স্বাস্থ্য সংস্থা নয়, দেশের বিভিন্ন প্রদেশের গভর্নরদের সঙ্গেও বিতর্ক শুরু হয়েছে তাঁর। স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে ডেমোক্র্যাট গভর্নরদের 'মিউটিনিয়ার্স' বা বিদ্রোহী বলে ঘোষণা করে দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। কেন? দেশের অর্থনীতিকে মন্দার হাত থেকে বাঁচাতে নতুন পরিকল্পনা শুরু করেছেন ট্রাম্প। আগামী ১ মে থেকে জীবনযাত্রা স্বাভাবিক করতে হবে বলে আগাম জানিয়ে দিয়েছেন তিনি। কিন্তু নিউ ইয়র্ক সহ বেশ কয়েকটি ডেমোক্র্যাটিক প্রদেশের গভর্নররা জানিয়েছেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে এবং নাগরিকদের জীবন সম্পূর্ণ সুরক্ষিত না হলে তাঁরা ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্ত মানবেন না। যা পছন্দ হয়নি প্রেসিডেন্টের। সরাসরি তাই গভর্নরদের বিরুদ্ধেও তোপ দেগেছেন তিনি।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট যখন বিবিধ বিতর্কে ব্যস্ত, তখন হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু হচ্ছে গোটা দেশ জুড়ে। মঙ্গলবার এখনও পর্যন্ত এক দিনে সব চেয়ে বেশি মৃত্যু দেখেছে মার্কিন মুলুক। মৃত্যু হয়েছে দুই হাজার ২২৮ জনের। যদিও কোনও কোনও মহলের দাবি, সংখ্যাটি তিন হাজার ছাড়িয়ে গিয়েছে। এখনও পর্যন্ত অ্যামেরিকায় করোনায় মৃত্যু হয়েছে ২৬ হাজারেরও বেশি লোকের। আক্রান্তের সংখ্যা ছাড়িয়ে গিয়েছে ছয় লাখেরও বেশি। অন্য যে কোনও দেশের তুলনায় যা অন্তত তিন গুণ। দ্রুত এই পরিস্থিতির উন্নতি হবে, এমন আশ্বাস এখনও দিতে পারছেন না বিশেষজ্ঞরা।

অ্যামেরিকার পরিস্থিতি ভয়াবহ হলেও ক্রমশ স্বাভাবিক হচ্ছে ইউরোপ। মঙ্গলবার গত এক মাসের মধ্যে সব চেয়ে কম আক্রান্ত এবং মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে ইটালিতে। স্পেন এবং ফ্রান্সও ক্রমশ স্বাভাবিক হচ্ছে। জার্মানিতে আগামী ১৯ এপ্রিল থেকে ধীরে ধীরে সামাজিক নিষেধাজ্ঞা তোলা হতে পারে বলে ইঙ্গিত মিলেছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী এখনও পর্যন্ত করোনায় বিশ্ব জুড়ে মৃত্যু হয়েছে এক লাখ ২৬ হাজারেরও বেশি লোকের। আক্রান্ত প্রায় ২০ লাখ। সুস্থ হয়েছেন চার লাখ ৭৮ হাজার জন। এই পরিস্থিতির মধ্যেই ইন্টারন্যাশনাল মানিটারি ফান্ড বা আইএমএফ জানিয়েছে এ বছরে গোটা বিশ্বের অর্থনীতিতে ৩ শতাংশ পতন হতে পারে। যা ভয়াবহ মন্দার দিকেই পৃথিবীকে নিয়ে যাবে।

এসজি/জিএইচ (রয়টার্স, এপি, এএফপি)