এবার হিন্দু সেবককে কুপিয়ে হত্যা
১০ জুন ২০১৬নিত্যরঞ্জনের (৬২) বাড়ি গোপালগঞ্জ সদরের আরুয়া কংশু এলাকায় হলেও, তিনি প্রায় ৪০ বছর ধরে পাবনার হেমায়েতপুরের শ্রী শ্রী ঠাকুর অনুকুল চন্দ্র সৎসঙ্গ আশ্রমে সেবক হিসেবে কাজ করে আসছিলেন৷
পাবনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল্লাহ আল-হাসান জানান, ‘‘নিত্যরঞ্জন পান্ডে প্রতিদিন ভোরে হাঁটতেন৷ অন্যান্য দিনের শুক্রবার ভোরেও হাঁটতে বেরিয়েছিলেন৷ তিনি হাঁটতে হাঁটতে পাবনা মানসিক হাসপাতালের উত্তরপাশের প্রধান গেটের কাছে পৌঁছালে দুর্বৃত্তরা পেছন থেকে তাঁর ঘাড়ে ও মাথায় এলোপাতাড়ি কুপিয়ে পালিয়ে যায়৷ এতে অবশ্য ঘটনাস্থলেই তাঁর মৃত্যু হয়৷'' তাঁকে সাম্প্রতিক হত্যাকাণ্ডগুলোর মতোই একই স্টাইলে হত্যা করা হয় বলে জানান আবদুল্লাহ আল-হাসান৷
এ নিয়ে গত ছয় দিনে চারজন নিহত হলেন৷ ৫ জুন চট্টগ্রামে পুলিশ সুপার (এসপি) বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতুকে হত্যা করা হয়েছিল৷ একই দিন নাটোরে দুর্বৃত্তরা খ্রিষ্টান ব্যবসায়ী সুনীল গোমেজকে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা৷ এর একদিন পর ৭ জুন ঝিনাইদহে হিন্দু পুরোহিত আনন্দ গোপাল গাঙ্গুলিকে কুপিয়ে হত্যা করে হয়৷ আর শুক্রবার ভোরে পাবনায় হত্যা করা হলো আশ্রমের সেবক নিত্যরঞ্জন পান্ডেকে৷
চট্টগ্রামে পুলিশ সুপারের স্ত্রীকে হত্যার পর পরই বাংলাদেশে জঙ্গিবিরোধী অভিযান জোরদার করা হয়েছিল৷ এই অভিযানে গত পাঁচদিনে পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুক যুদ্ধ' বা ‘ক্রসফায়ারে' সাতজন ‘জঙ্গি' নিহতও হয়৷ পুলিশের দাবি, নিহত এই ‘জঙ্গিরা' বিভিন্ন হত্যাকাণ্ড এবং হামলার সঙ্গে জড়িত৷
এদিকে বৃহস্পতিবার রাত ১২টা থেকে বাংলাদেশে জঙ্গিবিরোধী বিশেষ অভিযান শুরু করেছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী৷ র্যাব ও পুলিশের এই অভিযান দেশের জঙ্গি অধ্যুষিত এলকা এবং বিশেষ তথ্যের ভিত্তিতে পরিচালনা করা হচ্ছে বলে পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন৷ তাঁরা বলেন, তাঁদের কাছে যে গোয়েন্দা তথ্য এবং তালিকা আছে তার ভিত্তিতেই এই অভিযান চলছে৷ এই অভিযানে কোনোরকম নমনীয়তা দেখানো হবে না বলেই জানিয়েছে পুলিশ৷
ঢাকা মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার (মিডিয়া) মাসুদুর রহমান ডয়চে ভেলেতে জানান, ‘‘এই অভিযান প্রধানত দিনাজপুর, জয়পুরহাট, রংপুর, লালমনিরহাট, সিরাজগঞ্জ, সাতক্ষীরা পাবনা, চট্টগ্রামসহ জঙ্গি অধ্যুষিত এলাকায় শুরু হয়েছে৷''
অন্যদিকে মানবাধিকার কর্মী এবং বাংলাদেশ মানবাধিকার ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী অ্যাডভোকেট এলিনা খান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ক্রসফায়ারসহ জঙ্গি দমনে আরো যে পদ্ধতি গ্রহণ করছে, তা ফলপ্রসূ হবে বলে আমার মনে হয় না৷ এ কারণেই জঙ্গিরা একের পর এক হত্যাকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে৷ তারা ক্রসফায়ারে পড়লেও তাদের সন্ত্রাসী তৎপরতা কিন্তু বেড়েই চলেছে৷''
তাঁর কথায়, ‘‘এতে উগ্রবাদ আরো মাথাচাড়া দিতে পারে৷ এরচেয়ে সবাইকে নিয়ে গণতান্ত্রিক উপায়ে উদ্বুদ্ধকরণ কর্মসূচির মাধ্যমে জঙ্গিবিরোধী অভিযান চালাতে হবে৷ এছাড়া আটক, হত্যা এবং হামলার ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দায়ীদের চিহ্নিত করে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে৷ সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ বিচারই হলো আসল কথা৷''
প্রসঙ্গত, গত বছরের জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত সারা দেশে জঙ্গিদের পরিচিত স্টাইলে ৪৭টি হামলার ঘটনা ঘটেছে, যাতে নিহত হয়েছেন ৪৯ জন৷ এঁদের মধ্যে দু'জন পুলিশ সদস্য এবং পুলিশ কর্মকর্তার স্ত্রীও আছেন৷ গত আড়াই মাসে হত্যা করা হয়েছে ১৩ জনকে৷ এইসব হামলার অনেকগুলোরই দায় স্বীকার করেছে তথাকথিত ইসলামিক স্টেট বা আইএস এবং আল-কায়েদার ভারতীয় উপ-মহাদেশের কথিত বাংলাদেশ শাখা আনসার আল-ইসলাম৷