1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

দেশ জুড়ে শোকের মাতম

১৩ মার্চ ২০১৮

কাঠমান্ডুতে বিধ্বস্ত ইউএস-বাংলা উড়োজাহাজের নিহত ৫০ জনের মধ্যে ২৬ জন বাংলাদেশি নাগরিক৷ পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন৷ বাংলাদেশের ৩২ জন যাত্রীর মধ্যে ন'জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়৷

https://p.dw.com/p/2uDP6
Nepal Flugzeugabsturz in Kathmandu
ছবি: Getty Images/AFP/P. Mathema

ঢাকার শুক্রাবাদের বাসিন্দা রফিক জামান রিমু, তাঁর স্ত্রী সানজিদা হক বিপাশা, তাঁদের শিশু সন্তান অনিরুদ্ধ জামান সবাই ইউএস-বাংলা উড়োজাহাজের যাত্রী ছিলেন৷ উড়োজাহাজটি বিধ্বস্ত হওয়ায় তিনজনই নিহত হন৷ তাঁদের পরিবারে এখন শোকের মাতম৷ কথা বলতে গেলে কান্না ছাড়া আর কোনো কথাই বলতে পারেননি তাঁরা৷ রফিক জামানের বন্ধু সুমন জাহিদ ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘রিমু পরিবার নিয়ে অনেকদিন বাইরে যায়নি৷ অনেকটা জোর করেই রিক্রিয়েশনের জন্য নেপাল ট্রিপের ব্যবস্থা করে তাদের পরিবার৷ শুক্রবারেই তাদের ফিরে আসার কথা ছিল৷ রিমু প্রতিবন্ধীদের নিয়ে কাজ করতো৷ আর তার স্ত্রী বিপাশা কাজ করতো একটি এনজিওতে৷''

তিনি জানান, ‘‘দুপুরে কাঠমুন্ডুতে বিমানটি বিধ্বস্ত হওয়ার পর আমরা প্রথমে খবর পেয়েছিলাম যে রিমু বেঁচে আছে৷ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন৷ পরে নেপালে আমাদের নেপালী বন্ধুদের মাধ্যমে নিশ্চিত হই রিমু, তার স্ত্রী এবং ন'বছর বয়সের সন্তান সবাই নিহত হয়েছে৷ এরপর সোমবার রাতে আমরা অফিসিয়ালি তাদের মৃত্যুর খবর পাই৷''

সুমন জাহিদ জানান, ‘‘মানুষের বিপদে এগিয়ে যাওয়া, প্রতিবন্ধীদের জন্য কাজ করা রিমু-বিপাশা আর নেই – এটা আমাদের মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে৷ তার পরিবারের স্বজনরা বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন৷''

Sumon Zahid - MP3-Stereo

বাংলাদেশ থেকে মঙ্গলবার সকাল ৯টার দিকে ইউএস-বাংলার একটি ফ্লাইট আহত ও নিহতদের ৪৬ জন স্বজনকে নিয়ে নেপাল গেছে৷ তাদের সঙ্গে ইউএস বাংলার ছ'জন কর্মকর্তাও আছেন বলে জানিয়েছেন ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের জেনারেল ম্যানেজার কামরুল  ইসলাম৷ দুপুরে শোকার্ত স্বজনদের নিয়ে আরো একটি ফ্লাইট নেপাল গিয়েছে৷ বাংলাদেশের বিমানমন্ত্রী এ কে এম শাহজাহান কামাল সকাল সাড়ে ১১টার পর বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি বিমানে নেপাল গেছেন৷ এছাড়া সিঙ্গাপুর থেকে সফর সংক্ষিপ্ত করে বিকেলে দেশে ফিরছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷ তিনি দুর্ঘটনার পরই সিঙ্গাপুর থেকে ভিডিও কনফারেন্সে নেপালের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেন৷ বাংলাদেশ থেকে একটি মেডিক্যাল টিম নেপালে যাওয়ার কথা রয়েছে৷

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম তাঁর ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে যে তথ্য দিয়েছেন, তাতে বাংলাদেশের নিহত ও আহতদের তালিকা দেয়া হয়েছে৷ তাঁর দেয়া তালিকা অনুযায়ী নিহত যাত্রীরা হলেন – রকিবুল হাসান, ফারুক আহমেদ প্রিয়ক, তাঁর মেয়ে প্রিয়ন্ময়ী তামারা (শিশু), রফিক জামান রিমু, তাঁর স্ত্রী সানজিদা হক বিপাশা ও ছেলে অনিরুদ্ধ জামান (শিশু), নাজিয়া আফরিন চৌধুরী, বেগম উম্মে সালমা, ফয়সাল আহমেদ, ইয়াকুব আলী, আলিফুজ্জামান, বিলকিস আরা, নাহার বিলকিস বানু, আখতারা বেগম, হাসান ইমাম, মো. নজরুল ইসলাম, আঁখি মনি, মেহনাজ বিন নাসির, মতিউর রহমান, এস এম মাহমুদুর রহমান, তাহিরা তানভিন শশী রেজা, পিয়াস রায় এবং মো. নুরুজ্জামান৷

Lutfor Rahman - MP3-Stereo

এছাড়া ইউএস বাংলার পাইলট এবং ক্রুদের মধ্যে নিহতরা হলেন – পৃথুলা রশীদ ও খাজা হুসাইন৷ কে এইচ এম শাফেয়ী নামের ফ্লাইটের একজন ক্রু’র  সন্ধান এখনও পাওয়া যায়নি বলে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম সোমবার জানিয়েছিলেন৷ মঙ্গলবার সকালে ইউএস-বাংলা এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছে, ফ্লাইটের পাইলট আবিদ সুলতান মারা গেছেন৷

যাঁরা বেঁচে আছেন তাঁরা হলেন – ইমরানা কবির হাসি, সাঈদা কামরুন্নাহার স্বর্ণা, মেহেদী হাসান মাসুম, আলমুন নাহার অ্যানি, শাহরিন আহমেদ, মো. শাহীন বেপারি, কবির হোসেন, রিজওয়ানুল হক এবং শেখ রাশেদ রুবাইয়াত৷

Mamtaz Begam - MP3-Stereo

গাজীপুরের বাসিন্দা নিহত ফারুক আহমেদ প্রিয়ক, তাঁর মেয়ে প্রিয়ন্ময়ী তামারা (শিশু) নিহত হয়েছেন৷ ফারুকের স্ত্রী সাঈদা কামরুন্নাহার স্বর্ণা বেঁচে আছেন৷ একই পরিবারে সদস্য মেহেদী হাসান ও আলমুন নাহার অ্যানি বেঁচে আছেন৷ নিহত ফারুক এবং বেঁচে থাকা মেহেদি মামাত-ফুপাত ভাই৷ তাঁরা একই পরিবারের পাচঁজন নেপালে বেড়াতে যাচ্ছিলেন৷ ফারুকের চাচাত ভাই লুৎফর রহমান ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘ফারুক এমবিএ পাস এবং ব্যবসা করছিলেন৷ কিন্তু তিনি একজন ভালো ফটোগ্রাফারও৷ ফটোগ্রাফিতে বেশ কিছু পুরস্কারও পেয়েছেন৷ মাসুম ও অ্যানির বিয়ে হয়েছে এক বছর আগে৷ তাঁরা যান হানিমুনে আর ফারুকও স্ত্রী-সন্তান নিয়ে তাঁদের সঙ্গে যান৷ উদ্দেশ্য ছিল ভ্রমণের সঙ্গে ছবি তোলা৷ ফারুক আর আগেও ছবি তোলার জন্য ভারতে গিয়েছিল৷''

তিনি জানান, ‘‘আমরা ফারুক এবং তাঁর মেয়ের মৃত্যুর খবর পেয়েছি৷ ফারুকের স্ত্রী স্বর্ণা এবং মাসুম ও তাঁর স্ত্রী অ্যানি বেঁচে আছেন বলে নিশ্চিত হয়েছি৷ তাঁরা যে কান্নাকাটি করছেন, তা আমরা টেলিভিশনে দেখেছি৷ সকালে ইউএস-বাংলার ফ্লাইটে ফারুকের এক বন্ধু নেপাল গেছেন৷ দুপুরে আমাদের পরিবারের আরো দু'জন যাওয়ার কথা আছে৷''

Bahadur Bepari - MP3-Stereo

মেহেদী হাসান মাসুমের মা মমতাজ বেগম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমার ছেলে আমাকে ফোন করেছিল৷ কিন্তু আমি ধরতে পারিনি৷ পরে ফোনে মেসেজ দিয়েছে, আম্মা আমি ভালো আছি, বেঁচে আছি৷ এখন তাকে আল্লাহ ফিরিয়ে আনলেই হয়৷ আমার ছেলের বউও বেঁচে আছে৷ কিন্তু আমার ফারুক আর তার মেয়ে বেঁচে নাই৷ দুপুরে মাসুমের বাবা নেপাল যাবেন৷''

এদিকে বৈশাখী টেলিভিশনের সাংবাদিক ফয়সাল আহমেদও বেঁচে নাই বলে জানিয়েছেন তাঁর মামা বাহদুর বেপারী৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘আহতদের তালিকায় ফয়সালের নাম নাই৷ তাই সে আর বেঁচে নাই বলে আমরা ধরে নিচ্ছি৷ আমার চাচাত ভাই সকালে নেপাল গেছেন৷ আগামী কালের মধ্যে লাশ নিয়ে ফেরত আসার কথা৷''

এদিকে বিবাহবার্ষিকী পালনের উদ্দেশ্যে নেপালে যাচ্ছিলেন মানিকগঞ্জের চিকিৎসক রেজওয়ানুল হক শাওন ও তাহিরা তানভীন শশী দম্পতি৷ তাঁদের মধ্যে শশী  নিহত হয়েছেন বলে তাঁর মামা শহীদুল ইসলাম জানিয়েছেন৷ আর শাওন আহত অবস্থায় নেপালের ওম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন৷ মানিকগঞ্জ শহরের লঞ্চঘাট এলাকার অবসরপ্রাপ্ত ডা. রেজা হাসানের একমাত্র মেয়ে শশী৷ একই জেলার সাটুরিয়া উপজেলার গোপালপুর এলাকার মোজাম্মেল হকের ছেলে ডা. শাওনের সঙ্গে সাত বছর আগে বিয়ে হয় শশীর৷ ডা. শাওন রংপুর মেডিক্যাল কলেজে কর্মরত ছিলেন৷ শশী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সদ্য আইন বিভাগ থেকে পাস করেন৷

Kamrul Islam - MP3-Stereo

বিমনটিতে সিলেটের রাগিব-রাবেয়া মেডিক্যাল কলেজের ১৩ জন নেপালি শিক্ষার্থী ছিলেন৷ তাঁদের মধ্যে মাত্র দু'জন বেঁচে আছে বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের উপপরিচালক আরমান আহমেদ শিপলু৷ ১১ শিক্ষার্থীর মৃত্যুতে কলেজটি তিন দিনের শোক ঘোষণা করেছে৷

এই দুর্ঘটনা নিয়ে নেপাল এরইমধ্যে ছয় সদস্যের একটি তদন্ত কমিশন গঠন করা হয়েছে৷ বিমানটি দুর্ঘটনার আগে নিয়ন্ত্রণ কক্ষের সঙ্গে পাইলটের কথোপকথনের চার মিনিটের একটি অডিও প্রকাশ হয়েছে ইতিমধ্যেই৷ তা থেকে মনে হচ্ছে বিভ্রান্তির কারণেই দুর্ঘটনা ঘটেছে৷ ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের জেনারেল ম্যানেজার কামরুল ইসলাম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘নেপাল ছাড়াও বাংলাদেশ সিভিল এভিয়েশন এবং ইন্টারন্যাশনাল সিভিল এভিয়েশেনের পক্ষ থেকেও কমিটি হবে৷ ব্ল্যাক বক্স পাওয়া গেছে৷ ওখান থেকেই দুর্ঘটনার কারণ জানা যাবে৷ আরো তথ্য জানা যাবে কেবিনক্রুসহ জীবিত অন্যান্যদের জবানবন্দিতে৷''

চার মিনিটের ঐ অডিও সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘‘অডিওতে মনে হচ্ছে পাইলটকে বিভ্রান্তিকর তথ্য দেয়া হচ্ছিল৷ সেটা দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে৷ কিন্তু তদন্তের আগে নিশ্চিত কিছু বলা যাচ্ছে না৷ আমরা তদন্তের জন্যই অপেক্ষা করছি৷''

প্রতিবেদনটি নিয়ে কিছু বলার থাকলে লিখুন নীচের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান