বিনে পয়সায় কফি পান
১১ জানুয়ারি ২০১৪পাতলা কালো চুল আর রুগ্ন চেহারার জন নামের মানুষটি প্রতিদিন সন্ধ্যায় যায় দিজিয়ানা ইলিচের কফি শপে৷ সেখানে যাঁরা যান তাঁদের সবাইকেই তিনি খুব ভালোভাবে চেনেন৷ যেমন ‘গৃহহীনদের সংবাদপত্র' যে মহিলার হাতে থাকে, তিনি দু-তিনদিন পরপর আসেন৷ আর তাঁরা সবাই যে কফি পান করেন সেটাও নয়৷ যেমন জন পছন্দ করে গরম চকলেট আর মহিলাটি ভালোবাসেন ফলের নির্যাস দেয়া চায়ের সাথে খানিকটা মধু৷
এই দোকানগুলোতে যিনি কফির অর্ডার দেন, তাঁকে এককাপ কফি আর একটি রসিদ দেওয়া হয়৷ যাঁর কফি কেনার সামর্থ্য নেই তাঁর জন্য রসিদটি দোকানেই রেখে যান ঐ ক্রেতা৷
‘‘শীত যত বেশি হয় মানুষের আনাগোনা ততটাই বাড়ে এবং তাঁরা গরম পানীয় পান করেন৷ শীতকালে প্রায় প্রতিদিনই গড়ে অন্তত তিনজন করে মানুষ এমন কফি খেতে আসেন,'' বলেন ইলিচ৷
হামবুর্গ শহরের ‘লোহাসকফি' নামের এই কফির দোকানটির ভেতরে কমলা রং-এর আলো, বেশ খোলামেলা আর দোকানটা সাজানো হয়েছে সুন্দর বেতের চেয়ার দিয়ে৷ ইলিচ এই কফি শপেরই পরিচালিকা৷ তিনি বলেন, ‘‘এখানে এক কাপ কফির দাম ৩.৬০ ইউরো৷ তবে তা জনের মতো গৃহহীন মানুষদের জন্য নয়, জনের জন্য কফি ‘ফ্রি'৷'' এই কফিকে নাম দেওয়া হয়েছে ‘সাসপেন্ড কফি' বা বলা যেতে পারে অন্যদের জন্য আলাদা করে তুলে রাখা কফি৷ বলা বাহুল্য, এই ধরণের কফি শপগুলো জার্মানিতে দিনদিন জনপ্রিয় হচ্ছে৷
ইলিচ ইন্টারনেটেই প্রথম এই ধরণের কফি শপের কথা পড়েছিলেন৷ সেখান থেকেই তাঁর এই ভাবনা এসেছে৷ ইন্টারনেটে অনেককিছুই লেখা থাকে, অনেক আইডিয়াই থাকে৷ কিন্তু কোন আইডিয়া আসলে কার, তার আসল মালিককে পাওয়া খুব সহজ নয়৷ তবে কফি কেনার মধ্য দিয়ে সাহায্য করার ব্যাপারটি অভিনব৷
ইলিচ খানিকটা স্মৃতিচারণ করে বলেন স্যাকসনি রাজ্যের ১৭ বছর বয়সি সাসকিয়া ব়্যুডিগারের কথা, যিনি নিজে কফি খায় না৷ তবে সাসকিয়ার ভাষায়, ‘‘আমি ফেসবুক মারফত জেনেছি যে এ ধরণের একটি আন্তর্জাতিক ক্যাম্পেন এ মুহূর্তে চলছে, যা এরই মধ্যে অনেক দেশেই জনপ্রিয় হয়েছে, শুধু জার্মানি ছাড়া৷''
তারপরই সাসকিয়া গত বছরের ৮ এপ্রিল সরাসরি ইন্টারনেটে দেওয়া ফোন নম্বরে ফোন করেন এবং ফেসবুকে এ সম্পর্কে জানান৷ তার পরের দিন থেকেই সবকিছু পাল্টে যেতে শুরু করে৷ সাসকিয়া বলেন, ‘‘এরপর থেকে অনেকেই ফেসবুকে আমার লেখায় লাইক করতে শুরু করে৷ পরে মারবুর্গ এবং বিলেফেল্ড শহর থেকে কেউ কেউ যোগাযোগও করেন৷ শুধু তাই নয়, বিলেফেল্ডের একটি পত্রিকায় এ সম্পর্কে একটি রিপোর্টও বের হয়৷ তারপর একজন ভদ্রলোক যাঁর টেকনিক্যাল বিষয়ে জ্ঞান আছে, তিনি এগিয়ে আসেন এবং সাহায্য করেন আমাকে৷''
এভাবেই ঐ কফি দোকানের শুরু৷ সাসকিয়া আরো বলেন, এখানে শুধু কফি খাওয়া বা খাওয়ানো নয়, এটা একটা মহৎ উদ্যোগ৷ আসলে এর মধ্য দিয়ে এটা বলার চেষ্টা করা হচ্ছে যে, ‘‘যাঁদের সাহায্য প্রয়োজন তাঁদের পাশে আমরা আছি৷''
ইলিচ মনে করেন, এই উদ্যোগটি সফল হবার কারণ সাহায্যকারীরা পর্দার আড়ালে থাকেন বলে৷ সরাসরি কাউকে সাহায্য দেয়া বা কারো পক্ষে সাহায্য নেয়া সেভাবে সব সময় সম্ভব হয় না৷
তবে এই ‘আইডিয়া' সম্পর্কে সমালোচকরা ভিন্নমত পোষণ করেন৷ তাঁদের মতে, এ ধারণাটি একেবারে নতুন নয়৷ বহু বছর আগে নাকি ইটালির নেপলস শহরে এই একই ধরণের কফি শপের প্রচলন ছিল৷
এনএস/ডিজি (ইপিডি)