চিনিতে সুখ সংসারে!
১৯ এপ্রিল ২০১৪১০৭ জোড়া বিবাহিত দম্পতির ওপর গবেষণা চালিয়ে ওহাইও স্টেট ইউনিভার্সিটির একদল বিজ্ঞানী দেখতে পেয়েছেন, রক্তে শর্করার পরিমাণ যখন কমে যায়, সঙ্গী বা সঙ্গীনীর প্রতি রাগ, ক্ষোভ ও আক্রমণাত্মক মনোভাব ততো বেশি মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে৷
এ গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের টানা ২১ দিন প্রাতরাশ ও রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে রক্তে শর্করার পরিমাণ মেপে দেখতে বলা হয়৷ আর প্রত্যেককে দেয়া হয় একটি করে ভুডু পুতুল, সঙ্গে ৫১টি কাঁটা৷ এই ভুডু পুতুল আসলে সঙ্গী বা সঙ্গীনীর প্রতীক৷ অংশগ্রহণকারীদের বলা হয়, প্রতিদিন তাঁরা স্বামী বা স্ত্রীর প্রতি যতটা রাগ বা ক্রোধ অনুভব করেছেন, সে অনুযায়ী অতি গোপনে কাঁটা বিঁধিয়ে দিতে হবে ওই পুতুলের গায়ে৷
২১ সপ্তাহ পর প্রত্যেকের রক্তে চিনির পরিমাণ এবং ভুডু পুতুলে কাঁটার সংখ্যা বিশ্লেষণ করে দেখা যায় যে, যেদিন শর্করার পরিমাণ যত কম, পুতুলে কাঁটার সংখ্যা তত বেশি৷ এই গবেষণা প্রতিবেদনের অন্যতম লেখক ব্র্যাড বুশম্যান বলেন, ‘‘এমনকি যাঁরা সুখি দাম্পত্য জীবনের কথা বলেছেন, রক্তে চিনি কম থাকলে তাঁরাও রাগ দেখিয়েছেন পুতুলের ওপর৷''
এখানেই শেষ নয়৷ ভুডু পুতুলের পরীক্ষার পর এই অংশগ্রহণকারীদের একটি গবেষণাগারে নিয়ে চালানো হয় আরেকটি পরীক্ষা৷ দু'জনকে পাশাপাশি দুটি আলাদা ঘরে রেখে সঙ্গী ও সঙ্গীনীর বিপক্ষে একটি কম্পিউটার গেম খেলতে বলা হয়৷ একজন জিতে গেলে তার পরাজিত সঙ্গী বা সঙ্গীনী কতটা চিৎকার করে ক্ষোভ প্রকাশ করেন, হেডফোনে তাও খেয়াল রাখতে বলা হয়৷
অবশ্য গবেষকরা যে ব্যবস্থা করে রেখেছিলেন, তাতে প্রত্যেক অংশগ্রহণকারী আসলে খেলেছেন কম্পিউটারের বিরুদ্ধে৷ এমনভাবে এই প্রোগাম তৈরি করা হয়েছিল, যাতে প্রত্যেকেই সমান সংখ্যক বার জয়ী হতে পারেন৷
বিনাচিনির রাগতত্ত্ব মিলে গেছে এখানেও৷ গবেষকরা দেখতে পেয়েছেন, যাঁদের রক্তে শর্করা কম, হেরে গিয়ে তাঁরাই সবচেয়ে বেশি রাগ ঝেরেছেন৷ আর আগের গবেষণায় যাঁরা ভুডু পুতুলে বেশি কাঁটা বিঁধিয়েছেন, তাঁদের মধ্যেই হেরে গিয়ে ক্ষেপে যাওয়ার প্রবণতা বেশি৷ বুশম্যান বলেন, ‘‘রক্তে শর্করা কম থাকলে আক্রমণাত্মক মনোভাবও যে বেড়ে যায় – এটা তারই নির্দেশক৷''
তিনি বলেন, গ্লুকোজ বা শর্করা মস্তিষ্কে জ্বালানির মতো কাজ করে৷ মস্তিষ্কের ওজন মানবদেহের মোট ওজনের মাত্র ২ শতাংশ হলেও প্রতিদিন খাবারের সঙ্গে শরীরে যাওয়া শর্করার ২০ শতাংশ ওই মস্তিষ্কই খরচ করে৷ রাগ বা ক্রোধ সামলাতে তাৎক্ষণিকভাবে নিজের ওপর যে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে হয়, তাতে মস্তিষ্কের বাড়তি শক্তি প্রয়োজন হয়৷ এই সময়টায় চিনিতে টান পড়লেই বাঁধে গোল৷
বুশম্যান বলেন, ‘‘আমাদের পরামর্শ খুব সাধারণ, তবে কাজের৷ পেটে ক্ষুধা নিয়ে স্বামী বা স্ত্রীর সঙ্গে কোনো গুরুতর বিষয়ে আলোচনায় না যাওয়াই ভালো৷''
জেকে/ডিজি (এএফপি, এপি)