বিদ্যুৎ ও জীবন
১৩ মে ২০১২আপনার বাড়িতে ঘরে ঘরে বাতি জ্বলছে৷ চলছে ফ্যান, ফ্রিজ, টিভি, কম্পিউটার, আরো কত কি! চার্জ হচ্ছে মোবাইল, ল্যাপটপও৷ আর ঘরের কথা বাদ দিয়ে যদি অফিস বা কল-কারখানার কথা ধরা হয়, তাহলে কি বিদ্যুৎ ছাড়া চলবে? না, চলবে না৷
প্রতিদিন কী পরিমাণ লোডশেডিং হয় বাংলাদেশে? রোজ কত ঘণ্টা আপনি থাকেন অন্ধকারে, গরমে? কারখানায় কত ঘণ্টা উৎপাদন বন্ধ থাকে রোজ? তো, লোডশেডিং এর এই যন্ত্রনা থেকে বাঁচতে, আপনি নিজেই যদি উৎপাদন করতে পারেন নিজের সংসারের প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ - তাহলে কেমন হয়!
যদিও জার্মানিতে লোডশেডিং নেই৷ তবুও তাই করেছেন, জার্মানির বার্লিন শহরের ইয়র্গ ভেলকে৷ নিজের বাড়ির বিদ্যুৎ নিজে উৎপাদন করার এক প্রকল্প হাতে নিয়েছেন ভেলকে এবং তাঁর স্ত্রী সিমোনা ভিচার্স৷
একটুকরো সবুজ চত্বরের মাঝে দু'তলা একটি বাড়ি বানিয়েছেন তাঁরা৷ বাড়ির সামনের দিকটা কাঁচ দিয়ে ঘেরা৷ ফলে পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রাকৃতিক আলো আসে ঘরের ভেতর৷ ভেলে, ভিচার্স আর তাঁদের দুই সন্তান - এই চারজনের সংসারে যত বিদ্যুৎ প্রয়োজন হয়, তার সবই বাড়িতে উৎপাদন হয়৷ বাড়িতে লাগানো হয়েছে অটোমেটিক ভেন্টিলেশান পদ্ধতি৷ ফলে ঘরের তাপমাত্রা কখন কত হবে সেটি যন্ত্র নিজেই ঠিক করে নেয়৷
ভেলে'র বাড়িতে উৎপন্ন সৌর বিদ্যুৎ দিয়েই চার্জ করা হয় দু'টো বৈদ্যুতিক গাড়ি ও বাইসাইকেল৷ শুধু তাই নয়, যখন সূর্য উঠবে না তখন কাজ চালানোর জন্য অগ্রিম চার্জ করে রাখা হয় ব্যাটারি৷ ফলে সঞ্চিত বিদ্যুতও থাকে ঘরে৷
এখানেই শেষ নয়৷ ভেলে জানিয়েছেন, তাঁর বাড়িতে বছরে প্রায় সাড়ে ১৬ হাজার কিলোওয়াট ঘণ্টা বিদ্যুৎ উৎপন্ন করা সম্ভব৷ অথচ ভেলের নিজের সংসারের জন্য খরচ হয় মাত্র দুই হাজার কিলোওয়াট ঘণ্টা৷ তিনি বলছেন, বাড়তি বিদ্যুৎ প্রয়োজনে বিক্রি করে দেয়া যাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন গ্রিড'এর কাছে৷
ভেলে যে প্রকল্পে কাজ করছেন তার মূল উদ্যোক্তা জার্মানির পরিবহন, নির্মাণ ও নগরায়ন মন্ত্রণালয়৷ গত বছর সেপ্টেম্বরে প্রকল্পটি শুরু হয়েছে৷ এটি চলবে আরো দু'বছর৷ তারপর ভেলে পরিবার আবারো ফিরে যাবে তাদের পুরনো সেই নিজের বাড়িতে৷
ফসিল থেকে উৎপন্ন বিদ্যুতের প্রতি নির্ভরশীলতা নেই৷ বাড়িগুলো স্বয়ংসম্পূর্ণ৷ আহা, এমন যদি হয় বাংলাদেশের বাড়িগুলো - তবে নিশ্চয়ই একদিন লোডশেডিং মুক্ত হবে আমাদের ঘরগুলো!
প্রতিবদেন: রিচার্ড এ ফুক্স/ আফরোজা সোমা
সম্পাদনা: দেরারতি গুহ