বিদ্যুতের দাম বাড়ছে না
১৩ অক্টোবর ২০২২কমিশনের চেয়ারম্যান মো. আবদুল জলিল বৃহস্পতিবার এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এ সিদ্ধান্ত জানিয়ে বলেন, বিদুতের বাল্ক মূল্য হার পুনঃনির্ধারণ করা হচ্ছে না৷ এক্ষেত্রে আগের মূল্যহার অপরিবর্তিত থাকবে৷
সর্বশেষ ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বিদ্যুতের পাইকারি দর ইউনিট প্রতি ৫ টাকা ১৭ পয়সা নির্ধারণ করে দিয়েছিল বিইআরসি৷
চলতি বছরের ১২ জানুয়ারি নিজেদের ৩০ হাজার কোটি টাকার বিশাল ঘাটতির তথ্য তুলে ধরে বিদ্যুতের পাইকারি দাম ৬৬ শতাংশ বাড়িয়ে ৮ টাকা ৫৮ পয়সা করার প্রস্তাব নিয়ে আসে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড-পিডিবি৷ তবে সেই আবেদনে বেশ কিছু অসঙ্গতি ও তথ্যের ঘাটতি তুলে ধরে তা ফেরত পাঠায় নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিইআরসি৷
দ্বিতীয় দফায় আবারও আবেদন করে পিডিবি৷ সেই আবেদনের ওপর গত ১৮ মে গণশুনানি হয়৷ বিইআরসি গঠিত কারিগরি কমিটি সেখানে ৫৮ শতাংশ দাম বাড়ানোর পরামর্শ দেয়৷ কিন্তু আরও কিছু তথ্য ও লিখিত মতামতের জন্য ৩১ মে পর্যন্ত পিডিবিকে সময় দেয় বিইআরসি৷
সেই শুনানির ৯০ দিনের মাথায় বৃহস্পতিবারের সংবাদ সম্মেলনে কমিশনের চেয়ারম্যান আব্দুল জলিল জানালেন, ‘তথ্যের অস্পষ্টতাজনিত কারণেই’ দাম না বাড়ানোর সিদ্ধান্ত তারা নিয়েছেন৷ “শুনানির পর ৯০ দিনের মধ্যে আদেশ দেওয়ার বাধ্যবাধকতা ছিল৷ সেই হিসাবে আজ ৯০ দিনের শেষ কর্মদিবস৷ আমরা পাইকারি বিদ্যুতের মূল্যহার অপরিবর্তিত থাকবে বলে আদেশ দিয়েছি৷ এই ক্ষেত্রে পিডিবির ডেটা এম্বিগুইটি হচ্ছে সবচেয়ে বড় কারণ৷ বিদ্যুতের দাম বাড়ালে এর কী প্রভাব পড়বে তার একটা বিশ্লেষণ থাকা প্রয়োজন কিন্তু সেটাও ঠিকভাবে দেওয়া হয়নি৷’’ চেয়ারম্যান বলেন, বিইআরসির কোনো সিদ্ধান্ত নিতে হলে ‘ডেটা, অ্যানালাইসিস ও ডিসিশন’- এই তিন ধাপে এগোতে হয়৷
“ডেটা থেকে অ্যানালাইসিস করে থাকি৷ আমরা বলেছি ডেটা এম্বিগুইটিস৷ কত ধরনের এম্বিগুইটিস সেটা বলিনি৷ সব মিলিয়ে আমাদের সিদ্ধান্তটা গ্রহণ করতে গিয়ে যথাযথ বিশ্লেষণ করা যায়নি৷ অস্পষ্টতা রেখে কোনো সিদ্ধান্ত নিলে সেটার পরিণতি ভয়াবহ হবে৷ আমরা প্যারালাইসিস অব অ্যানালাইসিস ট্রমায় ভুগছি৷”
গ্যাস ও জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় এমনিতেই সঙ্কটে আছে সাধারণ মানুষ৷ আন্তর্জাতিক বাজারে সঙ্কটের কারণে সরকার বিদ্যুৎ উৎপাদন কমিয়ে দেওয়ায় লোডশেডিংয়ে ভুগতে হচ্ছে সাধারণ মানুষ এবং উদ্যোক্তাদের৷
এর মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান মঙ্গলবার এক সভায় বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর ইঙ্গিত দেন৷
পরে বিইআরসি এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, বিদ্যুতের পাইকারি মূল্য পুনর্নির্ধারণের সিদ্ধান্ত বৃহস্পতিবার জানাবে কমিশন৷ এ দফা দাম কতটা বাড়তে পারে, সেই ইংগিত দিয়ে খবরও প্রকাশ করে কোনে কোনো সংবাদমাধ্যম৷
ফলে কমিশনের সংবাদ সম্মেলনে দাম বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত আসছে বলেই সবাই ধরে নিয়েছিলেন৷ কিন্তু বিইআরসি আগের দাম বহাল রাখার সিদ্ধান্ত দেওয়ায় সংবাদ সম্মেলনে স্বস্তির কথা বলেন সাংবাদিকরাও৷
এ সিদ্ধান্তের ব্যাখ্যায় বিইআরসির সদস্য (বিদ্যুৎ) মোহাম্মদ বজলুর রহমান বলেন, পিডিবি যে ৩০ হাজার কোটি টাকা ঘাটতি কথা বলেছে, তার মধ্যে ১৭ হাজার কোটি টাকা সরকার ভর্তুকি দিয়েছে৷
“বাকি ১৩ হাজার কোটি টাকার ক্ষেত্রেও আগের চেয়ে কিছুটা সাশ্রয় হয়েছে কিন্তু সেসবের সর্বশেষ ও সঠিক তথ্য আমাদের জানতে হবে৷”
কমিশনের আরেক সদস্য মকবুল-ই-ইলাহী চৌধুরী বলেন, “আপনি যদি আমার কাছে কিছু চান, তাহলে যুক্তিটা তুলে ধরতে হবে৷ তথ্য উপাত্ত দিতে হবে৷ এবারের প্রস্তাবটা সঙ্গত ছিল না তথ্য পর্যাপ্ত ছিল না৷ তথ্যের জন্য একাধিকবার তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেও আমরা পাইনি৷ যার কারণে এই পরিস্থিতি৷”
এনএস/কেএম (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)