1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বিদেশে ক্ষমা, দেশে কোয়ারান্টিন থেকেই কারাগারে

সমীর কুমার দে ঢাকা
৬ জুলাই ২০২০

মধ্যপ্রাচ্য থেকে বিভিন্ন অপরাধের অভিযোগ থেকে ক্ষমা পেয়ে দেশে ফিরেছেন ২১৯ বাংলাদেশি৷ কিন্তু কোয়ারান্টিনে থাকা অবস্থায় ‘‘দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করার জন্য শলা-পরামর্শ’’ করার অভিযোগে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে৷

https://p.dw.com/p/3erRe
ফাইল ফটোছবি: bdnews24.com

কোয়ারেন্টিন সেন্টারে তারা কী ষড়যন্ত্র করেছেন? করে থাকলে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার না দেখিয়ে কেন তাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট আইনে মামলা করা হলো না? এমন প্রশ্নের উত্তরে ঢাকা মেট্টোপলিটন পুলিশের উত্তরা বিভাগের উপ-কমিশনার নাবিদ কামাল শৈবাল ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘তারা যে অপরাধ করেছেন সেটা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে৷ তদন্ত শেষ হলেই সুনির্দিষ্ট আইনে মামলা হবে৷ পাশাপাশি তারা যে দেশ থেকে এসেছেন সেখানেও কী অপরাধ করেছেন তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে৷ এখনো পুরো বিষয়টি তদন্তাধীন বলে ৫৪ ধারায় তাদের গ্রেফতার দেখানো হয়েছে৷’’ 

‘কেউ নিরাপরাধ প্রমাণিত হলে ছাড়া পাবেন’

কুয়েত, কাতার ও বাহরাইন থেকে ২১৯ জন বাংলাদেশিকে দেশে ফেরত পাঠানো হয়৷ ওই দেশগুলোতে এই বাংলাদেশি নাগরিকরা বিভিন্ন অপরাধে সাজা ভোগ করেছেন৷ কোভিড পরিস্থিতিতে তাদের সাজা মওকুফ করে দেশে পাঠিয়ে দেয় ওই দেশগুলোর সরকার৷ দেশে ফেরার পর সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে পরিচালিত তুরাগের কোয়ারেন্টিন সেন্টারেই ছিলেন মধ্যপ্রাচ্য ফেরত এই ২১৯ জন বাংলাদেশি নাগরিক৷

ওসব দেশে করা অপরাধের বিচার এখানে করা সম্ভব কিনা জানতে চাইলে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘তারা ওই দেশে ছোট বা বড় অপরাধও করে থাকেন, সেক্ষেত্রে যদি বহির্সমাপনের মাধ্যমে নিয়ে আসা হয় তাহলে রাষ্ট্র ওই দেশে সংগঠিত অপরাধের জন্য তাদের বিচার করতে পারে৷ নতুবা তারা যদি এমনি চলে আসে বা তাদের সাজা মওকুফ করে ফেরত পাঠানো হয় তাহলে বুঝতে হবে আমাদের বিচার করার কোনো অভিপ্রায় ছিল না৷ এক্ষেত্রে তাদের ওই দেশে অপরাধের জন্য বিচার করাটা আন্তর্জাতিক আইনের চোখে খুব ভালো দেখায় না৷ আন্তর্জাতিক আইনে এমন কোনো উদাহরণও নেই৷ এক্ষেত্রে একটি রাষ্ট্র তার নাগরিকদের উপর শক্তি প্রয়োগের ব্যাপারে যে উদ্যত হয়েছে সেটা কোনো ভালো চিন্তা না৷’’ 

২১৯ জন প্রবাসীর বিরুদ্ধে অভিযোগের তদন্ত করছেন তুরাগ থানার পরিদর্শক শফিউল্লাহ৷ তিনি আদালতে উপস্থাপিত আবেদনে উল্লেখ করেন, ‘‘বিদেশ ফেরত ২১৯ জন বাংলাদেশি কুয়েত, কাতার ও বাহরাইনে বিভিন্ন অপকর্মে লিপ্ত থাকায় সেদেশের সরকার তাদের বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেয়৷ এদের মধ্যে কাতার থেকে ১৪১ জন এবং কুয়েত ও বাহরাইন থেকে ৩৯ জন করে এসেছেন৷ করোনা ভাইরাসের কারণে তাদের সাজা মওকুফ করে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়৷’’ তিনি আরো উল্লেখ করেন, দেশে আসার পর সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে তাদের তুরাগ এলাকায় কোয়ারান্টিনে রাখা হয়৷ তারা সেখানে থাকা অবস্থায় বিভিন্ন গ্রুপে বিভক্ত হয়ে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করার জন্য শলা-পরামর্শ করছিলেন৷ তারা সরকারকে ‘ধ্বংস' করার জন্য পরামর্শও করছিলেন৷ তাদের এ বিষয়গুলো পুলিশের নজরে আসে৷ তাই তাদের ৫৪ ধারায় আটক রাখার আবেদন করা হয়৷ গত শনিবার আদালত তাদের কারাগারে পাঠিয়ে দেয়৷

অধ্যাপক মিজানুর রহমান বলেন, ‘‘২১৯ জন একটা বিরাট জনগোষ্ঠী৷ বিভিন্ন দেশ থেকে তাদের আনা হয়েছে৷ তারা যদি কোনো ষড়যন্ত্র এখানে করে থাকে, তাহলে সুনির্দিষ্ট মামলা করে তাদের বিচারে সোপর্দ করা উচিৎ ছিল৷ এত বিরাট জনগোষ্ঠীকে শুধুমাত্র সন্দেহের বশবর্তী হয়ে কারাগারে আটকে রাখা একটি রাষ্ট্রের আগ্রাসী ভূমিকা এবং মানবাধিকার লংঘন ও অশুভ উদ্যোগের বর্হিপ্রকাশ ছাড়া অন্য কোনোভাবে এটাকে ব্যাখ্যা করার উপায় নেই৷ এটা খুবই দুঃখজনক৷ আমাদের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী এবং এই বাহিনী যাদের নির্দেশে কাজ করছে যে নির্বাহী বিভাগের এমন কাজের ফলে রাষ্ট্রের চরিত্র পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে৷ আমাদের রাষ্ট্র শুধুমাত্র নির্বাহী বিভাগের দ্বারা পরিচালিত হয়ে জনগনের অধিকার রক্ষার যে নূন্যতম জায়গাগুলো ছিল সেগুলোও নষ্ট করে ফেলা হচ্ছে৷ এটা কিন্তু অশনিসংকেত হিসেবে আমাদের সামনে দেখা দিচ্ছে৷ এটা রাষ্ট্রের জন্য, মানবাধিকারের জন্য এবং সাধারণ নাগরিকদের জন্য হুমকিস্বরূপ বলেই আমার মনে হয়৷’’

‘আন্তর্জাতিক আইনে এমন কোনো উদাহরণও নেই’

তুরাগ থানার অফিসার ইনচার্জ নুরুল মোত্তাকিন ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘তাদের অপরাধগুলোর তদন্ত হচ্ছে৷ তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত কে অপরাধী আর কে অপরাধী নয় সেটা বলা যাবে না৷ তদন্ত শেষ হলেই আমরা এটা বলবো৷''

রাষ্ট্রপক্ষের কৌশুলী অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটার আনোয়ারুল কবীর বাবুল ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘তুরাগ থানার পরিদর্শক শফিউল্লাহ আদালতে যে প্রতিবেদন দাখিল করেছেন, সেখানে তাদের বিরুদ্ধে কয়েকটি গ্রুপে ভাগ হয়ে সরকারকে ‘ধ্বংস’ করার চেষ্টার অভিযোগ আনা হয়েছে৷ এখন তাদের এই অভিযোগের তদন্ত হবে৷ কেউ নিরাপরাধ প্রমানিত হলে ছাড়া পাবেন৷’’ সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকার পরও কেন ৫৪ ধারায় গ্রেফতার দেখাতে হলো? এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘বিষয়টি যেহেতু তদন্তাধীন, তাই ৫৪ ধারায় গ্রেফতার দেখিয়ে তাদের কারাগারে আটকে রাখতে বলা হয়েছে৷’’