বিদেশি দূতদের আলোচিত কথা, কাজ
সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতদের মন্তব্য ও কর্মকাণ্ড আলোচনার জন্ম দিয়েছে৷ বিশেষ করে গত নির্বাচন নিয়ে জাপানি রাষ্ট্রদূতের করা মন্তব্য বেশ আলোচিত হয়েছে৷
‘রাতেই পুলিশ ব্যালট বাক্স ভর্তি করেছিল বলে শুনেছি’
১৪ নভেম্বর ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে জাপানের রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি বলেন, ‘‘গত (জাতীয় সংসদ) নির্বাচনে আগের রাতেই পুলিশ ব্যালট বাক্স ভর্তি করেছিল বলে আমি শুনেছি৷ অন্য কোনো দেশে এমন দৃষ্টান্ত নেই৷ আমি আশা করব, এবার তেমন সুযোগ থাকবে না বা এমন ঘটনা ঘটবে না৷’’
‘অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন স্থিতিশীলতার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ’
১৩ অক্টোবর জার্মান রাষ্ট্রদূত আখিম ট্র্যোস্টার বলেন, ‘‘গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মানে হচ্ছে নিয়মিতভাবে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের আয়োজন৷ এ ধরনের নির্বাচন দেশের স্থিতিশীলতার জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ৷ আমরা বিশ্বাস করি, ভোটারদের ভোট দেওয়ার এবং সরকার গঠনে ভূমিকা রাখার অধিকার রয়েছে৷ তাই সমালোচিত হলেও বন্ধু হিসেবে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের বিষয়ে তিনি কথা বলে যাবেন বলে উল্লেখ করেন৷’’
পুলিশ-বিএনপি সংঘর্ষের খবরে উদ্বিগ্ন মার্কিন রাষ্ট্রদূত
৭ ডিসেম্বর ঢাকায় পুলিশের সঙ্গে বিএনপির সংঘর্ষের পরদিন এক ফেসবুক পোস্টে মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস বলেন, ‘‘রাজনৈতিক সহিংসতা ও ভয়-ভীতি দেখানোর খবরে আমরা উদ্বিগ্ন৷ আইনের শাসনের প্রতি শ্রদ্ধা এবং সহিংসতা, হয়রানি ও ভয়-ভীতি দেখানো থেকে বিরত থাকার জন্য আমরা সবার প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি৷’’ এর আগে ৩১ মে তিনি বলেছিলেন, বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দেখতে চায় যুক্তরাষ্ট্র৷
গুম হওয়া ব্যক্তির বাসায় মার্কিন রাষ্ট্রদূত
মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস ১৪ ডিসেম্বর নিখোঁজ বিএনপির নেতা সাজেদুল ইসলামের বাসায় যান৷ সাজেদুলের বোন গুম হওয়া ব্যক্তিদের স্বজনদের সংগঠন ‘মায়ের ডাক’-এর সমন্বয়ক৷ এ সময় ‘মায়ের কান্না’ নামে আরেক সংগঠনের লোকজন রাষ্ট্রদূতকে ঘিরে ধরার চেষ্টা করেন৷ ওই ঘটনায় নিরাপত্তার উদ্বেগ জানাতে হাস পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেনের কাছে যান৷ পরদিন এ নিয়ে উদ্বেগ জানাতে ওয়াশিংটনে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতকেও তলব করা হয়েছিল৷
‘বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য যুক্তরাষ্ট্র কাজ করছে’
যুক্তরাষ্ট্রের মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক উপসহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী আফরিন আখতার ৬ নভেম্বর ঢাকায় বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ঢাকা মিশন এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা ইউএসএইডের বাংলাদেশ কার্যালয় আসন্ন নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে বাংলাদেশের নাগরিক সমাজের সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করে যাচ্ছে৷
বিরোধী দলের সভা-সমাবেশে কড়াকড়ির ঘটনায় উদ্বিগ্ন যুক্তরাষ্ট্র
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র নেড প্রাইস ৬ ডিসেম্বর ওয়াশিংটনে এক ব্রিফিংয়ে বলেন, বাংলাদেশে বিরোধী দলের শান্তিপূর্ণ সভা-সমাবেশের ওপর কড়াকড়ি আরোপের ঘটনা নিয়ে তার দেশ উদ্বিগ্ন৷ তিনি বলেন, ‘‘কোনো রাজনৈতিক দল কিংবা প্রার্থীকে হুমকি, উসকানি অথবা এক দল আরেক দল বা প্রার্থীর ওপর যাতে সহিংসতা ঘটাতে না পারে, বিষয়টি নিশ্চিত করতে আমরা সরকারের প্রতি আহ্বান জানাই৷’’
নির্বাচন নিয়েও কথা বলেন নেড প্রাইস
একই ব্রিফিংয়ে বাংলাদেশে নিরপেক্ষ নির্বাচন নিয়েও কথা বলেন মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র৷ তিনি বলেন, ‘‘অর্থপূর্ণ নির্বাচন আয়োজন করতে হলে সহিংসতা, হয়রানি ও নির্ভয়ে ভোটারদের সঙ্গে প্রার্থীদের জনসংযোগ করার সুযোগ করে দিতে হবে৷’’
অঙ্গীকারের কথা মনে করিয়ে দেন জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী
১০ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে ৭ ডিসেম্বর বিকেলে এক বিবৃতিতে ঢাকায় নিযুক্ত জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী গোয়েন লুইস জাতিসংঘের সদস্যরাষ্ট্র হিসেবে মতপ্রকাশ, গণমাধ্যম ও শান্তিপূর্ণ সমাবেশের স্বাধীনতাসহ মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণাপত্রে অঙ্গীকারের কথা বাংলাদেশকে স্মরণ করিয়ে দেন৷ ঢাকায় বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনার এক ঘণ্টা পর ঐ বিবৃতি দেন গোয়েন লুইস৷
ইইউ ও ১৪ দেশের বিবৃতি
ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ১৪টি দেশের মিশন ৬ ডিসেম্বর বলেছে, ‘‘আমরা বাংলাদেশের বন্ধু ও অংশীদার হিসেবে মানবাধিকারের সার্বজনীন ঘোষণার চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে অবাধ, সুষ্ঠু, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন প্রক্রিয়ার গুরুত্ব পুনর্ব্যক্ত করছি৷’’ মিশনগুলো হলো যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইইউ, ডেনমার্ক, ফ্রান্স, জার্মানি, ইটালি, নেদারল্যান্ডস, নরওয়ে, স্পেন, সুইডেন, সুইজারল্যান্ড, জাপান, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়া৷
বাংলাদেশ প্রসঙ্গে রাশিয়া-যুক্তরাষ্ট্রের পালটাপালটি বিবৃতি
২০ ডিসেম্বর ঢাকার রুশ দূতাবাস বিবৃতিতে বলে, গণতন্ত্র সুরক্ষা বা অন্য অজুহাতে বাংলাদেশসহ তৃতীয় কোনো দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করার বিষয়ে রাশিয়া বদ্ধপরিকর৷ ইউক্রেনের ক্ষেত্রে রাশিয়া এই নীতি প্রয়োগ করেছে কিনা, পরদিন সেই প্রশ্ন তোলে মার্কিন দূতাবাস৷ একদিন পর রুশ দূতাবাস টুইটারে একটি ব্যঙ্গচিত্র প্রকাশ করে৷ ইউক্রেন যুদ্ধ ঘিরে যুক্তরাষ্ট্র যে পশ্চিমা বলয়ের নেতৃত্বে রয়েছে, তা তুলে ধরা হয় এতে৷
‘বহুপক্ষীয় ও স্বচ্ছ গণতন্ত্র দেখতে চায় যুক্তরাজ্য’
১৩ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার রবার্ট ডিকসন বলেছেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মতো যুক্তরাজ্যও বাংলাদেশে অবাধ ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনি প্রক্রিয়াসহ বহুপক্ষীয় ও স্বচ্ছ গণতন্ত্র দেখতে চায়৷
‘অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন অন্য দেশের ওপর নির্ভর করে না’
১৬ নভেম্বর ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে তুরস্কের রাষ্ট্রদূত মোস্তফা ওসমান তুরান বলেন, ‘‘অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করা সরকার, রাজনৈতিক দল ও বাংলাদেশের জনগণের ওপর নির্ভর করে, অন্য কোনো দেশের ওপর নয়৷’’