1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের আরেকটি ‘পরাজয়’

সমীর কুমার দে ঢাকা
১১ ডিসেম্বর ২০২০

আবার বিব্রতকর অবস্থায় মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়৷ এবার বিজয়ের মাসে মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় আবার দেখা গেছে বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনি মোসলেহ উদ্দিন খানের নাম৷

https://p.dw.com/p/3maXF
মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর
ছবি: DW/M.M. Rahman

এর আগে রাজাকারের তালিকায় মুক্তিযোদ্ধাদের নাম রাখা, মুক্তিযুদ্ধে অনন্য অবদান রাখা বিদেশি বন্ধুদের সম্মাননা ক্রেস্টে খাদ মেশানো সোনা ব্যবহারের মতো ঘটনাও দেখিয়েছে মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়৷

এসব নিয়ে মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেছে ডয়চে ভেলে৷ কিন্তু কথার মাঝপথেই ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন তিনি৷

সংক্ষিপ্ত কথোপকথনটা ছিল এরকম:

ডয়চে ভেলে : আপনি নিশ্চয় জেনেছেন বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত একজন খুনির নাম মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় রয়ে গেছে৷ এটা কিভাবে সম্ভব?

   মোজাম্মেল হক : কার নাম আছে?

যাদের নাম ছিল তাদের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে: মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক

ডয়চে ভেলে : মোসলেহ উদ্দিন৷

   মোজাম্মেল হক : যাদের নাম ছিল তাদের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে৷ তারপরও ভুলে থাকতে পারে৷ বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের নাম আছে৷ এর মধ্যে কোন ক্যাটাগরিতে তার নাম আপনারা দেখেছেন সেটা যদি তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করেন, তাহলে আমরা তার নাম বাদ দিয়ে দেবো৷

ডয়চে ভেলে : মন্ত্রণালয়ের যারা এই তালিকা দেখভাল করেন বিষয়টি আগেই তাদের নজরে আসা উচিত ছিল না?

   মোজাম্মেল হক : অবশ্যই আসা উচিত৷ তবে এভাবে যাদের নাম পাওয়া যাচ্ছে তাদের বাতিল করা হচ্ছে৷ তারপরও যদি কারো নাম থেকে থাকে, কেউ যদি তথ্য দিয়ে আমাদের সহযোগিতা করেন, তাহলে আমরা তার নাম বাদ দিয়ে দেবো৷ অনেক সময় একই নাম অনেক লোকের থাকে৷ সে কারণে অনেক সময় হয়ত নিশ্চিত করা যায় না৷ যা-ই হোক, তারপরও করা উচিত অবশ্যই৷ এটা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার৷ দয়া করে কেউ আমাদের জানালে আমরা তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেবো৷

ডয়চে ভেলে : এর আগে যখন রাজাকারদের নামের তালিকা প্রকাশ করেছিলেন তখনও অনেক মুক্তিযোদ্ধার নাম সেই তালিকায় ঢুকে যায়৷ তখন নানা বিতর্কের মুখে তো সেই তালিকা বাতিল করা হলো৷

   মোজাম্মেল হক : আপনি জানায়েন৷ কার নাম আছে সেটা জানায়েন৷

এরপর আর কোনো প্রশ্নের উত্তর দিতে রাজি হননি মন্ত্রী৷ ফোনের সংযোগ কেটে দেন৷ অনেক চেষ্টা করেও তাকে আর পাওয়া যায়নি৷

দু'দিন আগে বাংলাদেশের একটি জাতীয় দৈনিকে ‘বঙ্গবন্ধুর খুনির নাম মুক্তিযোদ্ধার তালিকায়’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়৷ ওই রিপোর্টের পর তালিকা থেকে মোসলেহ উদ্দিন খানের নাম তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়৷ তাই শুক্রবার মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে গিয়ে নরসিংদীর শিবপুরের মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকায় আর মোসলেহ উদ্দিনের নাম পাওয়া যায়নি৷

গত ১৯ নভেম্বর জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা)-র বৈঠকে মোসলেহ উদ্দিন খানের গেজেট বাতিলের সিদ্ধান্ত হয়৷ তবে শুক্রবার পর্যন্ত মন্ত্রণালয়ের গেজেট শাখা তা বাতিল করেনি৷

মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় বঙ্গবন্ধুর খুনিদের নাম থাকার বিষয়টি ২০১৭ সালে প্রথম উঠে এসেছিল৷ তখন নাম ছিল চার জনের৷  মোসলেহ উদ্দিন খানের নাম এতদিন কিভাবে থেকে গেল তা জানতে চাইলে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের মহাপরিচালক জহুরুল ইসলাম রোহেল বলেন, ‘আমরা মোসলেহ উদ্দিনের নামের গেজেট ও সনদ থাকার বিষয়টি জানতাম না৷ তবে জানার পর তা বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছি৷ ইতিমধ্যে ওয়েবসাইট থেকে তার নাম বাদ দেওয়া হয়েছে৷ আসলে আমি এখানে এসেছি তিন মাস আগে৷ ফলে আগের অনেক কিছুই আমি জানি না৷ এখন আমাদের একটা টিম কাজ করছে, এমন বিতর্কিত কারো নাম ওই তালিকায় আছে কিনা সেটা খুঁজে বের করতে৷ এমন কারো নাম পাওয়া গেলে বাদ দেওয়া হবে৷’’

বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতা হত্যা মামলায় দেশের সর্বোচ্চ আদালত মোসলেহ উদ্দিন খানের মৃত্যুদণ্ডের রায় ঘোষণা করেছে৷ বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের শাসনামলে ২০০৩ সালের ৬ সেপ্টেম্বর তার নামের গেজেট প্রকাশ হয়৷ তার বাবার নাম আব্দুল হক খান৷ জেলা নরসিংদী, থানা শিবপুর, গ্রাম দত্তেরগাঁও৷

মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সরকারের জন্য সম্মানহানিকর: হারুন হাবিব

বিজয়ের মাসে এসেই বারবার কেন বিতর্কে জড়ায় মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়? মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানিত করতে গিয়ে এভাবে বারবার কেন তাদের অসম্মানিত করা? ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির মহাসচিব মুক্তিযোদ্ধা হারুন হাবিব ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমি মনে করি, এই মন্ত্রণালয় থেকে ইতিপূর্বে কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে যা খুবই বিতর্কিত পদক্ষেপ এবং মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সরকারের জন্য সম্মানহানিকর৷ এই সরকার একটানা ১২-১৩ বছর ধরে ক্ষমতায় রয়েছে৷ তারপরও মোসলেহ উদ্দিনের মতো একজন খুনির নাম কিভাবে এতদিন এই তালিকার মধ্যে থেকে গেল সেটা আমরা কল্পনা করতে পারি না৷ এটা অত্যন্ত দূর্ভগ্যজনক এবং অভাবনীয় ব্যাপার৷ সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে যদি এই মন্ত্রণালয়কে ঢেলে সাজানো না হয় তাহলে আরো বড় ক্ষতি হয়ে যেতে পারে৷’’ তিনি আরো বলেন, ‘‘রাজাকারের তালিকায় মুক্তিযোদ্ধা ও ভাষা সৈনিকদের নাম ঢুকিয়ে দিয়ে একটা বড় ক্ষতি করে ফেলা হয়েছে৷ আবার বারবার মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা পরীক্ষা-নিরীক্ষার নামে দুর্নীতির আশ্রয় নেওয়া হচ্ছে৷ এই দুর্নীতি গ্রামে ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে৷ এটা মেনে নেওয়া কঠিন৷ আমি মনে করি, এর একটা বিহিত হওয়া দরকার৷’’

প্রসঙ্গত, এর আগেও গত বছর রাজাকারদের একটি তালিকা প্রকাশ করে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়৷ সেখানে অনেক মুক্তিযোদ্ধা ও ভাষা সৈনিকের নাম চলে আসে৷ এ নিয়ে বিতর্কের মুখে সেই তালিকা বাতিল করে মন্ত্রণালয়৷ এছাড়া বছরের পর বছর মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা চূড়ান্ত করার নামে এক ধরনের বানিজ্যের অভিযোগও রয়েছে৷ পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধে অবদান রাখা বিদেশি বন্ধুদের সম্মাননা স্মারকে সোনার মধ্যে খাদ দিয়ে বড় ধরনের কেলেঙ্কারির জন্ম দিয়েছে এই মন্ত্রণালয়৷

একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির বলেছেন, বঙ্গবন্ধুর খুনির নাম মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় কিভাবে এলো এটার অবশ্যই তদন্ত হওয়া উচিত৷ এ জন্য মন্ত্রণালয়কেও জবাবদিহি করতে হবে৷ এটা রাষ্ট্রের অবমাননা, জাতির অবমাননা৷