বিচারে ধর্ষিতার জেল!
৪ নভেম্বর ২০১৮পরিসংখ্যান বলছে, মৌরিতানিয়ার নারী কয়েদিদের ৪০ শতাংশেরও বেশি কয়েদির মূল অপরাধ বিবাহ বহির্ভূত যৌন সম্পর্ক বা ‘জিনা'৷ নোয়াকচোট শহরে ২০১৬ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যেই অন্তত ৫০ জন নারীর কারাদণ্ড হয়েছে৷ আশ্চর্যের বিষয়, বেশিরভাগ নারীই ধর্ষণের শিকার৷
উত্তর-পশ্চিম আফ্রিকার মরুভূমির মাঝে অবস্থিত দেশ মৌরিতানিয়া শরিয়া আইনে চলা একটি ইসলামী প্রজাতন্ত্র৷
অনেক ইসলামি রাষ্ট্রের মতো ধর্ষণের শাস্তি সেখানে মৃত্যুদণ্ড না হলেও সেখানকার আইন এখনো নারীবান্ধব নয়৷
সে দেশে বিবাহবহির্ভূত যৌন সম্পর্ক অবৈধ৷ ফলে ধর্ষণের শিকার হলে নারীকে সবার আগে প্রমাণ করতে হয় যে যৌন সম্পর্কটি অনিচ্ছাকৃত ছিল৷ তা প্রমাণ করা সব সময়ই কঠিন৷ এ কারণে ধর্ষকের শাস্তি হোক না হোক বিবাহ বহির্ভূত যৌন সম্পর্কের কারণে ধর্ষিতার শাস্তি অবধারিত৷
ফলে, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ধর্ষিত নারীকেই কারাভোগ করতে দেখা যায়৷ যেসব ক্ষেত্রে তাঁরা প্রমাণ করতে পারেন যে, তাঁদের সাথে জোর খাটানো হয়েছে, কেবল সেখানেই রেহাই পান নারীরা৷
আইনে ফাঁক রয়ে যাওয়ার কারণে খুব সহজেই ধর্ষনকে ‘জিনা' বলে চালিয়ে দেওয়া যায় বলে মনে করে মৌরিতানিয়ার বিভিন্ন নারী অধিকার সংগঠন৷
২৬ বছর বয়সি খাদি একজন ভুক্তভোগী৷ ধর্ষণের পর তিনি লোকলজ্জার ভয়ে কাউকে বলতে পারেননি৷ কিন্তু গর্ভাবতী হওয়ার পর বিষয়টা জানাজানি হয়ে যায়৷ একটি কন্যা সন্তানের জন্ম দেন তিনি৷
বিবাহ বহির্ভূত যৌন সম্পর্কের দায়ে হাজতবাস করতে হলেও প্রগতিশীল আইনজীবীদের সহায়তায় ছাড়া পান খাদি৷ কিন্তু সবার ভাগ্য এক রকম হয় না৷
মৌরিতানিয়ায় পুরুষদেরও ‘জিনা'-র দায়ে কারাদণ্ড হয়৷ কিন্তু তাদের ক্ষেত্রে কারাবাসের সময় হয় মেয়েদের তুলনায় কম৷
২০০৫ সালে কার্যকর হওয়া নতুন আইনের কারণে ছোট মেয়েদের আর ‘জিনা'-য় অভিযুক্ত করা যায় না৷ মৌরিতানিয়ার নারী ও শিশু স্বাস্থ্য রক্ষা সমিতির কর্ণধার জিনাবু তালেব মুসা জানান যে, এ আইনের কারণে এখন সময় নিয়ে তদন্ত করা হয়, নেওয়া হয় সাক্ষ্যও৷ নারীকে কিছুটা হলেও সুযোগ দেওয়া হয় এখন৷ তবুও প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য ও মাঝে মাঝে ছোটদের জন্যও এই আইন খুব সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে না৷
ধর্ষণের পর অনেক ক্ষেত্রে হাজতবাস এড়ানো গেলেও অল্পবয়সি, অবিবাহিত মেয়েরা অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ে৷ ফলে বাড়তে থাকে তাদের প্রতি সামাজিক অবিচার৷
কিন্তু মুসা ও তাঁর সহযোগী ইলাই-এর উদ্যোগে একটি নতুন আইন আলোচনায় উঠে আসছে৷ ২০১২ সালে প্রস্তাবিত এই আইন লিঙ্গ বৈষম্য ও এ সংক্রান্ত সহিংসতার বিরুদ্ধে৷ ২০১৬ সালে আইনটি অনুমোদনের জন্য সংসদে পাঠালে সেখানে তুমুল বিতর্ক হয়৷ বলা হয়, এই আইন পশ্চিমা ধাঁচে গড়া ও সমকামের পক্ষে৷
এসএস/এসিবি (রয়টার্স)