বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের ঊর্ধ্বগতি
২ মে ২০১৮দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগের বছর ২০১৩ সালে ক্রসফায়ারের যে হার তার সঙ্গে এবারের হার প্রায় কাছাকাছি৷
অধিকার জানিয়েছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল, এই চারমাসে ক্রসফায়ারে ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর নির্যাতনে ৭৩ জন নিহত হয়েছে৷ অধিকারের হিসাব মতে, ২০১৭ সালে এই সংখ্যা ছিল ১৫৪, ২০১৬ সালে ১৭৮, ২০১৫ সালে ১৮৬, ২০১৪ সালে ১৭২ এবং ২০১৩ সালে ৩২৯ জন নিহত হয়েছে৷
অধিকারের তথ্য বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, গত বছর ছয়মাসে ক্রসফায়ারে নিহত হয়েছে ৭৭ জন৷ চলতি বছরের প্রথম চারমাসেই তা গতবছরের ছয় মাসের সমান৷ নির্বাচনের আগের বছর ২০১৩ সালে প্রতিমাসে গড়ে ২৭ জন ক্রসফায়ারে নিহত হয়েছে৷ চলতি বছরেও প্রতিমাসে আগের বছরগুলোর তুলনায় ক্রসফায়ারে নিহতের হার বাড়ছে৷ এই হার প্রায় ১৯ জন৷ ২০১৩ সালের হারের পরই এর অবস্থান৷
অধিকারের পরিচালক নাসিরউদ্দিন এলান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এ বছর বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড আবার বেড়ে যাচ্ছে৷ এটা অ্যালার্মিং৷ ২০১৩ সালে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড অনেক বেশি ছিল৷ পরের বছরগুলোতে আবার কমে আসে৷ ২০১৪ সালে বিতর্কিত নির্বাচনের আগের বছর অনেক রাজনৈতিক নেতা-কর্মীও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও ক্রসফায়ারের শিকার হয়েছে৷ দমন, নির্যাতনের পরিস্থিতি ছিল তখন৷ এবছর আবার জাতীয় নির্বাচন হবে৷ তবে সে কারণে বিচারবহির্ভূত হত্যা বেড়ে যাচ্ছে কিনা তা বলার সময় এখনো আসেনি৷''
তবে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বাড়ার প্রবণতার সঙ্গে নির্বাচনের সম্পর্ক দেখেন মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের সাবেক নির্বাহী পরিচালক নূর খান৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘ক্রসফায়ার বেড়ে যাচ্ছে৷ গত বছরের প্রথম ছয়মাসের তুলনায় এবার তা চারমাসেই হয়েছে৷ আর যদি নির্বাচনের বছর ২০১৩-১৪ সালকে এই বছরের প্রবণতার সঙ্গে তুলনা করি তাহলে মিল পাই৷ তার মানে হলো যখন নির্বাচন সামনে আসে তখন এক ধরণের পরিস্থিতি তৈরি করা হয় বা তৈরি হয়, যে পরিস্থিতিতে নির্যাতন, ক্রসফায়ার বা বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বেড়ে যায়৷''
তিনি বলেন, ‘‘এটা থেকে স্পষ্ট বোঝা যায়, নির্বাচনকে সামনে রেখে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, গুম বেড়ে যাচ্ছে৷ পরিসংখ্যান এটাই বলছে৷ এই বেড়ে যাওয়ার কারণ হল একটা ভয়ার্ত পরিবেশ তৈরি করা৷ যে পরিবেশের মাধ্যমে মানুষের বাকস্বাধীনতা ও সংগঠিত হওয়ার অধিকার ক্ষুন্ন করা যায় বা সংকুচিত করা যায় তার একটা চেষ্টা হতে পারে৷''
তবে মানবাধিকার সংস্থা ‘অধিকারের' মানবাধিকার বিষয়ক প্রতিবেদনগুলোকে যথার্থ মনে করেন না বাংলাদেশের তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু৷ তিনি বাংলাদেশের বাকস্বাধীনতা সংকুচিত হচ্ছে, এই সংক্রান্ত মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের এক রিপোর্টের প্রতিক্রিয়ায় সম্প্রতি বলেন, ‘‘এ রিপোর্টে যে বেসরকারি সংস্থাগুলোর বরাত দেওয়া হয়েছে, তাদের বক্তব্যও পরস্পরবিরোধী৷ এদের মধ্যে একটির নাম ‘অধিকার'৷ ২০১৩ সালের ৫ মে ঢাকায় হেফাজতের সমাবেশ শেষে তারা হাজার হাজার মানুষ নিহত হয়েছিল বলে প্রতিবেদন দেওয়ার পর তথ্য মন্ত্রণালয় থেকে তালিকা চাওয়া হয়েছিল৷ এনজিও অধিকার তালিকা দিতে ব্যর্থ হয়৷ এমন এনজিওর বরাতে তৈরি প্রতিবেদন সঠিক হওয়ার কথা নয়৷''
গত ২০ এপ্রিল বাংলাদেশে সংবাদমাধ্যম ও বাকস্বাধীনতায় নিয়ন্ত্রণ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে যুক্তরাষ্ট্র৷ মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ২০১৭ সালের বার্ষিক কংগ্রেশনাল-ম্যান্ডেটেড হিউম্যান রাইটস রিপোর্টে এই উদ্বেগের কথা তুলে ধরা হয়৷ এতে বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতির অবনতি নিয়ে উদ্বেগ জানানোর পাশাপাশি ২০১৭ সালে বাংলাদেশে বাকস্বাধীনতা সংকুচিত হওয়ার কথা বলা হয়৷
২০১৪ সালের এই ছবিঘরটি দেখুন...