1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বিকল্প মুদ্রা কতটা সম্ভব?

১৯ সেপ্টেম্বর ২০২২

আন্তর্জাতিক লেনদেনে ডলারের ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে বিকল্প মুদ্রা নিয়ে ভাবছে বাংলাদেশ। ইউরো বিকল্প হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। এখন চীনা মুদ্রা ইউয়ান, রাশিয়ান রুবল এবং ভারতীয় রুপি নিয়ে চিন্তা করা হচ্ছে।

https://p.dw.com/p/4H41V
PantherMedia 28278625
ইউরো (ফাইল ফটো)ছবি: Andrei Barmashov/PantherMedia/image images

বাংলাদেশ ব্যাংক এরইমধ্যে চীনা মুদ্রায় এলসি খোলার অনুমতি দিয়েছে।  বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো বাংলাদেশ ব্যাংকে চীনা মুদ্রার ক্লিয়ারিং অ্যাকাউন্ট খুলতে পারবে। তারা বিদেশে প্রতিনিধিত্বকারী শাখায়ও একাউন্ট খুলতে পারবে।

কিন্তু প্রশ্ন হলো এটা কতটা সম্ভব হবে এবং কতটা কাজে আসবে? বিশ্লেষকেরা বলছেন, বিকল্প মুদ্রা ব্যবহারে  তেমন  বাধা নেই। তবে এটা কতটা কাজে আসবে সেটা নিয়ে সন্দেহ আছে। যমুনা ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. নুরুল আমিন মনে করেন,"আমরা যেহেতু রপ্তানির চেয়ে আমদানি বেশি করি তাই চীনা বা ভারতীয় মুদ্রা আমাদের কাছে তো তেমন থাকবে না।” আর ব্র্যাক ব্যাংকের চেয়ারম্যান এবং সেন্টার ফর পলিসি রিচার্স ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন," বিকল্প মুদ্রা থেকে আমাদের তো আবার ডলারেই কনভার্ট করতে হবে। তাতে তো তেমন লাভ হবে না।”

বাংলাদেশের মোট আমদানির ৪০ শতাংশই হয় চীন এবং ভারত থেকে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য মতে, মোট রফতানির ২৬ শতাংশ এবং আমদানির সাড়ে ৩ শতাংশ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে। মোট রফতানির ৫৬ শতাংশ এবং আমদানির ৮ শতাংশ হয় ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে।

কোন দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের আমদানি ও রপ্তানি বাণিজ্যের অবস্থা কী সেটা বিবেচনায় রেখে কাজ করছে সরকার।

মুদ্রার ওপর আস্থার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ

যমুনা ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. নুরুল আমিন বলেন ইউএস ডলারের মধ্যস্থতা থেকে বের হওয়ার জন্য বিকল্প মুদ্রা ব্যবহারে উদ্যোগ ভালো। এতে ডলার নির্ভরতা কিছুটা হলেও কমবে। কিন্তু এটা কতটা সফল হবে তা অনেকটাই নির্ভর করছে দেশের সক্ষমতার ওপর । তিনি বলেন,"আমরা একটি আমদানি নির্ভর দেশ। ভারত থেকে আমরা আমদানি করি সাত-আট বিলিয়ন ডলারের পণ্য। কিন্তু রপ্তানি করি এক বিলিয়ন ডলারের পণ্য। চীনে রপ্তানি করি এক বিলিয়নের নীচে। কিন্তু আমদানি করি এর চেয়ে অনেক বেশি। ফলে আমাদের কাছে চীনা মুদ্রা ইউয়ান পর্যাপ্ত পরিমাণে থাকবেনা। প্রচুর ভারতীয় রুপি থাকবেনা।  আর গোল্ড কেন মানুষ রাখে, কারণ এটার দাম তেমন কমবে না বলে মানুষের আস্থা আছে। ডলারের ওপরও তেমনি মানুষের আস্থা আছে। এখন দুই দেশের মুদ্রার ওপরে পরস্পরের আস্থা কতটুকু তাই আসল কথা।”

‘বিকল্প মুদ্রা ব্যবহারে উদ্যোগ ভালো’

ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন,"আমি যদি চীনে রপ্তানি করে ডলার পাই। সেই ডলার দিয়ে তুলা আমদানির বিল মিটাতে পারি।  তুলা আনতে হবে অ্যামেরিকা থেকে।তাহলে আমার জন্য ডলারটা লাভজনক। এখন ইউয়ান যদি ডলারে কনভার্ট করি তাহলে তো এখানে কিছুটা লোকসান হবে। আবার একই ব্যক্তি কিন্তু আমদানি ও রপ্তানি করছেন না।”

কারেন্সি বাস্কেট

বিশ্লেষকেরা জানান, বিশ্বের পাঁচটি দেশের মুদ্রা নিয়ে এখন ইন্টারন্যাশনাল কারেন্সি বাস্কেট করা হয়েছে। ইউএস ডলার, ব্রিটিশ পাউন্ড, ইউরো, জাপানি ইয়েন এবং চীনা ইউয়ান। এশিয়ান ক্লিয়ারিং সিষ্টেমের(আকু) মাধ্যমে এশিয়ার দেশগুলো তাদের আমদানি রপ্তানি দায় পরিশোধ করে। সেখানে ডলার মধ্যস্থতাকারী মুদ্রা। কিন্তু সেটা থাকলেও এর অধীনেই দুই দেশ তাদের নিজস্ব মুদ্রা ব্যবহার করতে পারে। আবার চীন ক্রসবর্ডার ইন্টারব্যাংক পেমেন্ট সিস্টেম গড়ে তুলেছে। এশিয়া আফ্র্রিকার ৩০-৩৫টি দেশ এই সিস্টেমের মধ্য দিয়ে লেন দেন করে । এটার কারেন্সি হচ্ছে চীনা ইউয়ান। কিন্তু বিশ্ব অর্থনীতি ডলারের ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে চাইলেও তা খুব ধীর গতিতে হচ্ছে বলে মনে করেন ড. আহসান এইচ মনসুর। তিনি বলেন,"এখনো ৫৯ শতাংশ রিজার্ভ হলো ইউএস ডলারে। ইউরো প্রায় ২০ ভাগ। আর সব মুদ্রা মিলিয়ে বাকি ২০ শতাংশ। ইউয়ান ২.২৫ শতাংশ। বিকল্প মুদ্রার ক্ষেত্রে ইউয়ান কিছুটা ভূমিকা রাখতে পারে। ভারতীয় রুপিও হয়তো হবে। কিন্তু রুবল সম্ভব নয়।”

‘ডলার দিয়ে তুলা আমদানির বিল মিটাতে পারি’

কীভাবে বিনিময় সম্ভব

যেসব দেশ তাদের দুই দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকে একাউন্ট খুলবে তারা ডলার এড়িয়ে নিজস্ব মুদ্রায় লেনদেন করতে পারে। এটা ইউয়ান, ভারতীয় রুপি, রাশিয়ান রুবল সব ক্ষেত্রেই হতে পারে। তবে যাদের রপ্তানি বেশি তাদের সুবিধা। কারণ তাদের কাছে মুদ্রা জমা থাকবে। নুরুল আমিন বলেন,"তবে বিষয়টি নির্ভর করে ওই মুদ্রার ওপর কতটা আস্থা আছে তার ওপর। কারেন্সি পাওয়া কোনো সমস্যা হয়না যদি কেন্দ্রীয় ব্যাংকে ওই কারেন্সির অ্যাকাউন্ট থাকে। কারেন্সি পাওয়ার আরো একটি পথ আছে। সেটা হলো ইন্টারন্যাশনাল কনভার্সন।  পাউন্ড কে ডলারের কনভার্ট করা যায়। তবে মুদ্রার মান কত হবে সেটা যে কোনো মুদ্রার ক্যাপাসিটির ওপর নির্ভর করে। ক্রস কারেন্সি মান প্রতিদিন নির্ধারণ হয় বাজারের ওপর। এটা সাধারণ মানুষের কাজ নয়।”

লাভ কী হবে?

আহসান এইচ মনসুর বলেন,"আমাদের এইটুকু লাভ হতে পারে যে আমরা চীন ও ভারতে রপ্তানি করে  তাদের যে মুদ্রা পাব তা ব্যবহার করতে পারব। তবে   সেটা যদি কেউ বিক্রি করতে চান অন্যরা নাও কিনতে চাইতে পারে। এটা ব্যক্তির লাভের উপর নির্ভর করে। এখানে আমদানির ক্ষেত্রে ডলার বাঁচবে। কিন্তু রপ্তানির ক্ষেত্রে তো আর সেটা হবেনা। আসলে অর্থনৈতিক সক্ষমতা অর্জনই আসল কথা।”

বাংলাদেশের মোট আমদানির ২৬ শতাংশ চীন এবং ১৪ শতাংশ ভারত থেকে আসে। ওই দুই দেশে মোট রপ্তানির তিন শতাংশ করে হয়।

বাংলাদেশে এখন রিজার্ভের পরিমাণ ৩৭.১৩ বিলিয়ন ডলার। আর ব্যাংকে এক ডলারের বিনিময় হার ৯৬ টাকা, খোলা বাজারে ১০৬ টাকা। গত এক বছরে ডলারের দাম বেড়েছে ১২ শতাংশ।

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য