বিএনপি’র প্রার্থীদেরও আটকের অভিযোগ
৩০ নভেম্বর ২০১৮তবে নির্বাচন কমিশন বলছে, পুলিশ বিনা কারণে কাউকে গ্রেপ্তার করছে না৷
বিএনপি ১৮ নভেম্বর প্রথম নির্বাচন কমিশনে (ইসি) একটি ‘গায়েবি মামলার’ তালিকা দেয়৷ তাতে তারা দাবি করে, ৮ নভেম্বর জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত বিএনপির ৭৭৩ জন নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়৷ ওই চিঠিতে অভিযোগ করা হয়, বিএনপি'র নেতা-কর্মীদের বাড়িতে ধারাবাহিকভাবে তল্লাশি ও গ্রেপ্তার অভিযান চালানো হচ্ছে৷
এরপর ২১ নভেম্বর বিএনপি গ্রেপ্তার হওয়া ৫ জন মনোনয়নপ্রত্যাশীসহ আটক ৫ শতাধিক নেতা-কর্মীর তালিকা দেয় ইসিতে৷ তাদের তালিকা অনুযায়ী, গ্রেপ্তার হওয়া মনোনয়নপ্রত্যাশীরা হলেন: বাগেরহাট-৪ আসনের বিএনপি নেতা মো. ইব্রাহিম হোসেন, গাইবান্ধা-২ আসনের মো. আনিসুজ্জামান খান বাবু, নেত্রকোনা-২ (সদর) আসনের ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের সাবেক সহ-সভাপতি মো. আনোয়ারুর হক রয়েল, ঢাকা-১০ আসনের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক শেখ রবিউল আলম রবি ও যশোর জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি মো. আবুবক্কর আবু৷
দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ইসিকে দেয়া চিঠিতে বলেন, ‘‘জাতীয় নির্বাচনে মনোনয়নপ্রত্যাশী নেতাদেরও গ্রেপ্তার ও আটকে রাখছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী৷ এ পর্যন্ত মনোনয়নপ্রত্যাশী পাঁচ জনকে আটকের পর জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে৷ মনোনয়নপ্রত্যাশী একজনকে এখনো খুঁজে পাওয়া যায়নি৷’’
তিনি আরো বলেন,‘‘কয়েকদিন ধরে বিএনপি নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার করে দিনের পর দিন আটক রেখে আদালতে হাজির করা হচ্ছে৷ আবার কাউকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয় দিয়ে আটকের পর গুম করে রাখা হচ্ছে৷ দলের নেতা-কর্মীদের বাড়ি বাড়ি তল্লাশিও চলছে৷’’
এর আগে ৭ নভেম্বর সংলাপের সময় বিএনপি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের কাছে প্রখম দফায় ১ হাজার ৪৬টি মামলার তালিকা দেয়৷ এরপর ১৩ নভেম্বর আরো ১ হাজার ২টি মামলার তালিকা দেয় সরকারকে৷ বিএনপি ওইসব মামলাকে রাজনৈতিক এবং গায়েবি মামলা বলে অভিহিত করে৷
এদিকে বৃহস্পতিবার গুলশানে বিএনপি চেয়ারপার্সনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে একাদশ সংসদ নির্বাচন নিয়ে ইইউর নির্বাচন বিশেষজ্ঞ দলের সঙ্গে বৈঠকের সময় বিএনপি নেতারা বলেন, এখন পর্যন্ত সব রাজনৈতিক দলের জন্য সমান সুযোগ তৈরি করতে পারেনি নির্বাচন কমিশন৷ তফসিল ঘোষণার দিন থেকে এ পর্যন্ত গ্রেপ্তার ও মামলার তথ্য দিয়ে দাবি করা হয়, সারা দেশে বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার অব্যাহত আছে৷ বিএনপির মনোনীত প্রার্থীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে বলেও দাবি করা হয় তখন৷ তখন গ্রেপ্তারকৃত মনোননীত প্রার্থীদের তালিকাও দেয়া হয়৷
ঢাকায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত রেনজিং টিরিংকের নেতৃত্বে প্রতিনিধি দলে ইইউর নির্বাচন বিশেষজ্ঞ ডেভিড নোয়েল ওয়ার্ড ও ইরিনি মারিয়া গোনারি ছিলেন৷ বিএনপি প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর৷ আরো ছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী৷
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরা বৈঠকে ইউরোপীয় ইউনিয়রকে সার্বিক পরিস্থিতি জানিয়েছি৷’’
তিনি বলেন, ‘‘এখনো গণগ্রেপ্তার অব্যাহত আছে৷ নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তারে চলছে পুলিশের তল্লাশি ও অভিযান৷ প্রার্থীদেরও গ্রেপ্তার করা হচ্ছে৷ কোর্টও নানাভাবে অনেককে আটকে দিচ্ছে৷ জামিন বাতিল করে দিচ্ছে৷ নির্বাচন কমিশনও নানা পরিপত্র জারি করছে৷ লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড বলতে কিছু নেই৷ এখন মনে হচ্ছে, আমরা যাতে নির্বাচনে অংশ নিতে না পারি, তার সব ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে৷ একদিকে নির্বিচারে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে, অন্যদিকে তারা আচরণবিধি লঙ্ঘন করে যাচ্ছেতাই করছে৷’’
তবে গত ২৪ নভেম্বর প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদা দাবি করেন,‘‘পুলিশ আমাদের কথা মানছে৷ আমাদের কথার বাইরে বিনা কারণে পুলিশ কাউকে গ্রেপ্তার করে না, করছে না৷’’ নিজ কার্যালয়ে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘আইন অনুযায়ী যেভাবে এগোনোর কথা, সবকিছু সেভাবেই এগোচ্ছে৷ পুলিশ আমাদের নিয়ন্ত্রণে আছে৷’’
সুশাসনের জন্য নাগরিক সুজন-এর প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘নির্বাচনের আগে প্রার্থী, তাদের এজেন্ট, কর্মী-সমর্থকদের গ্রেপ্তারের ঘটনা,ঘর ছাড়া করার ঘটনা হয়তো দু-একটি ঘটেছে, তবে এবার যেমন হচ্ছে সেরকম হয়নি৷ এতে ভয়ের এবং আতঙ্কের পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে৷’’ তিনি বলেন, ‘‘আমি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে নিরপেক্ষ আচরণের আহ্বান জানাবো৷ একই সঙ্গে নির্বাচন কমিশনকেও ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানাই৷’’