বিএনপি বাদ
২১ নভেম্বর ২০১৩হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের জাতীয় পার্টিকে চারজন পূর্ণ মন্ত্রী ও দু'জন প্রতিমন্ত্রী দেয়া হয়েছে৷ এর বাইরে আরেকজন নেতাকে মন্ত্রী পদমর্যাদায় প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা করা হয়েছে৷ অন্য দলগুলোর মধ্যে জাসদের হাসানুল হক ইনু ও ওয়ার্কার্স পার্টির রাশেদ খান মেননকে দু'টি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্ব দেয়া হয়েছে৷ আওয়ামী লীগ থেকে এই সরকারের রয়েছেন ১৫ জন মন্ত্রী এবং পাঁচজন প্রতিমন্ত্রী৷ ওদিকে আগের মন্ত্রিসভার ১৬ জন মন্ত্রী ও ১৪ জন প্রতিমন্ত্রীর পদত্যাগ-পত্র গ্রহণ করে রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানো হয়েছে বলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে জানানো হয়েছে৷ আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, বিএনপির মন্ত্রিসভায় আসার পথ এখনো রুদ্ধ হয়ে যায়নি৷ তাঁরা চাইলে এই মন্ত্রিসভায় তাঁদের সুযোগ দেয়া হবে৷
দুই দিন আগে নির্বাচনকালীন সরকারের মন্ত্রিসভা গঠনের সব কিছু চূড়ান্ত করা হলেও, প্রধান বিরোধী দল বিএনপি এই সরকারে যোগ দেবে কিনা – তা দেখার জন্য গেজেট প্রকাশ করা হয়নি৷ অবশেষে বিএনপিকে বাদ দিয়ে এরশাদের জাতীয় পার্টি ও সরকারের মিত্র বাম সংগঠনগুলোকে নিয়েই গঠন করা হয়েছে নির্বানকালীন মন্ত্রীসভা৷
এই মন্ত্রিসভা নির্বাচন পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করবে৷ সরকার এই মন্ত্রিসভাকে সর্বদলীয় বললেও প্রধান বিরোধী দল বিএনপি না আসায়, এটা সর্বদলীয় না হলে বহুদলীয় সরকার হয়েছে বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা৷ অনেকে বলেছেন, আওয়ামী লীগ তার মিত্রদের নিয়েই এই মন্ত্রিসভা গঠন করেছে৷ গত নির্বাচনের সময় যাঁদের সঙ্গে জোট গঠন করে নির্বাচনে জয়ী হয়েছিল তারা, শুধু তাঁদেরই এই মন্ত্রিসভায় ঠাঁই মিলেছে৷ এর বাইরে কেউ আসেনি৷ শুধুমাত্র আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর জাতীয় পার্টি (জেপি) এই নির্বাচনকালীন সরকারে যোগ দিয়েছে৷ মঞ্জুকে মন্ত্রীর পদমর্যাদায় সরকারের উপদেষ্টা করা হয়েছে৷ যদিও বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে যাঁদের নিয়োগ কার হয়েছে, তাঁদের গেজেট প্রকাশ করা হয়নি৷ বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট ভেঙে কাউকে কাউকে এই মন্ত্রিসভায় আসার চেষ্টা চলছে বলেও জানা গেছে৷
নতুন মন্ত্রিসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, জনপ্রশাসন, প্রতিরক্ষা ও সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ নিজের হাতে রেখেছেন৷ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মহিউদ্দীন খান আলমগীরের পদত্যাগ-পত্র গ্রহণ করা হলেও, নতুন কাউকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব দেয়া হয়নি৷ তবে প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট শামসুল হক টুকু আগের দায়িত্বেই থাকছেন৷ আর পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনিকে সরিয়ে নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব দেয়া হয়েছে আবুল হাসান মাহমুদ আলীকে৷
এছাড়া ২৮ জনের মন্ত্রিসভায় ঠাঁই পাওয়া পুরনো মন্ত্রীদের মধ্যে আছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী, পরিকল্পনামন্ত্রী এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) এ কে খন্দকার, স্থানীয় সরকার মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন, যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, বাণিজ্যমন্ত্রী গোলাম কাদের, তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, নৌ পরিবহন মন্ত্রী শাহাজান খান, পরিবেশমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, রেলপথ মন্ত্রী মুজিবুল হক এবং রমেশ চন্দ্র সেনকে দেয়া হয়েছে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব৷
নতুন মন্ত্রীদের মধ্যে আওয়ামী লীগ নেতা আমির হোসেন আমুকে ভূমি ও তোফায়েল আহমেদকে শিল্প মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে৷ এছাড়া জাতীয় পার্টির বেগম রওশন এরশাদকে স্বাস্থ্য, রুহুল আমিন হাওলাদারকে বেসামরিক বিমান, আনিসুল ইসলাম মাহমুদকে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় দেয়া হয়েছে৷ আর ওয়াকার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননকে ডাক ও টেলি-যোগাযোগ মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে৷ এছাড়া প্রতিমন্ত্রী হিসেবে জাতীয় পার্টির মুজিবুল হক চুন্নুকে ক্রীড়া, দীপংকর তালুকদারকে পার্বত্য চট্টগ্রাম, কামরুল ইসলামকে আইন, মন্নুজান সুফিয়ানকে শ্রম ও কর্মসংস্থান, প্রমোদ মানকিনকে সমাজকল্যান ও সালমা ইসলামকে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে৷ এই মন্ত্রিসভা আরো বড় হবে কিনা – সে ব্যাপারে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে পরিষ্কার করে কিছু বলা হয়নি৷ তবে বিএনপি যোগ দিলে মন্ত্রিসভা বড় হতে পারে৷
নতুন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়ে জাতীয় পার্টি (এ) মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদার বলেছেন, সবার কাছে গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচন উপহার দেয়াই এই সরকারের প্রধান কাজ৷ বিএনপিকে নির্বাচনে আনার ব্যাপারে কোনো ভূমিকা রাখবেন কিনা – এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেছেন, বিএনপি আসলে অবশ্যই তাদের স্বাগত জানানো হবে৷ প্রধানমন্ত্রী নিজেই বলেছেন, এই নির্বাচনকালীন সরকার কোনো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেবে না৷ শুধুমাত্র দৈনন্দিন কাজ পরিচালনা করবে এবং সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশনকে সহযোগিতা করবে৷