1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বিএনপি নেতা-কর্মীদের মাঠে নামতে হাইকমান্ডের নির্দেশ

৩ ডিসেম্বর ২০২৩

কারাগারের বাইরে থাকা বিএনপি নেতা-কর্মীদের মাঠে নামার জন্য চাপে রেখেছেন শীর্ষ নেতৃত্ব। কৌশলগত কারণে বিএনপির কিছু নেতা আত্মগোপনে থাকায় তার প্রভাব পড়েছে সব পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের ওপর।

https://p.dw.com/p/4Zj1I
বিএনপির নবম দফা ৪৮ ঘণ্টা অবরোধের শুরুতে ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে ২৩০ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। (ফাইল ছবি)
বিএনপির নবম দফা ৪৮ ঘণ্টা অবরোধের শুরুতে ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে ২৩০ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। (ফাইল ছবি)ছবি: Mohammad Ponir Hossain/REUTERS

তাই বিএনপির অবরোধ-হরতালে কিছু ঝটিকা মিছিল ছাড়া বড় কোনো তৎপরতা দেখা যাচ্ছেনা। তাই বিভিন্ন ইস্যুতে তাদের মাঠে থাকতে বলা হয়েছে।

২৮ অক্টোবর  নয়াপল্টনেবিএনপির সমাবেশ পণ্ড ও সহিংসতার পরদিন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলসগীরকে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি নিম্ন আদালত থেকে জামিন পাননি। এখন জামিনের জন্য তার পক্ষে উচ্চ আদালতে আবেদন করা হয়েছে। আর এরইমধ্যে সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ও কয়েকজন নেতা ছাড়া শীর্ষ পর্যায়ের প্রায় সব নেতাই কারাগারে আছেন। রুহুল কবির রিজভি বিএনপির কর্মসূচি ঘোষণা করছেন অজ্ঞাত স্থান খেকে ভার্চুয়ালি।  মঝেমধ্যে তাকে ঢাকার আশপাশে হঠাৎ কোনো ঝটিকা মিছিলে নেতৃত্ব দিতে দেখা যায়। আর তার ভিডিও ফুটেজ বিএনপিই গণমাধ্যমে পাঠায়। দেশের বিভিন্ন স্থানে এরকম আরো কিছু ঝটিকা মিছিলের খবর ও ফুটেজ বিএনপির পক্ষ থেকে সংবাদমাধ্যমে পাঠানো হয়। এইসব মিছিল এতই স্বল্পজীবী হয় যে সংবাদ কর্মীরা এর নাগাল পান না। এর বাইরে বাসসহ যানবাহন পোড়ানোর খবর পাওয়া যায়। ফলে দিন দিন বিএনপির ডাকা অবরোধ হরতাল আবেদন হারাচ্ছে। তাই সপ্তাহ খানেক আগে বিএনপির কয়েকজন নেতা বিকল্প নতুন কর্মসূচির কথা বললেও এখানো তা দেখা যাচ্ছেনা।

কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে বিকল্প কর্মসূচি হিসেবে অসহযোগ আর ঢাকা অবরোধের কথা চিন্তা করা হলেও তা বাস্তবায়ন নিয়ে সংশয় থাকায় আপাতত তারা সেদিকে যাচ্ছেন না। তারা চাইছেন চলমান হরতাল অবরোধের কর্মসূচি চালিয়ে নিতে, এটা আরো জোরদার করতে । তার সঙ্গে সভা-সমাশের কর্মসূচিও দেয়া হবে। সভা-সমাবেশের  কর্মসূচির মূল  উদ্দেশ্য হলো কারাগারের বাইরে থাকা নেতা-কর্মীদের মাঠে নামানো।

২৮ অক্টোবর সমাবেশের পর গত ২৮ নভেম্বর বিএনপির শীর্ষ দুই নেতাকে মাঠের কর্মসূচিতে দেখা গেছে। ওই দিন সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে ইসলামী আন্দোলনের এক অনুষ্ঠানে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান উপস্থিত ছিলেন। একই সময়ে বিএনপির কারাবন্দি নেতাদের স্বজনদের উদ্যোগে জাতীয় প্রেসক্লাবের আয়োজিত মানববন্ধন কর্মসূচিতে প্রধান অতিথি ছিলেন স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য সেলিমা রহমান। ওই অনুষ্ঠানে জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাসও উপস্থিত ছিলেন। দুইটি অনুষ্ঠানেই বিএনপির মধ্যম সারির আরো অনেক নেতাকে দেখা গেছে।

আগামী ১০ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবসের কর্মসূচিতেও বিএনপিনেতারা অংশ নিতে চান। জানা গেছে ওই দিন নিখোঁজ ও গুম হওয়াদের স্বজনদের সংগঠন " মায়ের ডাকের” কর্মসূচিতে বিএনপি নেতারা উপস্থিত থাকবেন। বিএনপির আলাদা সমাবেশ বা মানববন্ধনের কর্মসূচির থাকবে। একই দিনে আওয়ামী লীগও ঢাকায় বায়তুল মোকাররম মসজিদেও দক্ষিণ গেটে সমাবেশ ডেকেছে। ফলে এক মাসেরও বেশি সময় পর বিএনপি ও আওয়ামী লীগ ফের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিতে যাচ্ছে।

বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য এবং ঢাকা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নিপুণ রায় চৌধুরী জানান," দলের হাইকমান্ড( তারেক রহমান) থেকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা যারা কারাগারের বাইরে আছেন তাদের সবাইকে দলের কর্মসূচি বাস্তবায়নে মাঠে থাকতে হবে। কৌশলগত কারণে নেতারা ৩০ নভেম্বর( মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন) পর্যন্ত আত্মগোপনে ছিলেন। কারণ তাদের ওপর নির্বাচনে অংশ নিতে সরকারের বিভিন্ন সংস্থা চাপ দিচ্ছিল। তাতে সরকার সফল হয়নি। এখন  দলের হাইকমান্ড সবাইকে মাঠে নামতে বলেছেন।''

''সমমনা সব দলকে একই মঞ্চে নিয়ে আসার কাজ চলছে''

তার কথায়, ''আপনারা দেখছেন আমি ১১টি মামলা  মাথায় নিয়ে মাঠে নেমেছি। আমাদের স্থায়ী কমিটির দুই সদস্যকেও আপনারা এরইমধ্যে মাঠে দেছেন। এখন সবাই নামবেন। সবার বিরুদ্ধে মামলা আছে। তারপরও গ্রেপ্তারের ঝুঁকি নিয়েই মাঠে নামতে বলা হয়েছে। আপনারা এখন দেখতে পাবেন আমরা সবাই মাঠে নেমে গেছি,” বলেন এই বিএনপি নেতা।

কর্মসূচির নতুন ধরন সম্পর্কে তিনি বলেন," দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান স্থায়ী কমিটির সদস্যদের সঙ্গে কথা বলছেন। প্রচলিত হরতাল অবরোধ রেখেই আরো নতুন কর্মসূচির চিন্তা হচ্ছে। আমরা ওই কর্মসূচির সঙ্গে সভা-সমাবেশের কর্মসূচিও দেবো।আমাদের এখন টার্গেট ৭ জানুয়ারির নির্বাচন। ওই নির্বাচন যাতে না হয়। এই সরকার পদত্যাগ করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে যাতে নির্বাচন দিতে বাধ্য হয় সেজন্য আন্দোলন আমরা আরো জোরদার করব।”

বিএনপি মনে করছে, সরকার নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপিকে ভাঙার ও যুগপৎ আন্দোলনে ভাঙন ধরানোর যে চেষ্টা করেছে তাতে সফল হয়নি। যারা নানা নামে দল করে বিএনপির কিছু লোককে ভাগানোর চেষ্টা করেছে তারাও ব্যর্থ হয়েছে। এতে দলের নেতা-কর্মীরা আরো চাঙ্গা হয়েছে বলে তারা মনে করেন। বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন," আমাদের চলমান আন্দোলন কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। এখন সমমনা সব দলকে একই মঞ্চে নিয়ে আসার কাজ চলছে। সবাই আমরা এক বিন্দুতে চলে আসব। আরো নতুন কর্মসূচি নিয়ে বিএনপির নীতিনির্ধারকরা সমমনা দলগুলোর সঙ্গে কথা বলছেন।”

'কেন্দ্রীয় নেতাদের কর্মসূচি বাস্তবায়নে মাঠে থাকতে হবে'

তার কথায়," বিএনপি জনগণের আকাঙ্ক্ষার দিকে খেয়াল রেখে নতুন কর্মসূচি দেবে।”

এদিকে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী রবিবার বিকেলে অজ্ঞাতস্থান থেকে এক ভার্চুয়াল বিবৃতিতে অভিযোগ করেছেন," বিএনপির নেতা-কর্মীরা গণহারে গ্রেপ্তার, বাড়ি বাড়ি তল্লাশি, আক্রমণ, হামলা, হত্যা ও জখমের এক ভয়ানক সহিংস পরিবেশের মধ্যে চরম ভয়-ভীতির মধ্যে দিন যাপন করছে।”

তিনি বলেন," সেখানে নির্বাচন কমিশন কিসের প্রশাসনিক রদবদল করছে? বিএনপি'র নেতাকর্মীরা যখন ঘর ছাড়া, এলাকা ছাড়া তখন কমিশনের পৃথিবীর সর্ব যুগের নিকৃষ্টতম নির্বাচনের তামাশার আয়োজনের প্রতি জনগণের মোটেও কোনো ভ্রূক্ষেপ নেই।”

তিনি জানান, বিএনপির নবম দফা ৪৮ ঘণ্টা অবরোধের শুরুতে ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে ২৩০ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ১০টি মামলা হয়েছে, ৫০ জন আহত এবং একজনের মৃত্যু হয়েছে।