৩৬ ঘণ্টার হরতালের ফাঁদে বাংলাদেশ
২২ সেপ্টেম্বর ২০১৪
সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের দাবিতে বিএনপি জোট এই হরতাল পালন করছে৷ এই সংশোধনীর মাধ্যমে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি এবং সাংবিধানিক পদে অধিষ্ঠিত ব্যক্তিদের অপরসারণ বা অভিশংসনের ক্ষমতা সংসদকে দেয়া হয়েছে৷ এর আগে বিচারপতিদের অভিশংসনের ক্ষমতা ছিল প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের হাতে৷
বিএনপি আগেই বলেছে, এই সংশোধনীর মাধ্যমে সরকার বিচারব্যবস্থাকে তাদের নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করছে৷ তাই এই আইন পাসের ফলে দেশে বিচারব্যবস্থা বলে কিছু থাকবে না৷
জানা গেছে, শনিবার অনেকটা আকস্মিকভাবেই বিএনপি এই হরতালের সিদ্ধান্ত নেয়৷ এর আগে তারা ঢাকাসহ সারাদেশে ষোড়শ সংশোধনীর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সমাবেশ করলেও, হরতালের পরিকল্পনা তাদের ছিল না৷ তবে সাম্প্রতিক সময়ে জোটে টানাপোড়েন এবং জোটে জামায়াতের অবস্থান বুঝতেই নাকি এই হরতাল দেয়া হয়েছে৷
বিশেষ করে জামায়াত নেতা মাওলানা দেলাওয়ার হোসেন সাঈদীর মৃত্যুদণ্ড কমিয়ে আমৃত্যু কারাদণ্ডের রায়ের পর, বিএনপিতে জামায়াত নিয়ে সন্দেহ প্রবল হয়৷ সোমবারের এই হরতালে জামায়াত কতটুকু সক্রিয়ভাবে অংশ নেয়, সেটা দেখতে চায় বিএনপি৷
উল্লেখ্য, ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনের পর বিএনপি জোট বর্তমান সরকারকে ‘অবৈধ সরকার' বলে অভিহিত করে৷ তারা সরকারের পতন এবং নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের জন্য কঠোর আন্দোলনের কথা বলে আসছিল নির্বাচনের পরদিন থেকেই৷ কিন্তু কিছু সভা-সমাবেশ ছাড়া তাদের আর তেমন কোনো কর্মসূচি দেখা যায়নি৷ কারণ দলীয় নেতারা মনে করেন, সরকার বিরোধী কঠোর আন্দোলনের জন্য সংগঠন পুরোপুরি প্রস্তুত নয়৷
দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অভিযোগ করেন, ‘‘সরকার হামলা আর মামলার মাধ্যমে, দলীয় নেতা-কর্মীদের বিচ্ছিন্ন করার ষড়যন্ত্র অব্যাহত রেখেছে৷'' রবিবার সন্ধ্যায় এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, হরতাল বানচাল করতে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিএনপির নেতা-কর্মীদের বাড়িতে অভিযান চালানো হচ্ছে৷ হরতালের আগে বিভিন্ন জেলা থেকে অন্তত ৪১ জন নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়৷
ঢাকা মহানগরে বিএনপির সদস্যসচিব হাবিব-উন-নবী খান বলেন, ‘‘বিএনপি শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে বিশ্বাসী৷ তাই দলের নেতা-কর্মীদের শান্তিপূর্ণভাবে মিছিল-সমাবেশ করা এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ‘উসকানিতে' পা না দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে৷''
তিনি বলেন, ‘‘বিএনপি জোট যে কোনো ধরণের অপ্রীতিকর অবস্থা এড়িয়ে চলতে চায়৷ এরপরও কোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি তৈরি হলে এর দায় সরকারকে নিতে হবে৷'' তিনি দাবি করেন, ‘‘যে কোনো ধরণের কর্মসূচি বাস্তবায়নের সক্ষমতা বিএনপি জোটের আছে৷ সময় এলেই সেই সক্ষমতা দেখা যাবে৷''
প্রসঙ্গত, এর আগে মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর আমৃত্যু কারাদণ্ডাদেশের প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার প্রথম দফায় ২৪ ঘণ্টার হরতাল কর্মসূচি পালন করে জাময়াত৷ দ্বিতীয় ২৪ ঘণ্টা হরতাল কর্মসূচি পালন করা হয় রবিবার সকাল ৬টা থেকে সোমবার সকাল ৬টা পর্যন্ত৷ এরপরই বিএনপি জোটের হরতাল শুরু হয়৷
বলা বাহুল্য, জামায়াতের ডাকা বৃহস্পতি ও রবিবারের ৪৮ ঘণ্টার হরতালের পর বিএনপি জোটের এই হরতালে রবিবার থেকে দেশ মূলত ৩৬ ঘণ্টার হরতালের ফাঁদে পড়ে গেছে৷