বায়ুদূষণের মূল কারণ কারখানা, পরিবহণ?
১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৬বিশাল মেগাসিটির উপর ধোঁয়াশার চাদর ছেয়ে গেলে বায়ুদূষণের কারণে সতর্কতা জারি করা হয়৷ এমন বায়ু শ্বাসপ্রশ্বাসের মাধ্যমে শরীরে ঢুকে মানুষকে অসুস্থ করে তোলে৷ গোটা বিশ্বে বায়ুদূষণের কারণে ৩০ লক্ষেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়৷ এর মধ্যে এশিয়ায় মৃতের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি৷ বিশেষ করে চীন ও ভারতে পার্টিকুলেটস বা ক্ষতিকারক ধুলিকণার কারণে অসংখ্য মানুষ কষ্ট পাচ্ছে৷ মাক্স প্লাংক ইনস্টিটিউট-এর কর্ণধার প্রো. ইয়োহানেস লেলিফেল্ড এ বিষয়ে বলেন, ‘‘প্রধানত ফুসফুসের রোগ হয়, তবে হৃদযন্ত্রের রোগও কম নয়৷ মানুষ শেষ পর্যন্ত হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকের কারণে মারা যায়৷ পরিসংখ্যান তাই বলে৷ তবে কণা অতি ক্ষুদ্র হলে সেগুলি রক্তেও ঢুকে যেতে পারে৷ সেগুলি টক্সিক হওয়ায় ফুসফুসের মধ্যে টক্সিক পদার্থ ঢুকিয়ে দেয়৷ তখন তার কুপ্রভাব টের পাওয়া যায়৷''
পার্টিকুলেটস সরাসরি হৃদযন্ত্রের ক্ষতি করে৷ বায়ুদূষণের মোকাবিলা না করলে ২০৫০ সাল নাগাদ বছরে ৬০ লক্ষেরও বেশি মানুষ এই কারণে মারা যাবে৷
জার্মানির মাইনৎস শহরে মাক্স প্লাংক ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীদের হিসেব অনুযায়ী এমন ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে চলেছে৷ ঠিক কত সংখ্যক মানুষ বাতাসে পার্টিকুলেটস, ওজোন এবং নাইট্রোজেন অক্সাইডের কারণে অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং মারা যান, ইয়োহানেস লেলিফেল্ড-এর নেতৃত্বে এক টিম তা খতিয়ে দেখেছে৷ প্রো. লেলিফেল্ড বলেন, ‘‘যারা পার্টিকুলেটস ও বায়ুদূষণের শিকার হন, তাদের মধ্যে বেশিরভাগই এশিয়ায় থাকেন৷ তার একটা কারণ অবশ্যই দূষিত বায়ু৷ তাছাড়া বড় বড় ঘনবসতিপূর্ণ শহরে দীর্ঘ সময় ধরে অনেক মানুষের শ্বাসপ্রশ্বাসে পার্টিকুলেটস ঢুকছে৷ ফলে রোগব্যাধি ও অকালমৃত্যুও বাড়ছে৷ শুধু চীনেই বছরে প্রায় ১৪ লক্ষ মানুষের অকালমৃত্যু ঘটছে৷ ভারতে সংখ্যাটা প্রায় ৭ লক্ষ৷ সংখ্যাটা সত্যি খুব বেশি৷''
নিজস্ব পরিমাপের পাশাপাশি স্যাটেলাইট থেকে পাওয়া জলবায়ু সংক্রান্ত তথ্যের ভিত্তিতে বিজ্ঞানীরা এই বিশ্লেষণ করেছেন৷ এই সব তথ্য সমন্বয় করে তাঁরা একদিকে সারা পৃথিবীতে ক্ষতিকারক পদার্থের বণ্টন, অন্যদিকে মৃত্যুর হার তুলনা করে এক কম্পিউটার সিমুলেশন সৃষ্টি করেছেন৷ তাতে দেখা যাচ্ছে, বিশেষ ক্ষতিকারক পদার্থের মিশ্রণের কারণে মানুষ সত্যি মারা যাচ্ছে৷
তবে গবেষকরা সবচেয়ে অবাক হয়েছেন এটা জানতে পেরে, যে শহরাঞ্চলে পরিবহণ ও শিল্পক্ষেত্রে ধোঁয়া বায়ুদূষণের মূল কারণ নয়৷ প্রো. ইয়োহানেস লেলিফেল্ড বলেন, ‘‘এশিয়ায় রান্নাবান্না ও ঘর গরম করার জন্য ছোট করে আগুন জ্বালানো হয়৷ ফলে অনেক ধোঁয়া বের হয়৷ অনেক মানুষ এমন আগুন জ্বালালে ধোঁয়ার পরিমাণও বেশি হয়৷ বিশেষ করে ভারত, বাংলাদেশ সহ দক্ষিণ এশিয়ায় এমন আগুন বায়ুদূষণের প্রধান কারণ৷''
এশিয়ার বাতাসে পার্টিকুলেটস-এর মূল উৎস এমন আগুন৷ ডিজেল জেনারেটর, কয়লার ছোট চুলা এবং জ্বলন্ত কাঠ থেকে অতি ক্ষুদ্র কণা বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে৷ চীনে পার্টিকুলেটস-এর এক-তৃতীয়াংশ আসে এই উৎস থেকে৷ ইন্দোনেশিয়া ও ভারতের ক্ষেত্রে সেই মাত্রা ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ৷
বিস্ময়কর মনে হলেও গোটা বিশ্বে পার্টিকুলেটস-এর দ্বিতীয় বৃহত্তম উৎস হলো কৃষিক্ষেত্র৷ ইউরোপ, জাপান ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে সারের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার ও বড় আকারে পশুপালনের ফলে বিশাল পরিমাণ অ্যামোনিয়া সৃষ্টি হয় এবং বায়ুমণ্ডলে ছড়িয়ে পড়ে৷ পার্টিকুলেটস আদৌ সৃষ্টি হবার পেছনে অ্যামোনিয়ার বিশেষ অবদান রয়েছে৷
অর্থাৎ শিল্প ও পরিবহণ ক্ষেত্র মূল অভিযুক্ত নয়৷ তাই এই সমস্যার মোকাবিলা করতে নতুন কৌশলের প্রয়োজন৷ প্রো. লেলিফেল্ড বলেন, ‘‘ইউরোপে কৃষিক্ষেত্রে কার্বন নির্গমন কমানোর চেষ্টা করতে হবে৷ বড় আকারে গবাদি পশুপালনের বিষয়ে কিছু একটা করতে হবে৷ অন্যদিকে এশিয়ায় মানুষের নাগালে এমন প্রযুক্তি পৌঁছে দিতে হবে, যাতে তারা ধোঁয়া ছাড়াই রান্না এবং ঘর গরম রাখতে পারে৷ এমন প্রযুক্তি রয়েছে এবং তা মোটেই দামি নয়৷''
এই কাজে সফল না হলে ২০৫০ সালে গোটা বিশ্বে বায়ুদূষণের ফলে ৬০ লক্ষেরও বেশি মানুষের অকালমৃত্যু ঘটবে৷ শুধু এশিয়ায় ৪০ লক্ষ মানুষের মৃত্যু ঘটতে পারে৷