বায়ার লেভারকুজেন : অবশেষে ‘নেভারকুজেন’ দুর্নাম মুছে চ্যাম্পিয়ন
দলটার নাম লেভারকুজেন৷ তবে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার আশা জাগিয়ে বারবার রানার্সআপ হয় বলে তাদের অন্য নাম হয়ে গিয়েছিল ‘নেভারকুজেন’৷ ৩১ বছরের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে বুন্ডেসলিগা জিতেছে তারা৷ ছবিঘরে বিস্তারিত....
বুন্ডেসলিগায় প্রথম বায়ার্ন মিউখ বনাম বায়ার লেভারকুজেন
বায়ার লেভারকুজেনের জন্ম ১৯০৪ সালে৷ তবে তখন ছিল শুধু শ্রমিকদের স্পোর্টস ক্লাব৷ তখনকার ফার্বেনফাব্রিক ফরমালস ফ্রিডরিশ বায়ার কো. লেভারকুজেন পরে ঔষধ শিল্প জগতের ‘জায়ান্ট’ বায়ার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে৷ ফুটবল ক্লাব হিসেবে লেভারকুজেন বুন্ডেসলিগা খেলার সুযোগ পায় ১৯৭৯ সালে৷ সে বছর ঘরোয়া লিগের সর্বোচ্চ আসরের প্রথম সাক্ষাতে অবশ্য বায়ার্ন মিউনিখের কাছে ৩-১ গোলে হেরেছিল তারা৷
উয়েফা কাপে সেই অবিস্মরণীয় ঘুরে দাঁড়ানো
তখন উয়েফা কাপ ফাইনাল হতো দুই পর্বে৷ প্রথম আর দ্বিতীয় লেগ মিলিয়ে যে দল জিততো তাদের ঘরে যেতো শিরোপা৷ ১৯৮৮-তে বার্সেলোনায় এসপানিওলের কাছে ৩-০ গোলে হেরে যায় লেভারকুজেন৷নিজেদের মাঠে ফিরতি ম্যাচটায় স্পেনের ক্লাবের কঠিন প্রতিরোধ পরাজয়ের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গিয়েছিল লেভারকুজেনকে৷ তবে দ্বিতীয়ার্ধে শুধু তিন গোল পরিশোধই নয়, গোলরক্ষক রুডিগার ফোলবর্নকের দৃঢ়তায় টাইব্রেকারে (৩-২) জয়ও ছিনিয়ে নেয় তারা৷
জার্মান কাপ জয
উয়েফা কাপ জয়ের পাঁচ বছর পর জার্মান কাপে চূড়ান্ত সাফল্যের দেখা পায় লেভারকুজেন৷ ১৯৯৩-র সেই ফাইনালে প্রতিপক্ষ ছিল হ্যার্থা বার্লিন৷ উলফ কির্স্টেনের (ছবিতে ডানদিকে) একমাত্র গোলে বার্লিনের ক্লাবটিকে হতাশায় ডোবায় লেভারকুজেন৷
রানার্স আপ-কুজেন থেকে নেভারকুজেন
১৯৯০-এর দশকের শেষদিকে কোচ ডাউমের হাতে চ্যাম্পিয়ন ক্লাবের মতো হয়ে ওঠে লেভারকুজেন৷তাই ১৯৯৭ সালে বুন্ডেসলিগায় রানার্সআপ৷ পরের বছর আবার চ্যাম্পিয়ন হবার আশা উজ্জ্বল করে রানার্সআপ৷ সমালোচকরা বলতে শুরু করেন এই ক্লাব আসলে ভাইসকুজেন, অর্থাৎ ‘রানার্স আপ-কুজেন’৷তারপরও চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি হাতে আসেনি তাদের৷ ২০০০ সালে চার বছরে তৃতীয় বছরের মতো দ্বিতীয়সেরা হওয়ায় তাই অনেকের কাছে লেভারকুজেন হয়ে যায় ‘নেভারকুজেন’৷
বালাকের আত্মঘাতী গোল
১৯৯৯-২০০০ মৌসুমে বুন্ডেসলিগা শিরোপাটা আবার বায়ার্নের হাতে তুলে দেয়ার কথা লেভারকুজেন সমর্থকরা কোনোদিনই ভুলতে পারবেন না৷ এক ম্যাচ বাকি, বায়ার্নের চেয়ে তার দল তখনো তিন পয়েন্টে এগিয়ে- কোচ ডাউম শেষ ম্যাচে এক পয়েন্ট পেয়ে চ্যাম্পিয়ন হওযা কোনো ব্যাপারই নয় ভেবে বলেছিলেন, ‘‘আমাদের কেউ থামাতে পারবে না৷’’ শেষ ম্যাচে ০-১ গোলে পিছিয়ে থাকা দলের সব আশা শেষ করে দেয় মিশায়েল বালাকের আত্মঘাতী গোল৷
ট্রেবল হাতছাড়ার বছর
লেভারকুজেনের নামে ‘নেভারকুজেন’ ছাপ প্রায় স্থায়ী হয়ে যায় ২০০২ সালে৷ একটা দল প্রথমে শেষদিকের ম্যাচগুলোতে অভাবনীয় ব্যর্থতায় সেই বায়ার্নের জন্যই চ্যাম্পিয়ন হবার পথ সুগম করে দিলেও শিরোপাখরা কাটানোর আরেকটা সুযোগ পেয়েছির জার্মান কাপে৷ কিন্তু সেখানেও ফাইনালে শালকের কাছে হেরে যায় তারা৷ব্যর্থতা সেখানে শেষ হলেও হয়ত শেষ রক্ষা হতো৷ কিন্তু লেভারকুজেন এমন সুযোগ হাতছাড়া করে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে!
জিদানের রেয়ালের কাছে হার
২০০২-এর চ্যাম্পিয়ন্স লিগে গ্লাসগোয় চমৎকার খেলছিল লেভারকুজেন৷ কিন্তু জিনেদিন জিদানের বিখ্যাত ভলিতে শেষ পর্যন্ত ২-১ গোলে জিতে যায় রেয়াল মাদ্রিদ৷ লেভারকুজেনের সেদিনের পাঁচ খেলোয়াড় বিশ্বকাপেও টেনে নিয়েছিলেন সেই রানার্সআপ-ভাগ্য৷ ব্রাজিলের কাছে হেরে যাওয়া জার্মান দলের সদস্য ছিলেন তারা৷ সেই জার্মান দলের কোচ ছিলেন রুডি ফ্যোলার৷ ফ্যোলারও কিন্তু এক সময়ের লেভারকুজেন তারকা!
সাত বছর পরও ব্যর্থ
লেভারকুজেন আবার বুন্ডেসলিগা জেতার সুযোগ পায় ২০০৯ সালে৷ কিন্তু সেবারও হেরে যায় ভ্যার্ডার ব্রেমেনের কাছে৷ব্রেমেনের হয়ে জয়সূচক গোলটি করেছিলেন মেসুট ও্যজিল৷
স্বপ্নের শুরু, দুঃস্বপ্নের শেষ
২০১১-র মৌসুমটা তখনকার রেকর্ড সর্বোচ্চ ২৪ ম্যাচ অপরাজিত থেকে শুরু করেছিল লেভারকুজেন৷ তারপর এমন ব্যর্থতার শুরু যে শেষপর্যন্ত রানার্সআপ হয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়৷ সেবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল বরুসিয়া ডর্টমুন্ড৷
ট্রেবলজয়ী বায়ার্নের সঙ্গে হার
২০২০ সালে লেভারকুজেন আরেকবার বুন্ডেসলিগা রানার্সআপ হয় বায়ার্ন মিউনিখের কাছে ৪-২ গোলে হেরে৷ করোনার কারণে বার্লিনের অলিম্পিক স্টেডিয়ামে ফাঁকা গ্যালারির সামনে অনুষ্ঠিত সেই ম্যাচে ট্রেবলজয়ী বায়ার্নের সামনে প্রথমার্ধে আসলে দাঁড়াতেই পারেনি লেভারকুজেন৷