1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বালাকোটে মৃত্যুর কথা স্বীকার সাবেক পাক কূটনীতিকের

১১ জানুয়ারি ২০২১

ভারতের সার্জিক্যাল স্ট্রাইকে মারা গেছিল ৩০০ জঙ্গি, স্বীকার করলেন পাকিস্তানের সাবেক কূটনীতিক। যা নিয়ে শুরু হয়েছে আলোড়ন।

https://p.dw.com/p/3nltP
Gebäude in Madrasa Pakistan nach Bombardement durch Indien
বালাকোটে ভারতীয় বিমান বাহিনী যেখানে আক্রমণ করে, তার কাছে একটি মাদ্রাসার ছবি।ছবি: Reuters/A. Shahzad

২০১৯-এর ১৬ ফেব্রুয়ারি। ভারত দাবি করে, পাকিস্তানের বালাকোটে বিমান হানা চালিয়ে জঙ্গি প্রশিক্ষণ শিবিরে আঘাত হানা হয়েছে। প্রচুর জৈশ জঙ্গির মৃত্যু হয়েছে। দুই দিন আগে পুলওয়ামায় সিআরপিএফ কনভয়ে জৈশের হানায় ৪০ জন জওয়ানের মৃত্যুর জবাবেই এই বিমানহানা। পাকিস্তান প্রথমে সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের কথা অস্বীকার করে। পরে তারা জানায়, সেই হানায় কেউ মারা যায়নি। কিন্তু এখন পাকিস্তানের সাবেক কূটনীতিক আঘা হিলালি সে দেশের একটি চ্যানেলে জানিয়েছেন, অন্তত ৩০০ জনের মৃত্যু হয়েছিল ওই বিমানহানায়।

আঘা হিলালি বলেছেন, ''ভারত আন্তর্জাতিক সীমান্ত পেরিয়ে বিমানহানা চালায়। সেটা যুদ্ধের মতো ঘটনা। তাতে অন্তত ৩০০ জন মারা যান। কিন্তু আমাদের টার্গেট ছিল আলাদা। আমরা ওদের হাইকম্যান্ডকে টার্গেট করেছিলাম। সেটা ছিল ন্যায্য টার্গেট। কারণ, ওরা ছিল সেনাবাহিনীর সদস্য।'' তাঁর দাবি, ''সার্জিক্যাল স্ট্রাইকে যে কেউ হতাহত হবে না, সেটা অবচেতন মনে স্বীকার করেছিলাম। এখন নিজেকে বুঝিয়ে দিয়েছি, ওরা যতটুকু করবে, প্রতিক্রিয়ায় আমরাও ততটুকুই করব। তার বেশি নয়।''

এতদিন পর এই স্বীকৃতির মূল্য কতটা? প্রবীণ সাংবাদিক শরদ গুপ্তার মতে, ''ভারতের দাবি যে সত্য সেটা নিঃসন্দেহে প্রমাণিত হলো। এর বাইরে এই স্বীকারোক্তির এখন বিশেষ মূল্য নেই। কারণ, ভারতের কাছে এটা এখন ডেড ইস্যু।'' ডিডাব্লিউকে শরদ বলেন, ''২০১৯-এর ভোটে সার্জিক্যাল স্ট্রাইক নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করার জন্য নরেন্দ্র মোদী তথা বিজেপি নেতারা কংগ্রেস সহ বিরোধী দলের প্রবল সমালোচনা করেছেন। তার ফলও তারা ভোটে পেয়েছেন। এখন তাই এই বিষয়টি নিয়ে বিজেপি-ও হইচই করছে না।''

তবে ঘটনা হলো, ভারতের বিদেশ মন্ত্রক এই মন্তব্য নিয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া দেয়নি। মোদী সরকারের তরফ থেকেও কোনো প্রতিক্রিয়া নেই। প্রবীণ সাংবাদিক সৌম্য বন্দ্যোপাধ্যায় ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, ''আমার রীতিমতো অবাক লাগছে। ভারত সরকার কেন এটাকে হাতিয়ার করলো না? প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, প্রতিরক্ষামন্ত্রী, যে দাবি করেছিলেন, সেনা যা বলেছিল, তা পাকিস্তানের সাবেক কূটনীতিক স্বীকার করে নেয়ার পরেও সকলে চুপ। আমি খুবই অবাক।''

ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে কি শুধুই কাশ্মীর?

আরেকটি প্রশ্নও বিশেষজ্ঞরা তুলছেন। সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের মাস পনেরো পরে কেন হঠাৎ পাকিস্তানের সাবেক কূটনীতিক ৩০০ জন মারা যাওয়ার কথা স্বীকার করলেন? সৌম্যর বক্তব্য, ''কোনো সন্দেহ নেই পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান চাপে আছেন. মাসুদ আজহার, হাফিজ সঈদদের নিয়ে আন্তর্জাতিক চাপ বাড়ছে। নিষেধাজ্ঞার খাঁড়া ঝুলছে। তার থেকে বাঁচার জন্য পাকিস্তান মাঝেমধ্যে কিছু সিদ্ধান্ত নেয়, কিন্তু তা কার্যকর করে না। এটাও কি সেরকম কোনো স্বীকারোক্তি?'' তবে সৌম্যর মতে,  ''এর পিছনে পাকিস্তানের ঘরোয়া রাজনীতি থাকতেই পারে। কিন্তু এতদিন পরে তিনি কেন সোচ্চার হলেন, সেটাও অবাক করার মতো ঘটনা।''

গত বছর অক্টোবরে নওয়াজ শরিফের পার্টির নেতা আয়াজ সাদিক ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে বলেছিলেন, পাকিস্তানের হাতে ধরা পড়া ভারতীয় বিমান বাহিনীর সদস্য অভিনন্দনকে রাত নয়টার মধ্যে না ছাড়লে ভারত যুদ্ধ করবে বলে হুমকি দিয়েছিল। তা শুনেই পাক সেনা প্রধানের পা কাঁপতে থাকে। তাঁর দাবি, পাক পররাষ্ট্রমন্ত্রী কুরেশি একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে জানিয়েছিলেন, ভারত বলেছিল, অভিনন্দনকে না ছাড়লে তারা যুদ্ধঘোষণা করবে। কিন্তু তখনো বালাকোট নিয়ে পাক বিরোধী দলের নেতারা কোনো মন্তব্য করেননি। আর এখন মন্তব্য করেছেন এক সাবেক কূটনীতিক। তাই তাঁর এই স্বীকীরোক্তি নিয়ে নানা প্রশ্ন আছে বলে বিশেষজ্ঞদের মত।

জিএইচ/এসজি(পিটিআই, এএনআই)