বার্লিনে ২৪ ঘণ্টায় যা ঘটলো
২৪ ঘণ্টায় বার্লিনের রাস্তায় কী কী ঘটতে পারে? ডয়চে ভেলের কার্ল নাসমান সেটা জানতেই পুরো একটা দিন, মানে এক মধ্যরাত থেকে পরের মধ্যরাত অবধি ছবি তুলেছেন৷ চলুন তাঁর চোখে দেখে নেই ২৪ ঘণ্টার বার্লিন৷
রাত ৩:০৩ – নিশীথের দোকানদার
গোয়েন্দাগিরি এবং নজরদারির অতীত ইতিহাস থাকায় জার্মানরা সাধারণত অপরিচিত কাউকে তাঁদের ছবি তোলার বিষয়ে সায় দেয় না৷ বার্লিনের ভারশাওয়ার ব্র্যুকে নাইটক্লাব এলাকার এই দোকানদারও শুরুতে আপত্তি করেছিলেন৷ পরে অবশ্য আশ্বস্ত হয়ে ঠিকই তিনি ছবি তোলার অনুমতি দেন৷ তবে শুধু একটি৷
ভোর ৫:০০ – যমজ ঘুমারু
মধ্যরাতে ছবি তোলা শুরুর করার পর, ভোরের দিকে এঁদের বার্লিনের লোকাল ট্রেনের মধ্যে ঘুমাতে দেখে দু’জনের পরিস্থিতি বুঝতে একটুও কষ্ট হয়নি৷ তবে ডানদিকের মানুষটির ভদ্রতা জ্ঞান মুগ্ধ করার মতো৷ সামনের আসন পরিষ্কার রাখতে জুতা খুলে সেখানে পা রেখেছেন তিনি৷ অবশ্য বার্লিনের এই বাসিন্দা ঘুমালেও, অনেকেই কিন্তু এখনো সজাগ এবং পার্টি মুডে আছেন৷
সকাল ৬:০৭ – ব্যার্গহাইন
ব্যার্গহাইন হচ্ছে বার্লিনের সবচেয়ে ঐতিহ্যবাহী নাইটক্লাব এবং বিশ্বের অন্যতম সেরা ক্লাবগুলোর একটি৷ সাবেক একটি পাওয়ার প্লান্টের মধ্যে অবস্থিত এই ক্লাবের ইলেক্ট্রিক মিউজিক এবং উচ্চমানের সাউন্ড সিস্টেম পার্টিপ্রেমীদের সকাল পর্যন্ত ডান্স ফ্লোরে আটকে রাখে৷ অধিকাংশ সময় ক্লাবের গেটে থাকে লম্বা ভিড়৷ তবে আজ মনে হয় ভাগ্য আমার প্রসন্ন৷
সকাল ৯:১৯ – জীবন্ত মূর্তি
নাইটক্লাব ছেড়ে বার্লিনের পর্যটন কেন্দ্র: পৎসডামার প্লাৎস, ব্রান্ডেনবুর্গ গেট এবং রাইশটাগের দিকে অগ্রসর হলাম৷ ইচ্ছে ছিল সকালের দিকে পর্যটকরা কী করেন, সেটা দেখার৷ পার্কে এই দুই ‘জীবন্ত মূর্তির’ দেখা মেলে৷ পর্যটকদের আকর্ষণ করতে বসে ছিলেন তাঁরা৷ পঞ্চাশ সেন্ট দিয়ে ছবিটি তোলার সুযোগ হয়৷
দুপুর ১১:০২ – কেন্দ্রীয় ট্রেন স্টেশন
ততক্ষণে পায়ে ব্যথা শুরু হয়ে গেছে আমার৷ জেগে থাকতে কফির প্রয়োজনীয়তাও অনুভব করছিলাম৷ আশার কথা হচ্ছে, বার্লিনে কেন্দ্রীয় ট্রেন স্টেশন কাছেই ছিল৷ ফটোগ্রাফারদের স্বর্গ হিসেবে বিবেচিত স্টেশনে কফিতে চুমুক দেয়ার ফাঁকে ট্রেনের জন্য অপেক্ষারত এই দম্পতির সন্ধান পাই আমি৷ তবে এরকম ধীরে-সুস্থে ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করা যাত্রী কমই দেখা যায় এই স্টেশনে৷ অধিকাংশ সময় যাত্রীরা দৌড়ের ওপর থাকেন৷
দুপুর ১:৩২ – মা-মেয়ের অ্যাডভেঞ্চার
স্বীকার করছি, এখানে ছবি তোলার পরিকল্পনা আমার আগেই ছিল৷ পশ্চিম বার্লিনের এক্সপো সেন্টারের কাছে পথচারিদের চলাচলের লম্বা এই জায়গাটা ছবি তোলার জন্য আদর্শ৷ বেশিক্ষণ অপেক্ষাও করতে হয়নি৷ ছবির ফ্রেমের হঠাৎ হাজির হন এই মা-মেয়ে জুটি৷ দেখেই বোঝা যাচ্ছে কোন অ্যাডভেঞ্চারের পথে রয়েছেন তাঁরা৷
বিকেল ৫:৩৯ – মাংস পোড়ানোর সময়
বলতে কি এটা ছিল বার্লিনে চলতি বছরের প্রথম গরম দিন৷ আর গ্রীষ্মের শুরুতে বার্লিন ধূসর এবং বিষণ্ণভাব ছেড়ে প্রাণোচ্ছল হয়ে ওঠে৷ ফ্রিডরিশাইনের ফল্কসপার্ক বিকেল নাগাদ কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়৷ হিপস্টারদের গিটার বাজানো, শিক্ষার্থীদের বিয়ার পান আর বন্ধুদের মাংস পুড়িয়ে খাওয়া মানে গ্রিলিং – সবই চলছিল সেখানে৷
সন্ধ্যা ৬:৫১ – স্বাধীনতা
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নিহত পোলিশ সেনা এবং জার্মান ‘রেজিসটেন্স’ যোদ্ধাদের স্মরণে তৈরি মেমোরিয়ালের সিড়িতে এই স্কেটারদের দেখা মেলে৷ ডানির কয়েকটি ছবি তুলেছি আমি, যে ইংল্যান্ড থেকে বার্লিনে ঘুরতে এসেছে৷ সে আসলে মেধাবী স্কেটবোর্ডার আর ছবির পেছনে লেখা ‘....আমাদের স্বাধীনতা’ তাঁর অ্যাকশনের সঙ্গে বেশ মানিয়ে গেছে৷
রাত ৮:৩০ – পরিবার
বার্লিনের পাতালরেলে ফিরে এসেছি৷ আসলে মাটির নীচের এই রেল ব্যবস্থা না থাকলে একদিনে এতটা পথ পাড়ি দেওয়া আমার পক্ষে সম্ভব হতো না৷ ইউএইট লাইনে আমি ট্রেনের এক বগিতে উঠি যেখানে আরো ৫০ জনের মতো ছিল৷ দেখে মনে হচ্ছিল তাঁদের মধ্যে অনেকেই একে অপরের আত্মীয়৷ যেমন এই বাচ্চা মেয়েটি তার পরিবারের অন্য দুই সদস্যের মাঝখানে কোনোরকমে বসে আছে৷
রাত ৯:৪৫ – ভেগবিয়ার
জার্মানিতে রাস্তায় মদ্যপান বৈধ৷ সপ্তাহান্তে তাই যাঁরা কিছুটা পয়সা সাশ্রয় করতে চান, তাঁরা রাস্তায় বেশি দামে বিয়ার কেনার বদলে রাস্তায় পানের জন্য ঘর থেকেই একটা বিয়ার নিয়ে বের হন৷ তবে এর ফলে আপনি যতটা ভাবছেন ততটা বিশৃঙ্খলা তৈরি না হলেও রবিবার সকালে বার্লিনের রাস্তাঘাটাতে কয়েকহাজার খালি বোতল পড়ে থাকা অস্বাভাবিক কোনো ব্যাপার নয়৷
রাত ১২:১৯ – ফটোবুথ
পরেরদিনে মধ্যরাতে পৌঁছে গেছি৷ অর্থাৎ আমার ২৪ ঘণ্টা ছবি তোলার প্রকল্পের ক্ষান্ত দেয়ার সময় হয়ে গেছে৷ কটবুসার টোরে আমি আমি আমার অ্যাডভেঞ্চারের সমাপ্তি টানছি৷ কাঁকরময় এই গোলচত্বরটি পানশালা, রেস্তোরাঁ আর ফলের মার্কেটে ঠাসা৷ ভালো কথা, বার্লিনের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে আছে এরকম অসংখ্য ফটোবুথ, বিশেষ করে সেসব স্থানে যেখানকার ছবি আমি তোলার চেষ্টা করেছি৷