1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

এফডি সমর্থক ও বিরোধীদের সমাবেশ

২৮ মে ২০১৮

জার্মানির রাজধানী বার্লিনে উগ্র দক্ষিণপন্থি পপুলিস্ট এএফডি দলের একটি গণসমাবেশ রুখতে পথে নামেন বিরোধীরা৷ পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ হলেও, ২,০০০ পুলিশ তা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পেরেছে৷

https://p.dw.com/p/2yRM4
ছবি: Reuters/H. Hanschke

রবিবার বার্লিনের ব্রান্ডেনবুর্গ তোরণ যেন আবার দুই জার্মানির মধ্যে বিভাজন রেখা হয়ে দাঁড়ায়৷ একদিকে অভিবাসন ও ইইউবিরোধী ‘জার্মানির জন্য বিকল্প’ বা এএফডি দলের প্রায় ৫,০০০ সমর্থক৷ ওই বিক্ষোভ সমাবেশের উদ্দেশ্য ছিল বিশেষ করে চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলের উদ্বাস্তুদের স্বাগত জানানোর নীতির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ প্রদর্শন৷

ব্রান্ডেনবুর্গ তোরণের অপরদিকে ও কাছের টিয়ারগার্টেন পার্ক ভরে দেন ২০,০০০-এর বেশি এএফডি-বিরোধী৷ তাঁদের উদ্দেশ্য, বহিরাগতবিদ্বেষ ও জাতিবাদের মাধ্যমে জার্মানির অতীতের অন্ধকার দিনগুলিতে প্রত্যাবর্তনের প্রবণতার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো৷

দু'হাজার পুলিশ মাঝে থাকার ফলে পপুলিস্টরা যেমন তাঁদের ব়্যালি অনুষ্ঠান করতে পেরেছেন, তেমন দেশের ও বিদেশের সংবাদদাতারা উদ্বাস্তু প্রসঙ্গে দ্বিধাবিভক্ত জার্মানির আবহাওয়ার একটা আঁচ ও আভাস দিতে পেরেছেন৷

উদ্বাস্তুদের আগমনে যারা বিপন্ন বোধ করছেন

এএফডি সমর্থকরা বার্লিনের কেন্দ্রীয় রেলওয়ে স্টেশন থেকে ১,৩০০ মিটার পায়ে হেঁটে ব্রান্ডেনবুর্গ তোরণে পৌঁছান৷ তাঁদের সাজপোশাক অথবা হাতের শালুতে উগ্র দক্ষিণপন্থি সুলভ বিশেষ কিছু ছিল না৷ দৃশ্যত এরা এএফডির মধ্যবিত্ত মুখাবয়ব, যারা নিজেদের খেটে খাওয়া মানুষ ও করদাতা হিসেবে গণ্য করেন এবং ‘মাল্টিকালচারাল’ জার্মানিতে বিশেষ স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন না – কাজেই সরকার তাঁদের স্বার্থরক্ষার কোনো প্রচেষ্টা করছেন না বলে তাঁদের অভিযোগ৷

এএফডি সমর্থকরা যেসব ধ্বনি দিচ্ছিলেন, তার উপজীব্য ছিল বিদেশি-বহিরাগতদের আগমন নিয়ে দুশ্চিন্তা, উপরমহলের ক্ষমতা ও প্রভাবশালীদের সুযোগ-সুবিধা সম্পর্কে বিপুল সন্দেহ ও বিরাগ এবং সেই সঙ্গে দেশপ্রেম৷

ব়্যালিতে প্রথম দিকের বক্তাদের মধ্যে ছিলেন ২১ বছর বয়সের মারি টেরেজে কাইজার, যিনি ট্রেনে আরব ভাষাভাষী অভিবাসীদের উপস্থিতিতে তাঁর নিজের অস্বস্তির কথা বলেন৷ তিনি নিজে নাকি অত্যন্ত অসহায় বোধ করছিলেন – যার পর মারি টেরেজে উদ্বাস্তুদের দ্বারা ধর্ষিত বলে বর্ণিত জার্মান মহিলাদের নামের তালিকা পেশ করেন৷

অপরদিকে মারি টেরেজে বলেন যে, ট্রেনে যেসব আরবভাষী পুরুষ ছিলেন, তাদের সম্ভবত তাঁকে ভয় দেখানোর কোনো অভিপ্রায় ছিল না৷ এমনকি তাঁর নিজের বেস্টফ্রেন্ড একজন তুর্কি বলে মারি টেরেজে বর্ণনা করেন৷

মারি টেরেজে অথবা অপরাপর বক্তাদের বক্তব্যে পরস্পরবিরোধিতা নিয়ে আলোচনার স্থান এই গণসমাবেশে ছিল না এবং থাকবার কথাও নয়৷ শ্রোতারা জার্মানির ‘‘বর্তমান ভীতিকর পরিস্থিতি’’ নিয়েই ব্যস্ত থাকেন ও পূর্বাপর ম্যার্কেলের পদত্যাগ দাবি করেন৷ তাঁরা চান যে, অবাঞ্ছিত বিদেশিদের জন্য জার্মানির সীমান্ত বন্ধ করে দেওয়া হোক ও আইনের শাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা হোক৷

পুলিশের সর্বাধুনিক পরিসংখ্যান থেকে দেখা যাচ্ছে যে, জার্মানিতে অপরাধের সংখ্যা কমতির দিকে, কিন্তু বার্লিনে জমায়েত এএফডি সমর্থকদের সেদিকে নজর দেবার সময় বা প্রবৃত্তি, দু'টোর কোনোটাই ছিল না৷ তাঁরা যে বিপন্ন বোধ করছেন, সেটাই ছিল তাঁদের কাছে বড় কথা৷

নাগরিক আন্দোলন

এএফডির আত্মদর্শনের একটি মূল উপাদান হলো, নিজেদের শুধু রাজনৈতিক দল হিসেবে নয়, বরং সেই সঙ্গে একটি গণআন্দোলন হিসেবে গণ্য করা৷ এক্ষেত্রে তাদের বার্তা ও আবেদনের কেন্দ্রে রয়েছে ‘এলিট’ বা উপরমহলের সুবিধাভোগী কর্তাব্যক্তি ও প্রভাবশালী গোষ্ঠীগুলির প্রতি বিরূপতা৷

এএফডি সমর্থকদের মধ্যে একটি পরিবর্তন এবার লক্ষ্য করা গেছে যে, মিডিয়াকে তাঁরা সাধারণত নাৎসি আমলের একটি শব্দ ব্যবহার করে ‘ল্যুগেনপ্রেসে’ বা ‘মিথ্যাবাদী মিডিয়া’ বলে বর্ণনা করে থাকেন, এবার বার্লিনে কিন্তু এএফডি বিক্ষোভকারীরা বস্তুত মিডিয়া ও সংবাদদাতাদের সঙ্গে যোগাযোগ ও বার্তালাপের সুযোগ খুঁজেছেন৷

বিরোধীপক্ষ

এএফডি সমর্থকরা যখন বার্লিনের মুখ্য রেলওয়ে স্টেশন থেকে বেরোচ্ছিলেন, তখন সেখান থেকে ৩০০ মিটার দূরে, স্প্রে নদীর অপর পারে হাজার হাজার মানুষ ‘নাৎসি তাড়াও’ ও ‘গোটা বার্লিন এএফডিকে ঘৃণা করে’ ধ্বনি দিচ্ছিলেন৷

এএফডির সমাবেশের কথা ঘোষিত হবার পর তার বিরুদ্ধে ১৩টি পালটা প্রতিবাদ মিছিল ও সমাবেশের নোটিশ পুলিশের কাছে দাখিল করা হয়েছিল৷ সব মিলিয়ে রবিবার এএফডি সমর্থকদের তুলনায় তার প্রায় চারগুণ এএফডি-বিরোধী পথে নামেন বলে পুলিশের অনুমান৷ তবে ব্রান্ডেনবুর্গ তোরণের সামনে এএফডির যুগ্ম নেতা আলেক্সান্ডার গাউল্যান্ড ও ইয়র্গ ময়টেনের মতো বক্তারা সেটা উপলব্ধি করতে পেরেছেন কিনা সন্দেহ৷

‘ডেমোক্র্যাসি অ্যাট ওয়ার্ক’

এএফডির বক্তৃতামঞ্চ থেকে ৩০০ মিটার দূরে এএফডি-বিরোধীরা প্রায় একই পন্থায় তাঁদের প্রতিবাদ ব্যক্ত করার চেষ্টা করছিলেন৷ ডয়চে ভেলের সংবাদদাতা ও এই প্রতিবেদনটির রচয়িতা জেফারসন চেজের গলায় জার্মান পতাকার কালো-লাল-হলুদ ফিতে লাগানো অ্যাক্রেডিটেশন কার্ড ঝুলছিল৷ সেজন্য এএফডি-বিরোধী বিক্ষোভকারীদের তরফ থেকে তাঁর দিকে থুতু ফেলা হয়৷ কারণ? অধিকাংশ এএফডি সমর্থকদের হাতে জার্মানির কালো-লাল-হলুদ জাতীয় পতাকা ছিল৷

জেফারসন চেজ (বার্লিন)/এসি