বার্লিনে ইউক্রেনের পুনর্গঠনের রূপরেখা ফুটে উঠলো
২৬ অক্টোবর ২০২২ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও শিল্পোন্নত দেশগুলির গোষ্ঠী জি-সেভেন ইউক্রেনের পুনর্গঠনের জন্য এক তহবিল গড়ার কাজ শুরু করলো৷ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর পশ্চিম ইউরোপে ‘মার্শাল ফান্ড'-এর আদলে সেই লক্ষ্য পূরণ করতে চায় এই দুই রাষ্ট্রজোট৷ মঙ্গলবার বার্লিনে আয়োজিত এক সম্মেলনে জি-সেভেনের বর্তমান সভাপতি দেশ জার্মানির চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস ও ইইউ কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডেয়ার লাইয়েন ইউক্রেনের পুনর্গঠন কর্মসূচির রূপরেখা তুলে ধরেন৷
রাশিয়ার হামলায় বিধ্বস্ত ইউক্রেনের পুনর্গঠনের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে কোনো সংশয় না থাকলেও সেই উদ্যোগের সময়সূচি নিয়ে মতভেদ রয়েছে৷ রাশিয়া ইউক্রেনের বিভিন্ন অংশে এখনো নিয়মিত হামলা চালিয়ে যাচ্ছে৷ ফলে যুদ্ধ চলাকালীন পুনর্গঠনের প্রচেষ্টা অর্থহীন বলে মনে করছে পশ্চিমা বিশ্ব৷ তাছাড়া এই কর্মসূচির জন্য আরও আন্তর্জাতিক সমর্থন ও সহায়তা নিশ্চিত করতে চাইছে ইইউ ও জি-সেভেন৷ কিন্তু ইউক্রেনের সরকার অবিলম্বে বিনিয়োগ টানতে চাইছে৷ ভিডিও লিংকের মাধ্যমে সে দেশের প্রেসিডেন্ট ভোলোদোমির জেলেনস্কি তার ভাষণে এমন আহ্বান জানিয়েছেন৷ বিশেষ করে রাশিয়ার হামলায় দেশের জ্বালানি সংক্রান্ত অবকাঠামোর প্রায় এক-তৃতীয়াংশ ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় জেলেনস্কি এখনই সহায়তা চাইছেন৷ তার মতে, যুদ্ধ শেষ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করা সম্ভব নয়৷ তাই পুনর্গঠন কর্মসূচির কিছু অংশ অন্তত এখনই শুরু করা উচিত৷ বিশেষ করে হাসপাতাল, স্কুল, পরিবহণের রুট ও অন্যান্য জরুরি অবকাঠামোর পুনর্গঠনের উপর জোর দিচ্ছেন তিনি৷ ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট সেই সঙ্গে আগামী বছরের সরকারি বাজেট ঘাটতি সামাল দিতে তিন হাজার ৮৪০ কোটি ইউরো অংকের আন্তর্জাতিক সহায়তা চেয়েছেন৷
বার্লিনে শীর্ষ নেতা ও বিশেষজ্ঞদের সম্মেলনে ইউক্রেনের পুনর্গঠনের লক্ষ্যে কোনো স্পষ্ট আর্থিক অঙ্গীকার করা হয় নি৷ উদ্যোক্তারাও এ দিনের আলোচনাকে দাতা সম্মেলন হিসেবে তুলে ধরেন নি৷ জার্মান চ্যান্সেলর শলৎস আপাতত আগাম পরিকল্পনার উপর জোর দিচ্ছেন৷ তার মতে, এমন বিশাল কর্মযজ্ঞের জন্য একটা গোটা প্রজন্মের উদ্যোগের প্রয়োজন৷ অবিলম্বে কাজ শুরু করার উপর জোর দিয়েছেন শলৎস৷ ফন ডেয়ার লাইয়েন বলেন, রাশিয়ার হামলা শেষ হলেই এক আন্তর্জাতিক জোটের সহায়তায় ইউক্রেনের পুনর্গঠনের কাজ শুরু করতে হবে৷ তার মতে, এমন কর্মযজ্ঞের জন্য যত বেশি সম্ভব দেশের সক্রিয় অংশগ্রহণ প্রয়োজন হবে৷ রাশিয়ার হামলায় ক্ষয়ক্ষতির এমন ভয়াবহ মাত্রা সামাল দেওয়া কোনো একটি দেশের পক্ষে সম্ভব নয় বলে তিনি মন্তব্য করেন৷ ইইউ কমিশনের প্রেসিডেন্ট মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ক্যানাডা, ব্রিটেন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড ও আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলির উদ্দেশ্যে এই কর্মযজ্ঞে যোগ দেবার আহ্বান জানিয়েছেন৷
জার্মানির উন্নয়ন সাহায্য মন্ত্রী স্ভেনিয়া শুলৎসে বলেন, এখনই কোনো নির্দিষ্ট আর্থিক অংক স্থির না করলেও অভাবনীয় এক অংকের প্রয়োজন হবে৷ তার মতে, দুর্ভাগ্যবশত চূড়ান্ত ধ্বংসলীলার উপর সবকিছু নির্ভর করবে৷ শুলৎসে ইউক্রেনের পুনর্গঠনের ক্ষেত্রে রাশিয়াকেও ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য করার এক প্রক্রিয়া স্থির করার পক্ষে সওয়াল করেন৷ পোল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট মাটেউশ মোরাভিয়েৎসকি পশ্চিমা বিশ্বের নিষেধাজ্ঞার আওতায় বাজেয়াপ্ত রুশ কোটিপতিদের অর্থও ইউক্রেনের পুনর্গঠনের কাজে লাগানোর আহ্বান জানান৷
এসবি/কেএম (ডিপিএ, এএফপি)