বার্লিনালে: গ্ল্যামার নেই, তবে আছে অন্যকিছু
বিশ্বের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় চলচ্চিত্র উৎসব বার্লিনালে৷ তবে সিনেমা বা মুভি উৎসব বলতে সবার আগে গ্ল্যামারের কথা মনে্ এলেও বার্লিনালের ক্ষেত্রে সেভাবে হয়ত বলা যাবে না৷ কিন্তু তারপরও অনন্য বার্লিনালে৷ কারণ...
যুদ্ধবিদ্ধস্ত দেশে পরিবর্তন আনতে
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জার্মানদের মধ্যে সংস্কৃতির চর্চা ফিরিয়ে আনতে ১৯৫১ সালে প্রথমবারের মতো বার্লিন চলচ্চিত্র উৎসবের আয়োজন করা হয়েছিল৷ সেই থেকে প্রতিবছর নিয়মিতভাবে আয়োজিত হয়ে আসা বার্লিনালে এখন ইউরোপ তথা বিশ্বের অন্যতম চলচ্চিত্র উৎসবে পরিণত হয়েছে৷
গ্ল্যামারের অভাব
বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় মুভি উৎসবগুলোতে যেখানে তারকাদের ব্যাপক উপস্থিতি দেখা যায়, বার্লিনালেতে তেমনটা সচরাচর চোখে পড়েনা৷ এবার যেমন এখন পর্যন্ত মার্কিন অভিনেতা রিচার্ড গেয়ারকে দেখা গেছে৷ স্প্যানিশ অভিনেত্রী পেনেলোপে ক্রুজের আসার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত তিনি আসেননি৷
বিষয়বস্তুর প্রাধান্য
বার্লিনালেতে মুভি নির্বাচনের ক্ষেত্রে সিনেমা নির্মাণের শৈল্পিক দিকের চেয়ে সাধারণত বিষয়বস্তুকে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়৷ উৎসবের সেরা পুরস্কার দেয়ার ক্ষেত্রেও এটি বিবেচনায় নেয়া হয়৷ উপরের ছবিটি গত বছরের সেরা মুভি ‘ফায়ার অ্যাট সি’ থেকে নেয়া৷ বিষয় ছিল শরণার্থী সংকট৷
নাগরিকদের অংশগ্রহণ
বার্লিনালে মানেই বার্লিন শহর জুড়ে বিভিন্ন সিনেমা থিয়েটারে মুভি প্রদর্শন৷ ইউরোপের অন্য কোনো শীর্ষস্থানীয় চলচ্চিত্র উৎসবে এই সুযোগ দেয়া হয় না৷ তাইতো ফরাসি মুভি সমালোচক মিচেল সিমেন্ট একবার বলেছিলেন, বার্লিনালের সঙ্গে বার্লিনের অধিবাসীদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক দেখে তিনি অভিভূত৷
‘অ্যাডভেঞ্চারাস প্রোগ্রাম’
ক্যানাডীয় মুভি নির্মাতা ব্রুস লেব্রুস ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘কান চলচ্চিত্র উৎসবের কর্মসূচি বার্লিনালের মতো অ্যাডভেঞ্চারাস নয়৷’’ ২০১৪ সালে কান উৎসবে জুরির দায়িত্ব পালনের অভিজ্ঞতার আলোকে বার্লিনালে সম্পর্কে এমন মন্তব্য করেন তিনি৷ উপরের ছবিটি ফিনল্যান্ডে সিরীয় এক শরণার্থীর জীবন নিয়ে নির্মিত ‘দ্য আদার সাইড অফ হোপ’ এর পোস্টার থেকে নেয়া৷ ছবিটি এবারের উৎসবে দেখানো হচ্ছে৷
এক্সপেরিমেন্টাল মুভি
বার্লিনালেতে এবার ১৮টি মুভি সেরা হিসেবে বিবেচিত হতে মনোনয়ন পেয়েছে৷ এর বাইরে যে সিনেমাগুলো প্রদর্শিত হচ্ছে, সেগুলো কয়েকটি সেকশন বা ভাগে ফেলা হয়েছে৷ এর মধ্যে একটি ‘ফোরাম’৷ এই বিভাগে সাধারণত এক্সপেরিমেন্টাল ও আনঅর্থোডক্স গোছের ছবি দেখানো হয়৷ যেমন ফ্রান্সে অবৈধ এক তরুণ অভিবাসীর প্রথম কয়েকমাসের জীবন নিয়ে নির্মিত ‘ফরেন বডি’ এবার ফোরাম-এ দেখানো হয়েছে৷
তরুণ নির্মাতাদের জন্য সুযোগ
শুধু মুভি দেখিয়েই কাজ শেষ করে না বার্লিনালে৷ তরুণদের মধ্যে যারা মুভি নির্মাণে আগ্রহী, তাদের সঙ্গে বিখ্যাত নির্মাতাদের আলোচনার সুযোগ করে দেয় কর্তৃপক্ষ৷
বার্লিনালেতেও অ্যামনেস্টি!
যে বাসটি দেখতে পাচ্ছেন, এটি ‘স্ট্রিট ফুড’-এর কাছেই দাঁড়িয়ে আছে৷ অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ও আরো দুটি প্রতিষ্ঠান এই বাসে মানবাধিকার, ফেয়ার ট্রেড ও উন্নয়ন বিষয়ক আলোচনার ব্যবস্থা করে থাকে৷ বার্লিনালেতে এলেই এই বাসের দেখা পাওয়া যায়৷
খাওয়া ছাড়া আর আছে কী!
বার্লিনালের মূল আয়োজনস্থলের কাছে এক রাস্তায় কয়েকটি ‘ফুড ট্রাক’ রাখা আছে৷ এসব ট্রাকে বিভিন্ন দেশের খাবার পাওয়া যায়৷ রাস্তায় দাঁড়িয়ে খেতে হয় বলে এর নাম দেয়া হয়েছে ‘স্ট্রিট ফুড’৷ গত কয়েক বছর ধরেই এটি বার্লিনালের অংশ৷ এর বাইরে ‘কুলিনারি সিনেমা’ বিভাগে খাবার-দাবার বিষয়ক মুভি দেখানো হচ্ছে৷ মুভি শেষে একসঙ্গে খেতে বসেন দর্শক ও নির্মাতারা৷
শরণার্থীদের জন্য কর্মসূচি
ছবিতে যে বাক্স দেখতে পাচ্ছেন সেটিতে করে বার্লিনে আসা শরণার্থীদের জন্য তহবিল সংগ্রহ করছে বার্লিনালে কর্তৃপক্ষ৷ ২০১৫ সাল থেকে জার্মানিতে শরণার্থী আসা শুরু হয়েছে৷ তাদের মধ্যে অনেকে বার্লিনে বাস করছেন৷ এছাড়া কয়েকজন শরণার্থীকে ‘ট্রেইনি’ হিসেবে বার্লিনালেতে কাজের সুযোগ দেয়া হয়েছে৷ শরণার্থীদের জন্য বিনামূল্যে মুভি দেখারও ব্যবস্থা করা হয়েছে৷