বার্লিন প্রাচীরের স্মৃতি রোমন্থনে এক সাংবাদিক
১ নভেম্বর ২০১০৯ই নভেম্বর ১৯৮৯ সালের সেই সন্ধ্যাটি এখনও মনে রয়েছে মার্সেল ফুর্স্টেনাউ-এর৷ তিনি নিজেই বললেন, ‘‘সন্ধ্যা সাতটা৷ সাবেক পূর্ব জার্মানির পলিটব্যুরোর কর্মকর্তা গুন্টার শাবভস্কির ভাষণ শুনছি রেডিওতে৷ সেই প্রেস কনফারেন্সে আমিও উপস্থিত ছিলাম৷ তিনি ভ্রমণের অধিকার সম্পর্কে নতুন কিছু একটা বোঝাচ্ছিলেন৷''
সেসময়ে পূর্ব জার্মানি ছাড়ার জন্যও অনুমতিপত্র প্রয়োজন হত৷ নাম ছিল এক্জিট ভিসা৷ প্রেস কনফারেন্সে বলা হচ্ছিল, পূর্ব জার্মানি থেকে বের হতে হলে সেই ভিসার প্রয়োজন নেই৷ যে সব শর্ত মেনে চলা বাধ্যতামূলক ছিল, সেগুলোরও আর কোনো প্রয়োজন নেই৷ অবিলম্বেই নতুন নিয়ম কার্যকরী হবে৷
মার্সেল ফুর্স্টেনাউ নিজেও তা বিশ্বাস করতে পারেননি৷ অবিলম্বে তা কার্যকরী হবে? পূর্ব জার্মানি থেকে বের হতে আর কখনো এক্জিট ভিসার প্রয়োজন হবে না? তার মানে আর কখনো এই ভিসার জন্য ভোর ছ'টা থেকে লম্বা লাইনে দাঁড়াতে হবে না? প্রয়োজন নেই কোন ফর্মের? বার্লিন প্রাচীর পেরিয়ে যে কোন জায়গায় যে কোন সময়ে যাওয়া যাবে ? অনেক ছোটবেলা থেকেই চলাফেরা এবং ভ্রমণে যে সব বাধা-বিপত্তি, নিয়ম-বিধি ছিল, তা যেন এক নিমিষেই বাতাসে মিলিয়ে গেল৷
মার্সেল ফুর্স্টেনাউ যতবার পূর্ব জার্মানি গিয়েছেন ততবারই তাঁকে বিশেষ একটি ফর্ম পূরণ করতে হয়েছে৷ আবেদনের বেশ কয়েকদিন পর মিলতো অনুমতি৷ কোনদিনই তিনি বিশ্বাস করেননি, যে বার্লিন প্রাচীর একসময় ভেঙে পড়বে৷
ভাষণের পরই মার্সেল ফুর্স্টেনাউ সোজা চলে যান বার্লিন প্রাচীরের কাছে৷ তৈরি করতে হবে প্রতিবেদন৷ তুলে ধরতে হবে সাধারণ মানুষের প্রতিক্রিয়া৷ এছাড়া টেলিভিশনে তখন শুরু হয়ে গেছে ‘প্রাচীর ভেঙে পড়া' নিয়ে নানা প্রতিবেদন৷ দেখানো হচ্ছে, মানুষ দেয়াল টপকে চলে যাচ্ছে ওপারে, ওপার থেকে আসছে এপারে৷ ট্যাক্সি চলাচল শুরু হয়ে গেছে৷ চেকপয়েন্ট চার্লির কাছে মানুষের ভীড়৷ আনন্দ এবং চোখের অশ্রু – কোনটিই ধরে রাখা যাচ্ছে না৷
প্রতিবেদন: মারিনা জোয়ারদার
সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন