বার্লিন প্রাচীর পতনের ২ দশক পূর্তি
৪ নভেম্বর ২০০৯১৯৮৯ সালের ৯ই নভেম্বর৷ তৎকালীন পূর্ব জার্মানির অস্থির পরিস্থিতির দিকে নজর রাখতে লক্ষ লক্ষ মানুষের চোখ আটকে ছিল টেলিভিশনের পর্দায়৷ সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ পূর্ব জার্মান সরকারের মুখপাত্র গ্যুন্টার শাবভস্কি এক সাংবাদিক সম্মেলনে নানা কথার ফাঁকে হঠাৎ বলে বসলেন, ‘‘এক সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পূর্ব জার্মানির যে কোন নাগরিক সীমান্ত পেরিয়ে দেশের বাইরে যেতে পারেন৷’’ এক সাংবাদিকের পাল্টা প্রশ্নের উত্তরে তিনি না জেনেই বলে বসলেন, এই আইন অবিলম্বে কার্যকর হচ্ছে৷ উল্কার বেগে এই খবর ছড়িয়ে পড়তেই মানুষ দলে দলে বার্লিনের ব্রান্ডেনবুর্গ তোরণের দিকে এগিয়ে যায় এবং সীমান্ত পেরিয়ে পশ্চিমে যাবার জন্য ভিড় করে৷ সীমান্ত রক্ষীদের কাছে নতুন কোন নির্দেশ না থাকলেও পরিস্থিতির চাপে পড়ে তারা হাল ছেড়ে দেয়৷ সীমান্তের দুই প্রান্তের মানুষ পরস্পরের সঙ্গে মিশে যায়৷ সীমান্ত অগ্রাহ্য করে মুহূর্তের মধ্যে আনন্দ, আবেগ ও উৎসবের ঢেউ ছড়িয়ে পড়ে চারিদিকে ৷
তৎকালীন পশ্চিম জার্মানির সরকারও এই স্বতঃস্ফূর্ত ঘটনাপ্রবাহের ফলে বিস্ময়ে অভিভূত হয়ে পড়ে৷ এই প্রক্রিয়া থামানো বা নিয়ন্ত্রণের মত ক্ষমতা কারো হাতেই ছিল না৷ প্রায় ৪ দশক ধরে বিভক্ত জাতির মানুষের কণ্ঠেই পুনরেকত্রীকরণের রব উঠতে থাকে৷ প্রাক্তন জার্মান চ্যান্সেলর ও এসপিডি দলের নেতা নোবেল শান্তি পুরস্কারজয়ী ভিলি ব্রান্ট বলেছিলেন, ‘‘যা একই সূত্রে বাঁধা, তার বিকাশও ঘটে একই সঙ্গে ৷’’
৯ই নভেম্বর বার্লিনের দুই অংশের জনতার চাপে ভেঙে পড়ল বিভাজনের প্রতীক বার্লিন প্রাচীর৷ মানুষ সেখানেই থেমে থাকে নি৷ এক বছরেরও কম সময়ের মধ্যে দুই জার্মানির পুনরেকত্রীকরণ ঘটে৷ ১৯৯০ সালের ৩রা অক্টোবর এই প্রক্রিয়া পূর্ণ হয়৷ একদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন ও ফ্রান্সের মত মিত্রশক্তির ৩ দেশ – অন্যদিকে সোভিয়েত ইউনিয়নও এই প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করতে তাদের ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেছিল৷ তার পরের ঘটনাপ্রবাহ তুলনাহীন৷ সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে টুকরো হয়ে যাওয়া থেকে শুরু করে পূর্ব ইউরোপের দেশগুলির ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ন্যাটোতে যোগদান – এই আমূল পরিবর্তনের ঢেউ আছড়ে পড়েছিল গোটা বিশ্বে৷
১৯৮৯ সালের ৯ই নভেম্বর যাঁরা সেদিন বার্লিনে ছিলেন, তাঁরা সেই ঐতিহাসিক মুহূর্তের সাক্ষী হতে পেরেছেন৷ এমনই একজন দীর্ঘদিন পূর্ব বার্লিনে বসবাসরত বারবারা দাশগুপ্ত৷ ডয়চে ভেলের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি বার্লিন প্রাচীর পতন সম্পর্কে নিজস্ব মতামত তুলে ধরেছেন৷
প্রতিবেদন: সঞ্জীব বর্মন,
সম্পাদনা: আবদুল্লাহ আল-ফারূক