1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বোমায় দগ্ধ জীবন

হারুন উর রশীদ স্বপন, ঢাকা৩০ জানুয়ারি ২০১৫

রাজধানী ঢাকার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে এখন শুধু পেট্রোল বোমায় দগ্ধ মানুষের কান্না আর আহাজারি৷ গত কয়েকদিনে দগ্ধ মানুষের মিছিল কিছুটা কম হলেও, পরিস্থিতি ভয়াবহ৷ ১০০ বেডের বার্ন ইউনিটে ভর্তি অন্ততপক্ষে ৫০০ মানুষ৷

https://p.dw.com/p/1ETRn
Bildergalerie Opfer politischer Gewalt in Bangladesch 2015
ছবি: DW/M. Mamun

৬ই জানুয়ারি থেকে বিএনপিসহ ২০ দলীয় জোটের অবরোধ আর হরতালে পেট্রোল বোমার ব্যবহার বেড়ে গেছে বাংলাদেশ৷ সরকারের পক্ষ থেকেও এহেন ঘটনা প্রতিরোধে বিশেষ কোনো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না৷ আর তাতেই সৃষ্টি হয়েছে এ পরিস্থিতি৷ কিন্তু এত সহিংসতার পরও রবিবার থেকে আবার ৭২ ঘণ্টার হরতালের ডাক দিয়েছে বিএনপি৷

ঢাকার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে এখনো যন্ত্রণায় ছটফট করছেন সালাহউদ্দিন(৩৭)৷ ২৩শে জানুয়ারি যাত্রাবাড়ীতে একটি বাসে পেট্রোল বোমা বিস্ফোরণের পলে তাঁর শরীরের ৪৭ শতাংশ পুড়ে গেছে৷ তাঁকে দেখলে মনে হয় যেন এক জীবন্ত মমি৷ সারা শরীরে ব্যান্ডেজ বাধা৷ ছোট ছোট দুই সন্তান হাসিব ও আবির বাবার এই অবস্থায় হতবাক৷ তাদের কথা, ‘‘বাবার কিছু হয়ে গেলে আমাদের কী হবে?''

Bildergalerie Opfer politischer Gewalt in Bangladesch 2015
ছবি: DW/M. Mamun

সালাহউদ্দিনের স্ত্রী উর্মি আক্তার বলেন, ‘‘আমার স্বামী রাজধানীর একটি শপিংমলে কাজ করেন৷ ২৩শে জানুয়ারি পেট্রোল বোমায় আহত হওয়ার খবর পেয়ে হাসপাতালে ছুটে আসি৷ দু'সন্তানকে তাদের বাবার পোড়া শরীর যাতে না দেখতে হয়, সেজন্য বাসায় তাঁদের বলতে গেলে আটকে রাখতে হয়েছিল৷ কিন্তু তারপরও ঠেকানো যায়নি৷ নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ থেকে বাবাকে দেখাতে তাদের হাসপাতালে নিয়ে আসতে হয় শেষ পর্যন্ত৷ কিন্তু বাবাকে দেখার পর প্রথমে কান্না এবং পরে অনেকটা নির্বাকই হয়ে গেছে তারা৷''

ট্রাকের হেলপার জাহাঙ্গীরের (৩০ ) ৫৩ শতাংশ শরীর পুড়ে গেছে৷ তাঁর স্ত্রী বিউটি জানান, ‘‘২৩শে জানুয়ারি বগুড়া শহরের চারমাথা মোড়ে পেট্রোল বোমায় দগ্ধ হন জাহাঙ্গীর৷ এখনো আইসিইউ-তে রাখা হয়েছে তাঁকে৷ ডাক্তার বলেছেন, তাঁর অবস্থা বেশ খারাপ৷''

বিউটির কথায়, দুটি শিশু সন্তান জাহিদ ও জুঁই আক্তারকে নিয়েই তাঁদের সংসার৷ মাথার ওপর দেনার পাহাড় জমছে৷ জাহাঙ্গীরকে বাঁচানো না গেলে দু'সন্তান নিয়ে ভিক্ষা করা ছাড়া কোনো উপায় থাকবে না৷ ‘‘ভবিষ্যতের সব স্বপ্ন যে এখন দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে৷''

দগ্ধ রোগীদের আর্তনাদে ভারি হয়ে উঠেছে বার্ন ইউনিটের বাতাস৷ বাইরে থেকে শোনা যাচ্ছে স্বজনদের কান্না৷ এরপরও প্রতিদিনই নতুন কোনো ঝলসানো মানুষ আসছেন হাসপাতালে৷ নতুন শোকার্ত স্বজন৷ বেড নেই৷ ঠাঁই নেই৷ কিন্তু বোমার জোগান শেষ হয় না৷ এভাবেই দিন যাচ্ছে আর বার্ন ইউনিটে ফিকে হয়ে আসছে অনেকের স্বপ্ন, মানুষের মতো বেঁচে থাকার আশা৷

চিকিত্‍সকরা চিকিত্‍সা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন৷ তাঁদের কাছে এখন আর রাত দিন নেই, নেই ‘ডিউটি আওয়ার'৷ তাঁরা সবাই মানবতার সেবায় এ সব ভুলে গেছেন৷ বার্ন ইউনিটের অধ্যাপক ডা. মো. সাজ্জাদ খোন্দকার জানান, পেট্রোল বোমায় আহতসহ সাড়ে পাঁচশ' রোগীর চিকিত্‍সা করে যাচ্ছেন তাঁরা৷ রোগীদের যথাযথ চিকিত্‍সা সেবা দেয়ার জন্য আরও ডাক্তার ও নার্স সংযুক্ত করা হচ্ছে৷

তিনি জানান, ‘‘পেট্রোল বোমায় আহত রোগীদের চিকিত্‍সা একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া৷ ধীরে ধীরে এ সব রোগীকে সুস্থ জীবনের দিকে নিয়ে যেতে হয়৷'' পেট্রোল বোমায় দগ্ধ আটজনের অবস্থা এখনো আশঙ্কাজনক জানিয়ে তিনি বলেন, ‘‘রোগীদের প্রচণ্ড চাপের মধ্যেও আমরা দিন-রাত চিকিত্‍সা দিয়ে যাচ্ছি৷ কিন্তু এখানে বেড আছে মাত্র ১০০৷ তারপরও আমরা বেডের কথা চিন্তা না করে যেভাবে পারি রোগীদের চিকিত্‍সা দেয়ার কথা ভাবছি৷ চেষ্টা করছি আর কারুর যাতে জীবন না যায়৷''

আবাসিক চিকিত্‍সক ডা. পার্থ শঙ্কর পাল জানান, ‘‘গত ২৪ দিনে হরতাল-অবরোধের ফলে পেট্রোল বোমা এবং আগুনে ঝলসে গিয়ে বার্ন ইউনিটে ভর্তি মোট ৮৬ জন হয়েছেন৷ তার মধ্যে এ পর্যন্ত মারা গেছেন ছ'জন৷'' তিনি জানান, ‘‘শরীরের ৩০ ভাগের বেশি পুড়ে গেছে এ রকম রোগী আছেন ৪৭ জন৷ তাঁদের মধ্যে আটজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক৷ তাঁদের শরীরের ৪৫ ভাগের বেশি পুড়ে গেছে, কয়েকজনের পুড়ে গেছে কণ্ঠনালীও৷ তবে পরিস্থিতি সামাল দিতে নতুন ১৫ চিকিত্‍সক ও ২০ জন নার্স যোগ দিয়েছেন হাসপাতালে৷''

ঢাকার বাইরের হাসপাতালগুলোতে আরো ১৩টি বার্ন ইউনিট থাকলেও, আগুনে পোড়া রোগীদের পূর্ণাঙ্গ চিকিত্‍সার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটই একমাত্র ভরসা৷ ফলে রোগীদের চাপে হিমশিম খেতে হচ্ছে এই ইউনিটকে৷ জনবল ও চিকিত্‍সা ব্যবস্থার অপ্রতুলতার কারণে বাকি ১৩টি হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে দগ্ধ রোগীদের প্রাথমিক চিকিত্‍সা দেয়ার পর ঢাকা মেডিকেলে পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে৷ কিন্তু স্থানান্তরিত করার সময় মৃত্যু ও পঙ্গুত্বের ঝুঁকিও বেড়ে যাচ্ছে রোগীর৷

একই সঙ্গে অভাব রয়েছে দক্ষ জনবলের৷ ১৬ কোটি মানুষের এই দেশে এ মুহূর্তে ১ হাজার ৫৫১ জন বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জন দরকার৷ অথচ বিষয়টিতে বিশেষজ্ঞ চিকিত্‍সক আছেন মাত্র ৫০ জন৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান