বামন জলহস্তির দেশে
২৫ মে ২০১৭সিয়েরা লিওনের গোলা রেনফরেস্ট ন্যাশনাল পার্কে ভোরবেলা৷ লাইবেরিয়ার সীমান্ত থেকে মাত্র কয়েক কিলোমিটার দূরে৷
একদল রেঞ্জার আর গবেষক যে প্রাণীটির খোঁজে রয়েছেন, সে হলো পিগমি হিপোপটেমাস বা বামন জলহস্তি – এক অতি বিরল প্রাণী৷ গোলা ন্যাশনাল পার্কের চিফ রেঞ্জার মুস্তাফা ওয়াই বলেন, ‘‘আমি একটি পিগমি হিপোকে জীবন্ত দেখতে চাই৷ কাজটা সোজা নয়, সাত বছর আগে কাজ শুরু করা অবধি সচক্ষে দেখিনি৷ কাজেই আমি সত্যিই একটাকে দেখতে চাই, আমার তালিকায় সবার ওপরে এখন এই প্রাণীটি৷’’
পিগমি হিপোরা এই ঘোলা জলে থাকে আর ডাঙায় ওঠে শুধু খাবারের খোঁজে৷ শেষমেষ পায়ের ছাপ খুঁজে পাওয়া গেল – টাটকা নয়, তবু জীবগুলো যে এখানে ভালোই আছে, এটা তার প্রমাণ৷ পার্কের বায়োলজিস্টরা পিগমি হিপোদের ছবি তোলার জন্য নতুন একটা ক্যামেরা ট্র্যাপ বসিয়েছেন৷ হিপোদের সংখ্যা স্থিতিশীল আছে কিনা, তা জানার একটি উপায় হলো এই ক্যামেরা ট্র্যাপ৷
মাত্র হাজার দু'য়েক পিগমি হিপো এখনও অবশিষ্ট আছে বলে অনুমান করা হয়৷ পিগমি হিপোরা আকারে আসল হিপোদের চার ভাগের এক ভাগ৷ এদের বাস প্রধানত এখানকার আপার গিনি রেনফরেস্টে৷
ন্যাশনাল পার্কে ৬০টি বিপন্ন প্রজাতির প্রাণী ও উদ্ভিদের বাস৷ মুস্তাফা ওয়াই ছাড়া আরো দু'টি দল এখানে টহল দেয়৷ পার্কের চৌহদ্দির মধ্যে শিকার করা, মাছ ধরা অথবা হীরের খোঁজ করা নিষিদ্ধ – অতীতে যা প্রায়ই ঘটত৷
সিয়েরা লিওনের আদিবনভূমির মাত্র পাঁচ শতাংশ এখনও বজায় আছে৷ গোলা রেনফরেস্ট ন্যাশনাল পার্ক যেন একটা মরুদ্যান৷ অন্যান্য স্থানে পরিবেশ সংরক্ষণের জন্য অর্থের অভাব রয়েছে৷
শান্তির প্রতীক
আজ অন্তত শান্তি আছে৷ ২০১১ সালে প্রতিষ্ঠিত গোলা রেনফরেস্ট ন্যাশনাল পার্ক সেই শান্তির প্রতীক৷ কাছের লাইবেরিয়াতেও একটি ন্যাশনাল পার্ক গড়ে তোলা হয়েছে, ফলে একটি আন্তঃ-সীমান্ত ‘শান্তি উদ্যান’ গড়ে উঠেছে৷ কিন্তু ন্যাশনাল পার্ককে রক্ষার একমাত্র পথ হলো, গ্রামবাসীদের শিকার করা, রান্নার কাঠ সংগ্রহ অথবা খনি কাটা থেকে বিরত করা৷ যে কারণে পার্কের কর্মীরা গ্রামবাসীদের নানান হারানো পেশার সন্ধান দিতে চান৷ ওয়াই-এর সহকর্মী আমিনাতা বেরেওয়া কোকো চাষিদের একটি নেটওয়ার্ক তৈরি করে তাদের মার্কেটিং-এর উন্নতি ঘটাতে চাইছেন৷
গোলা ন্যাশনাল পার্ক কোকো প্রকল্পের আমিনাতা বেরেওয়া বলেন, ‘‘এই সব কমিউনিটির মানুষদের নিয়ে কাজ করাটা একটা বড় চ্যালেঞ্জ, কেননা এই কমিউনিটিগুলি সত্যিই দূর দূর এলাকায়৷ তাদের গোলা ন্যাশনাল পার্কের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বোঝানোটা আমাদের পক্ষে একটা কঠিন কাজ৷’’
মোহামেদ কোরোমা কোকোর চাষ করেন, ঠিক তাঁর বাবার মতো৷ কিন্তু কোকো চাষ থেকে তাঁর বিশেষ লাভ হয় না৷ কোকো গাছে যাতে আরো বেশি ফল ধরে, তার জন্য কী করা যায়? কোন কোকো বীজগুলোর মান সত্যিই রপ্তানি করার মতো? কোকো চাষিরা আমিনাতার কাছ থেকে এ সব জানতে পারেন৷ কোকো ফসল তোলা শুধু চাষিদের জন্যই নয়, জঙ্গলের পক্ষেও ভালো৷ আমিনাতা বেরেওয়া বলেন, ‘‘কোকো নিজেই একটা জঙ্গলের গাছ৷ কিছু কিছু পাখি এখানে আসে খাবারের খোঁজে – কাজেই এটা পরিবেশ সংরক্ষণের জন্য ভালো৷’’
বড় গাছের ছায়ায় কোকো গাছ বাড়ে ভালো৷ এর অর্থ, ন্যাশনাল পার্কের এই প্রান্তে জঙ্গলকেও বাঁচানো সম্ভব হচ্ছে৷ কোকো গাছ থাকার ফলে মাটি শুকিয়ে যেতে পারে না – এছাড়া পাখি, পোকামাকড় কিংবা বানররা এখানে বাস করতে পারে৷
কোকোর ব্যবসা
এখানে কোকো জমা হয়: এক হাজারের বেশি কোকো চাষি এই প্রকল্পে অংশ নিচ্ছেন৷ কোকো পাইকারী দরে বিক্রি করা সহজ৷ এবার মোহামেদের কোকোর গুণগত উৎকর্ষ পরীক্ষা করা হবে৷ আমিনাতা বেরেওয়া বললেন, ‘‘বেশ ভালোভাবে গ্যাঁজানো হয়েছে, তাই চকোলেটের রংটা এসেছে৷ প্রায় সাতদিন ধরে ভালোভাবে শুকানো হয়েছে৷’’
আমিনাতা সন্তুষ্ট – মোহামেদ তাঁর ২৫ কিলোগ্রাম কোকোর বীজের জন্য পেলেন ৪০ মার্কিন ডলার৷ মোহামেদ বললেন, ‘‘এই ব্যবসার মানে আমাদের পয়সা বাঁচে আর অনেক সমস্যা মিটে যায়৷ আমি আমার ছেলেমেয়েদের স্কুলের ফি দিতে পারি৷ সেটা আমার ভালো লাগে৷’’
আমিনাতা ও তাঁর সহকর্মীরা এখন তাঁদের অরগ্যানিক, ফেয়ারট্রেড কোকোর জন্য একজন আন্তর্জাতিক ক্রেতা খুঁজছেন৷
সত্যিই একটি সাফল্যের কাহিনি৷ সিয়েরা লিওনের অধিকাংশ এলাকায় প্রজাতিরা বিলুপ্ত হচ্ছে, কিন্তু গোলা রেনফরেস্ট ন্যাশনাল পার্ক তার জীববৈচিত্র্যকে বাঁচিয়ে রাখছে৷
ক্রাউসে/কিৎসমান/এসি