ক্রস ঝোলানোর নির্দেশ ঘিরে বিতর্ক
১ জুন ২০১৮প্রশাসনিক দপ্তর হোক বা থানা কিংবা আদালত, বাভেরিয়ার বাসিন্দারা এবার কোনো সরকারি ভবনে গেলেই ক্রশচিহ্ন দেখতে পাবেন৷ শুক্রবার থেকে এই নয়া নিয়ম কার্যকর হচ্ছে৷ এবং এই নির্দেশকে কঠোরভাবে কার্যকর করার কথা বলা হয়েছে৷ বাভেরিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের মুখপাত্র মার্টিন শলটিসিক বলেন, শুক্রবার থেকে এই নয়া নিয়ম কার্যকর হবে৷ এই নির্দেশকে হালকাভাবে নিলে চলবে না৷
তবে মুখপাত্র এটা স্পষ্ট করে জানাননি যে ক্রস না ঝোলালে কোনো জরিমানা হবে কিনা৷ তবে তিনি ইঙ্গিত দিয়েছেন, নয়া নিয়ম কার্যকর করতে বাভেরিয়ার প্রশাসন চেষ্টার ত্রুটি রাখবে না৷
প্রয়োজন স্পষ্টভাবে দৃশ্যমান ক্রস
বাভেরিকার নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, বাভেরিয়ার ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক প্রভাবের কথা স্মরণ করে প্রতিটি ভবনের প্রবেশদ্বারে স্পষ্টভাবে দৃশ্যমান ক্রস ঝোলাতে হবে৷ বাভেরিয়ার প্রাদেশিক প্রধান মার্কুস স্যোডার গত এপ্রিলে নতুন এই নিয়মের ঘোষণা করেছিলেন৷ এই ঘোষণার সময় যখন তিনি নিজে চিত্রসাংবাদিকদের সামনে স্টেট চ্যান্সেলারিতে একটি ক্রস ঝুলিয়ে ছিলেন, তখনই বোঝা গিয়েছিল এই নির্দেশের তাৎপর্য কতটা৷
এই পদক্ষেপ জার্মানিতে তুমুল বিতর্কের জন্ম দিয়েছে৷ শুধু পড়ুয়ারাই এর বিরোধিতা করেননি, ধর্মীয় নেতারাও এর বিরোধিতা করেছেন৷ প্রোটেস্ট্যান্ট চার্চ এবং ক্যাথলিক বিশপস কনফারেন্স এই পদক্ষেপের সমালোচনা করে বলেছে, এর ফলে ধর্মীয় প্রতীকের অপব্যবহার হবে৷
যদিও বাভেরিয়ার প্রোটেস্ট্যান্ট প্রধান স্যোডার শুক্রবার তাঁর ঘোষণা কার্যকর হওয়ার দিন জার্মানিতে নেই৷ তিনি গিয়েছেন ভ্যাটিকানে, পোপ ফ্রন্সিসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে৷
দ্বিধাদ্বন্দ্ব ও সমালোচনা
ঘোষণার পর থেকেই বাভেরিয়ার বিভিন্ন স্থানের প্রশাসন ভাবছিল, কবে পয়লা জুন আসবে ও এই নির্দেশ কার্যকর করার প্রথম দিনটি নিরুপদ্রবে মিটে যাবে৷ সরকারি আধিকারিকরা এ নিয়ে ধন্দে ছিলেন৷ ক্রসের মাপ, আকার সহ কোনো কিছুই নির্দিষ্ট করে বলা নেই সরকারি নির্দেশিকায়৷ মুখপাত্র মার্টিন এই ধোঁয়াশা দূর করে বলেন যে, এ ব্যাপারে স্থানীয় প্রশাসনই সিদ্ধান্ত নেবে৷
প্রশাসনের মুখপাত্রের এই মন্তব্যের অর্থ, খুব ছোট আকারের ক্রসও ঝোলানো যেতে পারে প্রবেশপথে৷ নির্দেশিকায় যেখানে ক্রস ঝোলানোর কথা বলা হয়েছে, সার্ভিস বিল্ডিং-এর ব্যাখা নিয়েও ধন্দ রয়েছে৷ এর মধ্যে বাভেরিয়া সরকারের অধীন সব প্রশাসনিক ভবনই পড়ে৷ এছাড়া রয়েছে থানা ও ট্যাক্স অফিস৷ এর মধ্যে পড়ে মিউজিয়াম, থিয়েটার, স্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয়ও৷ প্রশ্ন উঠেছে, তাহলে কি এ সব জায়গাতেই দৃশ্যমান ক্রস বাধ্যতামূলক?
এখানেই আপত্তি উঠেছে৷ মিউজিয়াম বা অন্যান্য সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ক্রস নিয়ে আপত্তি তুলছে৷ তারা তাদের প্রবেশদ্বার বা হলে ক্রস ঝোলাতে রাজি নয়৷ তাদের বক্তব্য, এর ফলে তাদের কাজের প্রকৃত উদ্দেশ্য ব্যাহত হবে৷
নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া
প্রথম প্রতিবাদ এসেছে নুরেমব্যার্গের মিউজিয়াম ফর কনটেম্পরারি আর্ট থেকে৷ এই প্রতিষ্ঠানের ডিরেক্টর এভা ক্রাউস বলেছেন, তিনি নির্দেশিকা মানবেন না৷ প্রতিষ্ঠানের এক মুখপাত্রের মতে, ক্রসের নিয়ম তাঁদের ক্ষেত্রে কার্যকর নয়৷
বাভেরিয়ার বিজ্ঞান ও কলা মন্ত্রকের মুখপাত্র বিষয়টি স্পষ্ট করে বলেছেন, নয়া নিয়ম মিউজিয়াম থিয়েটার, বিশ্ববিদ্যালয় ও অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে এখন কেবলই প্রস্তাব বা পরামর্শ, প্রয়োজন নয়৷ এ কথা সরাসরি এ সব প্রতিষ্ঠানকে জানানো হয়েছে কিনা, তা বোঝা যাচ্ছে না৷
প্রচার কৌশল নাকি ঐতিহ্যের প্রতি সম্মান?
সরকারি পদক্ষেপ সংবিধান অনুযায়ী কিনা, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে৷ ধর্মনিরপেক্ষতা ও চার্চের থেকে রাজ্যকে আলাদা রাখার যে নীতি সংবিধানে রয়েছে, ক্রসের নির্দেশিকা তাকে লঙ্ঘন করছে বলে অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন৷
কিন্তু স্যোডার ও বাভেরিয়ার সরকার এই বক্তব্য খারিজ করে বলেছে, ক্রস বাভেরিয়ার পরিচয়৷ যদিও বাভেরিয়ার পরিচয় বলতে কী বোঝায়, তা নিয়ে বিভিন্ন জনের বিভিন্ন মত৷ প্রসঙ্গত, এই বিতর্ক তখন তৈরি হলো যখন জার্মান সমাজে ইসলামের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা চলছে৷ স্যোডার ও তাঁর দল রাজ্য নির্বাচনের আগে এই ঘোষণার মাধ্যমে জনপ্রিয় হয়ে উঠতে চাইছে৷
আগামী ১৪ অক্টোবর প্রাদেশিক নির্বাচন৷ জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলের বাভেরিয়ার শাখা বা সহযোগী দল স্যোডারের ক্রিশ্চিয়ান সোশ্যাল ইউনিয়ন (সিএসইউ) অতি দক্ষিণপন্থি অলটারনেটিভ ফর জার্মানির (এএফডি) বিরুদ্ধে ভোটে জয় পেতে চাইছে৷
রেবেকা স্টাউডেনমায়ার/পিএস