বাবা, মা, ছেলের রহস্যজনক মৃত্যু ও পুলিশের দাবি
গড়িয়া স্টশনের কাছে একটি ফ্ল্যাট থেকে বাবা, মা ও ছেলের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। পুলিশের দাবি তারা আত্মহত্যা করেছেন।
তিন ঘরে তিনটি দেহ
ছেলে সুমনরাজের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয় খাওয়ার ঘর থেকে। সুমনরাজের বয়স হয়েছিল ৩৮ বছর। বাবা ৭৫ বছর বয়সি স্বপন মৈত্র ও মা ৬৮ বছর বয়সি অপর্ণা মৈত্রের দেহ ঝুলছিল দুইটি ঘরে। পুলিশ গিয়ে তাদের দেহ উদ্ধার করে।
পুলিশের সন্দেহ আত্মহত্যা
প্রাথমিক তদন্তের পর পুলিশ বলছে, বাবা, মা ও ছেলে আত্মহত্য়া করেছেন। বারুইপুরের পুলিশের ডেপুটি কমিশনার মোহিত মোল্লা দাবি করেন, চিকিৎসকরা বলেছেন, তিনজনই আত্মহত্যা করেছেন। তিনজনের মৃত্যু একেবারে কাছাকাছি সময়ে হয়েছে।
সুমনের ফেসবুক লাইভ নিয়ে প্রশ্ন
সুমনরাজ মৃত্যুর আগে একটি ফেসবুক লইভ করেছিলেন। সেখানে তিনি দাবি করেন, তাকে ভয় দেখানো হচ্ছে। তাদের একঘরে করে রাখা হয়েছে। পুলিশ বলেছে, প্রাথমিক তদন্তের পর তারা এরকম কোনো তথ্য পায়নি। ডিএসপি জানিয়েছেন, প্রতিবেশী, আত্মীয়দের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। বাকি তদন্ত হয়েছে। কিন্তু সুমন যা বলেছিলেন, সেরকম কোনো ইঙ্গিত পুলিশ পায়নি।
মনোবিদের ব্যাখ্য়া
মনোবিদ স্বাগ্নিক মুখোপাধ্যায় ডিডাব্লিউকে বলেছেন, সুমন সম্ভবত দীর্ঘদিন ধরে অবসাদে ভুগছিলেন। যার ফলে মনের মধ্যে একটা ভয় কাজ করছিল। ভ্রান্তি থেকে মানুষ এত বেশি ভয় পেয়ে যায় যে, তখন আত্মহত্যা পর্যন্ত করে ফেলে। ছেলেটি বা তার পরিবার কারো সঙ্গে মেলামেশা করতেন না। এরকম ক্ষেত্রে অনেক সময় সিজোফ্রেনিয়াও হয়ে যায়। দীর্ঘদিন ধরে অবসাদগ্রস্ত হলে এবং তার চিকিৎসা না হলে মানসিক স্থিতি আরো খারাপ হয়।
কলের মিস্তিরি যা বললেন
অসিত মণ্ডল প্লাম্বার। তিনি ডিডাব্লিউকে বলেছেন, ''আমি দেড় বছর আগে ওই ফ্ল্যাটে পাইপের এবং পাম্পের কাজ করেছি। ছেলেটা তখন বাড়িতে ছিল না। তার বাবা ছিল। আমার দেখে অস্বাভাবিক কিছু মনে হয়নি। খবরটা শোনার পরে আমি অবাক। এরকম ঘটনা যে ঘটবে আমি একবারের জন্যও ভাবতে পারিনি।''
প্রতিবেশীর কথা
তপন দে হলেন সুমনরাজদের প্রতিবেশী। তিনি বলেন, ''পুলিশের উপস্থিতিতে স্থানীয় মানুষ তালা ভাঙে। তিন ঘরে তিনজনের ঝুলন্ত দেহ ছিল। আমার মনে হলো, ৭৫ বছরের বৃদ্ধ নিজেকে পাখার সঙ্গে ফাঁস দিয়ে ঝুলতে পারবেন না। আমার মনে হয় সুমনই তার মা-বাবাকে আগে মেরে, তারপর সে নিজে ঝুলে পড়েছে। সুমন কোনো কাজকর্মে করতো না এবং হতাশায় ভুগছিল। একটু অস্বাভাবিক ব্যবহার ছিল। পাড়ার ছেলেরা ওকে 'পাগল পাগল' বলে ক্ষ্যাপাতো।''
মুরগি বিক্রেতার বক্তব্য
স্থানীয় মুরগি বিক্রেতা কুন্দন সিং বলেছেন, সুমন তার কাছ থেকে মাংস কিনে নিয়ে যেতো। শেষবার সে মাংস কিনেছে মাসখানেক আগে। সে হাসিখুশি ছেলে ছিল। ৩১ ডিসেম্বর সুমনের পাশের ফ্ল্যাটেই কুন্দনরা পার্টি করেছেন।