বাবরি মসজিদ ভাঙার কি খুব দরকার ছিল
৬ ডিসেম্বর ২০১৪মৌলবাদী হিন্দু সংগঠন বিশ্ব হিন্দু পরিষদ এবং অন্য অনুরূপ সংগঠনগুলি বাবরি মসজিদ ভেঙে হিন্দু জাতীয়তাবাদের যে বার্তা দিতে চেয়েছিল তা বুমেরাং হয়েছে৷
রাজনৈতিক, ঐতিহাসিক, ধর্মীয় তথা সামাজিক বিতর্ক আজও তাড়া করে যাচ্ছে আমাদের শান্ত জীবনকে৷ বাবরি মসজিদ ধ্বংসের বাইশ বছর পরে অযোধ্যায় একটা বিবাদিত স্থলে রাম মন্দির ছিল, নাকি মসজিদ ছিল সেই বিতর্কিত ইস্যু নিয়ে আবার দেশকে রাজনৈতিক রণক্ষেত্রের দিকে ঠেলে দেয়ার কোন মানে হয় না, ঐতিহাসিক বা প্রত্নতাত্বিক প্রমাণ ও তথ্য উপাত্ত যাই থাকুক না কেন৷ কেন মেনে নেয়া হচ্ছে না ২০১০ সালে এলাহাবাদ হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের রায়? আদালতের রায় তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতেই দেয়া হয়৷ ভারতের পুরাতাত্ত্বিক বিভাগ বিতর্কিত জায়গায় খনন করে বাবরি মসজিদের আগে ঐখানেই হিন্দুদের এক বড় মন্দির থাকার অকাট্য নিদর্শন পেয়েছে৷ নতুন করে কেন মুসলিম সংগঠনগুলি ধর্মের জিগির তুলে অতীতের ক্ষতকে আবার খুঁচিয়ে রক্তাক্ত করতে চাইছে? দাবি তুলছে মসজিদ গড়তেই হবে ঐ বিতর্কিত স্থানে৷ কি দরকার অযথা কালো পতাকা তুলে জাতীয় কালো দিবস পালনের জিগির তোলা? নতুন করে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা সৃষ্টি করা? এই বিতর্ক জিইয়ে রাখতে কেন হাইকোর্টের রায়কে মেনে না নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে যেতে চাইছে কিছু কিছু মুসলিম ধর্মীয় সংগঠন৷ আর সুপ্রিম কোর্ট যদি হাইকোর্টের রায় বহাল রাখেন, তাহলেও কি তারা অন্য কোনো পথে যেতে চাইবে? হাইকোর্টের রায় বাদি বিবাদিপক্ষ উভয়ের ইচ্ছা মোতাবেক হবেই এমনটা আশা করা যায় না৷একটা সন্তোষজনক সমাধানই তো দিয়েছে হাইকোর্ট৷ সেটা হলো, বিতর্কিত জমি তিনভাগে ভাগ করে এক-তৃতীয়াংশ মুসলিমদের মসজিদ তৈরির জন্য, আর দুটি ভাগের একটি রাম মন্দিরকে, অন্যটি হিন্দুদের নির্মোহ আখড়াকে৷ সুপ্রিম কোর্টে যে-কোনো পক্ষ যেতেই পারে, তবে আমার মনে হয়না, বিতর্ক জিইয়ে রাখলে কারোরই লোকসান বই লাভ হবে না৷
আমি মানছি গোড়ায় ভুলটা করেছিলেন প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী৷ রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে বিশ্ব হিন্দু পরিষদের সঙ্গে পরোক্ষ সমঝোতা করে বিবাদিত মন্দিরের বন্ধ তালা খোলার আদেশ দিয়ে এমনটাই অভিযোগ৷ আর সেই সুযোগ নিয়ে বিজেপির শীর্ষ নেতা এল.কে আডবানি শুরু করেন রাজনৈতিক রথযাত্রা, যাতে নিজেকে দলের প্রধান কান্ডারি হিসেবে তুলে ধরতে পারেন৷ ভবিষ্যতে নিজেকে দেশের প্রধানমন্ত্রী পদের দাবিদার হিসেবে খাড়া করতে পারেন৷ কিন্তু তাঁর সেই স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে গেল৷ মাঝখান থেকে বয়ে গেল সাম্প্রদায়িক রক্তগঙ্গা৷ এটাও আমার অভিযোগ, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী প্রয়াত নরসিমহা রাও ১৯৯২-এর ৬ই ডিসেম্বর বাবরি মসজিদ ভাঙার ষড়যন্ত্রের আঁচ পেয়েও তা আটকাবার আগাম কোনো ব্যবস্থা নেননি৷ এখন বিজেপি সরকার কেন্দ্রে৷ কট্টর হিন্দু সংগঠনগুলিও অযোধ্যার কথিত রামচন্দ্রের জন্মস্থানে মন্দির প্রতিষ্ঠায় মরিয়া৷ মোদী যে ধর্মীয় মেরুকরণ চান না, সেটা তাঁকে প্রমাণ করতে হবে৷ চোখ বুজে থাকলে চলবে না৷ নাহলে নতুন গোধরা কান্ডের পুনরাবৃত্তি হলে অবাক হবো না আমি৷