ইমরানের প্রতিবাদ মিছিল
৯ অক্টোবর ২০১২পাখির মতো গুলি করে মারা – ড্রোন বিমান হামলায় যুক্তরাষ্ট্র যেভাবে মানুষ মারছে তাকে অন্যভাবে ব্যখ্যা করতে নারাজ ইমরান খান৷ এভাবে মানুষ মারা বন্ধ করতে এবার রাস্তায় নেমেছেন তিনি৷
ইসলামাবাদ থেকে প্রতিবাদ মিছিল শুরু করে দক্ষিণ ওয়াজিরিস্তানের দিকে এগোচ্ছিলেন তেহরিক-ই ইনসাফ নামের রাজনৈতিক দলের প্রধান ইমরান৷ ২০০৪ সাল থেকে তালেবান আর আল-কায়েদার সশস্ত্র যোদ্ধাদের হত্যা করার উদ্দেশ্যে চালকবিহীন বিমান থেকে ওই অঞ্চলেই বেশির ভাগ হামলা চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র৷ ইমরান বলছেন, এভাবে নির্বিচারে মানুষ মারা বন্ধ করা উচিত এবং পাকিস্তান সরকারের উচিত এ ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের ওপর চাপ প্রয়োগ করা৷ কিন্তু পাকিস্তানকে ১৯৯২-র বিশ্বকাপ জেতানো ইমরান মনে করেন, সরকার এ ব্যাপারে যে ভূমিকা পালন করছে তা খুবই নিন্দনীয়৷ ইসলাম ধর্মবিরোধী ছবির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে একদিন ছুটি ঘোষণা করলেও ড্রোন হামলা বন্ধ করার দাবিতে তেমন কোনো পদক্ষেপ নেয়নি বলে সরকারের তীব্র সমালোচনা করেছেন ইমরান৷
রবিবার দক্ষিণ ওয়াজিরিস্তানের দিকে যাবার সময় মহাসড়কে মিছিলে বাধা দেয় সেনাবাহিনী৷ সমর্থকদের উপস্থিতিতে একটি গাড়িতে দাঁড়িয়ে ইমরান বলেন, ‘‘ড্রোন হামলা পাকিস্তানের জনগণের মানবাধিকার বিরোধী৷ আজ আমরা যুক্তরাষ্ট্রকে এই বার্তা পাঠাতে চাই যে, যত বেশি ড্রোন হামলা হবে তাদের বিরুদ্ধে ঘৃণা ততই বাড়বে৷ এর ফলে পার্বত্য এলাকার মানুষ তোমাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরবে এবং ড্রোন হামলা চালিয়ে তা থামানো যাবে না৷''
মিছিলে যুক্তরাষ্টের ৩০ জন নাগরিকও অংশ নেন৷ নিউ ইয়র্ক থেকে আসা বিলি কেলি তাঁদেরই একজন, ভিয়েতনাম যুদ্ধে অংশ নেয়া বিলি বলেন, ‘‘এ ধরণের হত্যা বন্ধ করার জন্য অবশ্যই যুক্তরাষ্ট্র সরকারের ওপর চাপ বাড়াতে হবে৷'' পাকিস্তান সরকার তালেবান এবং আল-কায়েদার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিচ্ছে না বা নিতে পারছেনা – এমন যুক্তিতেই ৮ বছর ধরে ড্রোন হামলা চালিয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র৷ দেশটির দাবি এ হামলায় তালেবান আর আল-কায়েদার সদস্যরাই মারা যাচ্ছে৷ তবে দ্য বুরো অফ ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজম এক রিপোর্টে জানিয়েছে, আট বছরে ১২৩২ থেকে ১৩৬৬ জনের মতো লোক মারা গেছে ড্রোন হামলায়, যার মধ্যে ৪৭৪ থেকে ৮৮৪ জন বেসামরিক নাগরিক৷
অথচ পাকিস্তান সরকার এর বিরুদ্ধে কোনো শক্ত অবস্থান নিচ্ছে না৷ না নেয়ার কারণ জানাতে গিয়ে ইমরান বলেন, ‘‘এই সরকার যুক্তরাষ্ট্রের হাতের পুতুল৷ যুক্তরাষ্ট্র যেভাবে বলছে ঠিক সেভাবেই কাজ করছে তারা৷ ওদের নিন্দা জানানো ভণ্ডামি ছাড়া কিছুই নয়৷ সরকার লুকিয়ে ড্রোন হামলা চালানোর অনুমতি দিয়ে জনগণকে বোকা বানাতে আবার তার নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দিচ্ছে৷''
সেনাবাহিনীর সদস্যরা রাত হলে সেখানে থাকা ঝুঁকিপূর্ণ বলায় ইমরান খান এক পর্যায়ে সমর্থকদের নিয়ে ফিরে আসেন৷
এদিকে ড্রোন হামলা বন্ধ করার দাবিতে করা এ মিছিলেরও সমালোচনা হচ্ছে পাকিস্তানে৷ সে দেশের কমিউনিস্ট নেতা সরূপ ইজাজ প্রশ্ন তুলেছেন, ‘‘তালেবান এবং পাকিস্তান সেনাবাহিনী তো বোমা মেরে আরো বেশি লোক মারছে৷ তার কোনো প্রতিবাদ নেই কেন?'' তালেবানও সমর্থন দেয়নি ড্রোনবিরোধী মিছিলকে৷ ইমরান খানের এ প্রতিবাদকে ‘‘রাজনৈতিক নাটক'' বলে আখ্যায়িত করেছে তারা৷
এসিবি/ডিজি (রয়টার্স)