বাড়ছে বিশ্বের জনসংখ্যা, জার্মানিতে কমতির দিকে
১ নভেম্বর ২০১১বিশ্ব জনসংখ্যার অব্যাহত বৃদ্ধি স্বভাবতই নতুন চ্যালেঞ্জ বয়ে আনবে৷ এবং তার মোকাবিলার জন্য রাজনীতিকদের নতুন দায়িত্বের মুখোমুখি হতে হবে৷ কিন্তু ভয় পাওয়ার কোন কারণ নেই৷ সাতশো কোটি মানুষের এই বিশ্ব ভেঙে পড়বেনা৷ সারা দুনিয়ায় যে-সম্পদ আছে তা এখনও পর্যন্ত যথেষ্ট৷ সাতশো কোটির এই সংখ্যাটাকে নিয়ে বেশি ব্যস্ত না থেকে বরং যে-প্রশ্নটাকে নিয়ে আমাদের বেশি ব্যস্ত হওয়া উচিত, সেটা হলো - এর রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রভাব কী হবে?
জনসংখ্যা সবচেয়ে বেশি বাড়ছে বিশ্বের দরিদ্রতম অঞ্চলগুলোতে৷ বিপরীতে ইউরোপে বৃদ্ধ মানুষের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে৷ ইউরোপীয় ইউনিয়ন হিসেব কষে দেখেছে, তার জীবন যাত্রার উঁচু মান রক্ষা করতে, তার সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা টিকিয়ে রাখতে ২০২০ সাল পর্যন্ত দরকার হবে বিদেশ থেকে আড়াই কোটি অভিবাসী মানুষ৷ আগামী কয়েক দশকে বিশ্বের একমাত্র বড় অঞ্চল হিসেবে ইউরোপের জনসংখ্যাই কমবে - ২০৫০ সাল নাগাদ ৭৩১ মিলিয়ন থেকে তা কমে দাঁড়াবে ৬৬৪ মিলিয়ন৷ এর ফলে ইউরোপের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গতি মন্থর হবে৷
বলা বাহুল্য, বিশ্বব্যাপী এই পরিস্থিতির ফলপ্রসূ রাজনৈতিক মোকাবিলা করতেই হবে৷ কেননা জনসংখ্যার ক্রমবৃদ্ধি বিশ্বব্যাপী নিরাপত্তা, স্থিতিশীলতা, সমৃদ্ধির ওপর বড় রকমের প্রভাব রাখবে৷ ১০০ বছর আগে বড় বড় শহরগুলোতে যেখানে ২২০ মিলিয়ন মানুষ বাস করতো সেখানে ২০৫০ সালে সেই সংখ্যা ৫০০ কোটি ছাড়িয়ে যাবে৷ যার জমি নেই, নেই পানি পাওয়ার উৎস সে পাড়ি জমাবে সমৃদ্ধ উন্নত দেশের দিকে৷
ইউরোপের দেশগুলো পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে প্রতিবেশীদের সঙ্গে ঐকমত্যের ওপর আস্থা রাখে৷ কিন্তু যেখানে দৃষ্টিটা মূল্যবান কাঁচামালের দিকে, সেখানে এক একটি দেশ তার নিজ নিজ পথে যেতে উৎসাহী৷ কিন্তু জাতীয় রাষ্ট্রের ধ্যানধারণার ভাবনার ওপর ভিত্তি করে বিশ্বের সাতশো কোটি অথবা নয়শো কোটি জনসংখ্যার জন্য নীতি নির্ধারণ করা যাবেনা৷ বরং প্রয়োজন হবে বহুমুখী প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো৷ এর কিছু দৃষ্টান্ত রয়েছে আমাদের সামনে যেমন লিবিয়ায় ন্যাটোর সমর্থন পাওয়া গেছে, আন্তর্জাতিক অপরাধ দমন আদালতের ক্ষমতা জোরদার করা হয়েছে৷ নয়শো কোটি মানুষের স্বার্থে রাজনীতি করতে হলে নিজেদের স্বার্থরক্ষায় রাশ টানতে হবে৷ করতে হবে সম্পদের আরো সুষম বণ্টন৷ উন্নয়ননীতিকে শুধু মানবিক সাহায্যের এক মাধ্যম হিসেবেই নয়, দেখতে হবে বহুমাত্রিক এক নীতি হিসেবে - যার প্রভাব পড়বে উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশগুলোর নিজস্ব ভোগ্যপণ্য ব্যবহারের অভ্যাসের ওপর, তাদের অর্থনৈতিক নীতির ওপর৷
ধনী দেশগুলোর অর্থনৈতিক স্বার্থের কারণে, ইউরোপের কৃষিখাতে ভর্তুকির কারণে যে-অসমতার সৃষ্টি উন্নয়নসাহায্যনীতি দিয়ে তা পূরণ করা যাবেনা৷ বিশ্বরাজনীতিকে যদি এই চ্যালেঞ্জগুলোর ফলপ্রসূ মোকাবিলা করতে হয়, তাহলে ভোটারদের সামনে এটা স্পষ্ট করে তুলতে হবে যে, একটি অঞ্চলের উন্নয়নের সঙ্গে আর একটি অঞ্চলের অনুন্নয়নের যোগ রয়েছে৷ সমৃদ্ধির ক্ষেত্রে তীব্র ফারাকটা আর চিরকাল বহাল রাখা যাবেনা৷ নয়শো কোটি মানুষের জন্য চাই এমন এক রাজনীতি যা সবার জন্য সমান অধিকার, সমান দায়দায়িত্ব, সমান সুযোগ ও ঝুঁকির নিশ্চয়তা দেবে৷
প্রতিবেদন: উটে শেফার/ আব্দুল্লাহ আল-ফারূক
সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন