1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বাজেট ২০২১-২২: ব্যবসায় গতি ফেরানোর চ্যালেঞ্জ

২৭ মে ২০২১

করোনার ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে শুরু করেছেন বৃহৎ শিল্প উদ্যোক্তারা৷ কিন্তু বিপাকে এখনও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও সিএসএমই উদ্যোক্তারা৷ অর্থনীতিবিদরা মনে করেন আসছে বাজেটে তাদের প্রতি বাড়তি মনযোগ প্রয়োজন সরকারের৷   

https://p.dw.com/p/3u3J4
Bangladesch Textilfabrik
ছবি: picture alliance/ZUMA Press

গত এক বছরে কয়েক দফা দোকান বন্ধ রেখেছেন ঢাকার ব্যবসায়ী শাহ আলম৷ বিভিন্ন শপিং মলে তিনটি দোকানের মালিক তিনি৷ স্বাভাবিক সময়ে বছরে এক একটিতে গড়ে বিক্রি ৬০ লাখ টাকা৷ তার অর্ধেকটাও হয়নি ২০২০-২১ সালে৷ ‘‘গত বছরের মার্চের পর থেকে এখন পর্যন্ত আমরা বেচাবিক্রিতে মাইনাসে আছি৷ সামনে কেমন যাবে জানি না৷ মুনাফাতো নাই-ই৷ ১০ লাখ টাকা খরচ হলে ছয় লাখ টাকার ব্যবসা হয়, চার লাখ টাকাই নিজের পুঁজি থেকে যায়,’’ বলেন শাহ আলম৷
তার মতো ৫৩ লাখের বেশি ব্যবসায়ী আছেন বাংলাদেশে৷ করোনার কারণে তাদের বিক্রিতে যে ভাটা নেমেছে তার প্রভাব পড়েছে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে থাকা ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের উদ্যোক্তাদের উপরে৷ তাদেরই একজন রংপুরের শামছিয়ারা জামান৷ তিনি ‘সূচীশৈলী হ্যান্ডিক্রাফটস’ নামের একটি কুটির শিল্পের উদ্যোক্তা৷ রংপুরে তার প্রতিষ্ঠানে করোনার আগে ৩০ জন কর্মী কাজ করতেন৷ এখন করছেন পাঁচজন৷ ‘‘যখন নিয়মিত চালু ছিল তখন কারখানায় ১৫ জন আর বাইরে কাজ করত ১৫ জন৷ প্রতিদিন কখনও ১৫ হাজার, ৩০ হাজার টাকা এমনকি কখনও এক লাখ টাকার পণ্যও বিক্রি হয়েছে৷ করোনার পর এখন দৈনিক গড়ে এক হাজার টাকাও হচ্ছে না,’’ বলেন এই নারী উদ্যোক্তা৷

ফাহমিদা খাতুন


অবশ্য এই পরিস্থিতি অনেকটাই কাটিয়ে উঠতে পেরেছেন রপ্তানিমুখী বৃহৎ শিল্পের উদ্যোক্তারা৷ ক্রেতাদের কাছ থেকে তারা কার্যাদেশ ফিরে পেতে শুরু করেছেন৷ তাতে গত বছরের ধাক্কা অনেকটা কাটিয়ে উঠেছেন৷ যেমন, রাইজিং গ্রুপ ঢাকা নামের একটি পোশাক শিল্প রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের উদ্যোক্তা মাহমুদ হাসান খান৷ ফ্রান্স, যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে তিনি পোশাক রপ্তানি করেন৷ মাহমুদ বলেন, ‘‘কোভিডের পরে আমরা ওভেন পোশাক উৎপাদন কমিয়ে দেই, নিট বাড়াই৷ কারণ এতে লিড টাইম কমছে, অন্যদিকে মানুষ এখন বাসা থেকে কাজ করায় নিট পোশাকের চাহিদা বেড়েছে৷... গত বছরের যে মাইনাস ছিল তার অনেকটাই কাটিয়ে উঠতে পেরেছি আমরা৷’’


স্বস্তিতে বড়রা, বিপদে ছোটরা
গত বছর শুধু তৈরি পোশাক খাতের জন্য আলাদা করে পাঁচ হাজার কোটি টাকার ঋণ প্রণোদনা দিয়েছিল সরকার৷ বৃহৎ শিল্পের জন্য মোট ঋণের পরিমান ছিল ৪০ হাজার কোটি টাকার৷ সরকারের প্রণোদনা আর রপ্তানিতে গতি ফেরায় স্বস্তিতে তাই মাহমুদ হাসানরা৷ 
কিন্তু এই স্বস্তি এখনও আসেনি শাহ আলমের মতো দোকান মালিক বা শামছিয়ারার মতো ক্ষুদ্র শিল্পের উদ্যোক্তাদের৷ তাদের ব্যবসায় গতি ফেরেনি৷ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা করোনাকালীন প্রণোদনার তালিকায় নেই৷ কুটির, ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি শিল্প খাতের (সিএসএমই) জন্য ২০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ হলেও শামছিয়া তার নাগাল পাননি৷ তিনি বলেন, ‘‘ব্যাংকে খোঁজ নেয়ার পর প্রণোদনার ঋণ পেতে আমাকে যতরকম কারিকুলাম দেখালো তাতে আমি কেন, আমাদের যারা আছেন তারা কেউই আসলে পাননি৷’’
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, ‘‘বেশিরভাগ কুটির শিল্পের উদ্যোগ অনানুষ্ঠানিক৷ লাইসেন্স, কর শনাক্তকরণ নম্বর নেই, ঋণের জন্য যে বন্ধক দরকার হয় সেটিও থাকে না৷ আবার যাদের আছে তারাও ব্যাংকে গেলেও যে সহজেই পেয়ে যাচ্ছে তা নয়৷ যে কারণেই তাদের জন্য যে ২০ হাজার কোটি টাকার ব্যাংকের তারল্য রাখা হয়েছিল তার ছাড় অনেক কম হয়ছে৷’’ 
বাজেটে তাদের চাওয়া
মাহমুদুর রহমান মনে করেন, তৈরি পোশাক খাতের জন্য প্রণোদনা নয় বেশি প্রয়োজন নীতিগত সহায়তা৷ যে ধরনের ব্যবসা নীতিই নেয়া হোক তার ধারাবাহিকতা দেখতে চান তিনি৷ পাশাপাশি গ্যাস, বিদ্যুতের মতো শিল্পের অবকাঠামোগত সহায়তাগুলো যেন বজায় থাকে৷ ‘‘তা নিশ্চিত না হলে প্রণোদনা দিয়ে শিল্প বেশিদিন টেকানো সম্ভব হবে না,’’ বলেন এই রপ্তানিকারক৷
শাহ আলম বাজেটে আলাদা কিছু প্রত্যাশা করেন না৷ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের সরকার কোন প্রণোদনা দিবে তেমন সম্ভাবনা নাই, তার অবকাঠামোও নেই; এমন বাস্তবতা মেনে নিচ্ছেন তিনি৷ নতুন করে কোন করের বোঝা যাতে না চাপে সেটিই তার আশা৷
অন্যদিকে শামছিয়ারার চাওয়া প্রণোদনা না হোক তার পুরনো ঋণের সুদ যেন মওকুফ হয়৷ টাকা পরিশোধের বেশি সময় যাতে পাওয়া যায়৷   
বৃহৎ, মাঝারি বা ক্ষুদ্র; নতুন বাজেটে কোন ধরনের উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীদের প্রতি বেশি মনযোগ প্রয়োজন? অর্থনীতিবিদ ফাহমিদা খাতুন মনে করেন বাজেটে তাদের জন্যই বেশি মনযোগ থাকা উচিত যারা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত৷ ‘‘ব্যবসার দিক থেকে দেখতে গেলে যারা বেশি ক্ষুদ্র তাদের প্রতি মনযোগ দিতে হবে৷ তাদের ব্যবসা বন্ধ করে দিতে হয়েছে, ছাঁটাই করতে হয়েছে কর্মীদেরকে, ব্যবসার আকার ছোট করতে হয়েছে৷ সুতরাং সেইদিকেই মনযোগটা দেয়া উচিত৷’’
এই অর্থনীতিবিদ বলেন, ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা হয়েছে বলেই তাদের অবদান কম এমনটা মনে করার কারণ নেই৷ পরিসংখ্যান অনুযায়ীও, অর্থনীতিতে সিএসএমই খাতের ২৫ শতাংশ অবদান, নির্ভরশীল তিন কোটি মানুষ৷ দেশের অর্থনীতির চাকা সচল করার জন্যই বাজেটে তাদের সহযোগিতা দিতে হবে৷ 
তার মতে আগামী বাজেটের মূল চ্যালেঞ্জই হচ্ছে ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড ফেরানো৷ সেটি করতে হবে সরকারের ব্যয় বাড়িয়ে চাহিদা তৈরি ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধির মাধ্যমে৷ ভোক্তাদের হাতে টাকা গেলে উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীরাও তাদের পণ্য ও সেবা বিক্রি করতে পারবেন৷ তাই গোটা এই চক্রটিতেই সরকারের মনোযোগ দেয়া উচিত৷ 

মাহমুদুর রহমান

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান