‘বাজেট মানেই জনগণের আতঙ্ক’
৭ জুন ২০১৩বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘নির্বাচনকে সামনে রেখে সরকার এই বাজেট দিয়েছে৷ এটা নির্বাচনী বাজেট, জনতুষ্টির বাজেট৷ বর্তমান সরকারের এই বাজেট আগের বাজেটের ধারাবাহিকতা৷ গুণগত কোন পরিবর্তন নেই বাজেটে৷ বিশাল একটা বাজেট দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী৷ বড় বাজেট নিয়ে আমার কোনো আপত্তি নেই৷ তবে বড় কথা হলো এর বাস্তবায়ন কীভাবে হবে৷ কারণ, এই বাজেট বাস্তবায়ন কঠিন৷''
তিনি আরও বলেন, বেসরকারি বিনিয়োগ কমে গেছে, বিদ্যুৎ-গ্যাসের দাম বাড়তি, খাদ্যে মূল্যস্ফীতি বাড়ছে, কৃষিপণ্যের দাম কমবে তাও না৷ রাজস্ব আয় কঠিন হবে৷ ভ্যাট, ট্যাক্স বাড়িয়ে দিলে জনগণের কষ্ট হবে৷ সার্বিকভাবে বলা যায়, এই বাজেট বাস্তবায়ন কঠিন হবে৷ গত বারের মতো এবারের বাজেটেও কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেয়া হয়েছে৷ সরকারতো চাপে আছে৷ চাপে পড়েই কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দিয়েছে৷ এতে সত্ ব্যবসায়ীরা বিপদে পড়বে৷
বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ প্রফেসর ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘নির্বাচনী বছর হিসাবে বাজেটে সরকারের বেশ কিছু উন্নয়নমালার ধারাবাহিকতা রক্ষার পাশাপাশি সামাজিক ও জনকল্যাণমূলক কর্মকাণ্ডের উপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে৷ অবশ্য রাজস্ব বাজেটের বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বর্তমান সরকার জুলাই থেকে নির্বাচনের আগ পর্যন্ত সময় পাবে৷ বাজেটকে ঘিরে যে প্রত্যাশাটি সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পায়, তা হচ্ছে তার সঠিক বাস্তবায়ন৷''
ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী আরও বলেন, ঘোষিত বাজেটে যে বিশাল পরিমাণ রাজস্ব আদায়ের কথা বলা হয়েছে, তা কতটুকু আদায় হবে সে ব্যাপারে সন্দিহান৷ কেননা আমাদের দেশে কর ঠিকমতো না দেয়ার প্রবণতা বিদ্যমান রাখছে৷ মূল্যস্ফীতির হার আগামী বছরে ৭ শতাংশ হবে বলা হলেও নির্বাচনী বছরে এটা বজায় রাখা কষ্টসাধ্য হবে৷ নতুন বাজেটে সরকার কৃষি খাতের ভরতুকি একটি ভাল উদ্যোগ৷ চলতি অর্থবছরেই দেখা গেছে যে, কৃষি খাতের ভরতুকি এবং ব্যবস্থাপনার গুণগত মান উন্নত হওয়ায় কৃষিজীবীরা অধিকাংশ ক্ষেত্রে লাভবান হয়েছে৷
অবশ্য পচনশীল কৃষিজাত দ্রব্য উত্পাদন করে হরতালের কারণে কোনো কোনো খাতে কৃষকরা ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে৷ কৃষিজাত পণ্যের ক্ষেত্রে রিসার্চ এণ্ড ডেভেলপমেন্টের মাধ্যমে সরেজমিন তদন্ত সাপেক্ষে যেগুলো আমদানি হয় তার বিকল্প পণ্য দেশে উত্পাদনের ব্যবস্থা করতে হবে৷ পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশের যে সমস্ত স্থানে তামাক উত্পাদন বেড়ে গেছে সেখানে কৃষি অধিদপ্তরকে শক্তিশালী করে কৃষিজাত পণ্য উত্পাদনে সরকারের উদ্যোগ নেয়া দরকার৷
এদিকে অর্থনীতিবিদরা বলছেন, শেয়ারবাজার চাঙ্গা করতে আগামী অর্থবছরের বাজেটে অর্থমন্ত্রী কিছু প্রণোদনা দেয়ার প্রস্তাব করেছেন৷ অর্থমন্ত্রী বলেন, পুঁজিবাজার স্থিতিশীলতায় ও উন্নয়নে সরকার দৃঢ়প্রতিজ্ঞ৷ পুঁজিবাজারের উন্নয়নে নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করে অর্থমন্ত্রী বলেন, ইতিমধ্যে ডিমিউচুয়ালাইজেশন বিল সংশোধনে পাশ হয়েছে এবং সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন রুলস-২০১২-ও প্রণয়ন করা হয়েছে৷ মিউচুয়াল ফান্ড বিধিমালা সংশোধন এবং আন্তর্জাতিক মানের সার্ভেইলেন্স সফটওয়্যার স্থাপন করা হয়েছে৷