1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘বাঘের পিঠে চড়লে যা হয়, মমতার অবস্থাও তাই’

সাক্ষাৎকার: আরাফাতুল ইসলাম৭ অক্টোবর ২০১৪

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জঙ্গিদের প্রতি নমনীয় নয় বলেই মনে করেন ব্লগার, প্রাবন্ধিক গর্গ চট্টোপাধ্যায়৷ তবে তাঁর আশেপাশের মানুষদের মধ্যে রয়েছে সমস্যা৷ ডয়চে ভেলেকে দেয়া সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেন তিনি৷

https://p.dw.com/p/1DRYr
Mamata Banerjee Ministerpräsidentin West Bengal
ফাইল ফটোছবি: Prabhakar Mani Tewari

বর্ধমান বিস্ফোরণকে কেন্দ্র করে এখন তোপের মুখে রয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ মাইক্রোব্লগিং সাইট টুইটারে তাঁর কর্মকাণ্ডের সমালোচনায় সরব অনেকে৷ মমতা এবং তাঁর দল তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে অভিযোগ অনেক৷ তবে সেগুলোর কি আদৌ কোনো ভিত্তি আছে? ডয়চে ভেলের সঙ্গে এই নিয়ে কথা বলেছেন কলকাতার ব্লগার গর্গ চট্টোপাধ্যায়৷

ডয়চে ভেলে: গত ২ অক্টোবর বর্ধমানে বিস্ফোরণের ঘটনার পর, টুইটারে বেশ দ্রুতই অনেকে তৃণমূল কংগ্রেস এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দিকে আঙুল তুলেছেন৷ বলা হচ্ছে, মমতা নাকি জঙ্গিদের প্রতি নমনীয় মনোভাব প্রদর্শন করছেন৷ আর সে কারণেই এমন পরিস্থিতি৷ বিষয়টি আপনি কিভাবে দেখছেন?

গর্গ চট্টোপাধ্যায়: মমতা বন্দোপাধ্যায় জঙ্গিদের প্রতি সজ্ঞানে নমনীয়, এমন প্রচার ভুল৷ তবে বেশ কিছু এলাকায় তৃণমূল কংগ্রেসের সাথে যুক্ত হয়েছেন এমন কিছু মানুষ, যারা পশ্চিমবঙ্গে জঙ্গি ও জামাতি কার্যকলাপ নিয়ে নমনীয় তো বটেই, হয়ত গোপনে মদতও দিচ্ছেন এমন মানবতা-বিরোধী কর্মকাণ্ডে৷ রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতার জন্য তৃণমূল নেত্রী এদের গিলতেও পারছেন না, আবার উগ্রাতেও পারছেন না – বাঘের পিঠে চড়লে যা হয়৷

বর্তমান সরকার জঙ্গিবাদ ও জামাতি রাজনীতিকে প্রশ্রয় দেয়, এই প্রচারণা এমন ধার পেয়েছে, তার কিছু কারণ আছে৷ অনেকেই হয়ত জানেন না যে কলকাতার বুকে লক্ষাধিক মানুষের মিছিল করেছে পশ্চিমবঙ্গের জামাতপন্থি মৌলবাদী গোষ্ঠীগুলি দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মুক্তির দাবিতে, যুদ্ধাপরাধী বিচার প্রক্রিয়ার বিরোধিতা করে৷ অথচ মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের স্বপক্ষে কলকাতায় মিছিল আটকে দিয়েছে সরকারের পুলিশ (রাজ্যের পুলিশমন্ত্রী হলেন মমতা বন্দোপাধ্যায়)৷ এই গোষ্ঠীগুলিকে তোষণ করে এবং হাসান ইমরান-এর মতো জামাত-ঘনিষ্ট বলে খ্যাত ব্যক্তিদের দলে উচ্চ আসন দিয়ে তৃণমূল কংগ্রেস পশ্চিমবঙ্গের মুসলমানদের ভোটকে নিজেদের কাছে রাখতে চাইছে৷ এর মাধ্যমে শুধু পশ্চিমবঙ্গের অধিকাংশ মুসলমানকে অপমান করা হচ্ছে তাই নয়, সংখ্যাগুরু সম্প্রদায়ের মধ্যেও বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করা হচ্ছে৷

পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে বাংলাদেশের জামায়াতে ইসলামীর সম্পর্ক নিয়ে টুইটারে বেশ তোলপাড় দেখা যাচ্ছে৷ বাস্তবে বিষয়টি কতটা সত্য বলে আপনি মনে করেন?

যে কোনো রাজনৈতিক নেতৃত্বের মতোই মমতা বন্দোপাধ্যায় রাজনৈতিক ক্ষমতা ধরে থাকার প্রচেষ্টায় নিজের সকল কার্যকলাপকে নির্ধারণ করেন৷ এই প্রক্রিয়ার ফলে পশ্চিমবাংলার নানা জেলায়, বিশেষত উত্তর ও দক্ষিণ চব্বিশ পরগনায় বেশ কিছু সাম্প্রদায়িক মনোভাবাপন্ন গোষ্ঠী তাদের স্বার্থস্বিদ্ধি করতে তৃণমূলের ‘ছাতা'-কে ব্যবহার করছে৷ নিজ স্বার্থে, এলাকায়ে ভোট করাতে, যে লোকবল ও অন্যান্য জিনিস প্রয়োজন, সে স্বার্থে তৃণমূল দল-ও এদের আশকারা দিয়েছে৷ সীমান্তের ওধারে সাতক্ষীরা – জামাতের বড় ঘাঁটি৷ অনেকক্ষেত্রেই সীমান্তের পূর্ব দিকে জামাতি নাশকতার পর তাদের আশ্রয় হয় পশ্চিমে – সহানুভূতি-সম্পন্ন গোষ্ঠির সাহায্যে৷ এই গোষ্ঠীগুলির সাথে তৃণমূলের স্থানীয় নেতৃত্বের যোগাযোগই আসলে মমতা বন্দোপাধ্যায়র দিকে আঙুল ওঠার প্রধান কারণ৷

এছাড়াও আছে সাম্প্রতিক সারদা কেলেঙ্কারিতে তৃণমূলের অনেক শীর্ষ ব্যক্তির নাম চলে আশা – এবং এ কথা প্রকাশ যে সারদা কেলেঙ্কারির বেশ কিছু লুটের টাকা তৃণমূলের জামাত-ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিদের মাধ্যমে ওপারে পাচার হয়ে গিয়েও থাকতে পারে৷ তৃণমূল এরই অংশ এদের কেউ কেউ – যদিও মমতা বন্দোপাধ্যায় ব্যক্তিগত ভাবে ওপারের জামাতের নেতা-কর্মীদের আশ্রয় দেবার ব্যাপার তদারকি করছেন, এটা আমার মনে হয় না৷ তবে এমন আশ্রয়ের অনুকুল পরিবেশ আজ পশ্চিমবঙ্গে বিরাজ করছে৷

Garga Chatterjee
ব্লগার গর্গ চট্টোপাধ্যায়ছবি: Garga

বিশ্বের নানা দেশে বিভিন্ন সময় অনলাইন আন্দোলনের সঙ্গে রাজপথের আন্দোলনের যোগসূত্র দেখা গেছে৷ পশ্চিমবঙ্গে এখন তৃণমূল বিরোধী যে প্রচারণা টুইটারে দেখা যাচ্ছে, সেটা কি রাজপথে স্থানান্তর হতে পারে?

সম্প্রতি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যের প্ররোচনায় সরকারের পুলিশ হিংস্রভাবে ছাত্রছাত্রীদের পেটালো ও ছাত্রীদের শ্লীলতাহানি করলো, তার প্রতিবাদে ইংরেজিতে #হোককলরব হ্যাশট্যাগ দিয়ে আন্দোলন ছড়ায় টুইটার, ফেসবুক এবং রাজপথে৷ এই আন্দোলন তৃণমূল বিরোধী চরিত্র নিয়েছে, কারণ তৃণমূল আন্দোলনরত ছাত্রছাত্রীদের হেয় করে, পুলিশি বর্বরতাকেই অকুণ্ঠ সমর্থন করেছে৷ তবে বর্ধমান বিস্ফোরণকে কেন্দ্র করে এমন আন্দোলনের রাজপথে ব্যাপকভাবে দানা বাধা শক্ত৷ কারণ কলকাতাকেন্দ্রিক রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে বর্ধমানের একটি গ্রাম কলকাতার চেতনায় দাগ কাটে না, শহরের অধিকাংশ মানুষের পল্লী বাংলা নিয়ে চেতনা, সহমর্মিতা কিছুই নেই৷

গত দু'দিনে ইংরেজিতে #তৃণমূলজিহাদ, #জিহাদিদিদি এবং #টিএমসি হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করে কয়েক হাজার টুইট প্রকাশ হয়েছে মূলত পশ্চিমবঙ্গ থেকে৷ তাহলে কি টুইটারের ব্যবহার পশ্চিমবঙ্গে ফেসবুকের তুলনায় আরো শক্তিশালী হচ্ছে?

ফেসবুকের ব্যবহার পশ্চিমবঙ্গ এখনো ব্যাপক৷ এক্ষুনি সেই তুলনায় টুইটার অ্যাক্টিভিস্টরা সংখ্যায় নগন্য৷ তাছাড়া বাংলাদেশের সাথে পশ্চিমবঙ্গের একটা বড় তফাৎ হলো যে, সীমান্তের পূর্ব দিকে বাংলা ভাষা ও হরফকে কেন্দ্র করে স্বাধীন মতপ্রকাশের যে বলিষ্ঠ সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে ব্লগ, ফেসবুক ইত্যাদিতে, তা সীমান্তের পশ্চিমে প্রায় অনুপস্থিত৷ এদিকে বাঁশেরকেল্লাও নেই, প্রজন্ম চত্বরও নেই – আছে দিল্লীকেন্দ্রিক সংস্কৃতির অনুসারী দেখিয়ে দেওয়া পথে হয় নরেন্দ্র মোদীর গুণকীর্তন বা দিল্লীর চ্যানেল-গুলির দৈনিক হেডলাইন নিয়ে বিতর্ক৷

পশ্চিমবঙ্গের নিজস্বতা, তার জেলায় জেলায় যে রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রবাহ, তা নিয়ে কলকাতাস্থিত অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টরা খুব চিন্তিত নন৷ এটা দুঃখজনক৷

রাজনৈতিক বিষয়ে প্রাবন্ধিক এবং ব্লগার গর্গ চট্টোপাধ্যায় ঢাকা, কলকাতা, করাচি, চেন্নাই ও মুম্বই-এর কিছু কাগজে নিয়মিত লেখেন৷ তাঁর ব্লগের নাম হাজারদুয়ারী৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি শেষে এমআইটিতে গবেষক হিসেবে কাজ করার পর এখন কলকাতায় অধ্যাপনা করছেন গর্গ৷ টুইটারে তাঁকে অনুসরণ করতে ক্লিক করুন এখানে

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য