1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান
সমাজযুক্তরাষ্ট্র

বাইডেনের মধ্যপ্রাচ্য সফর, কিছু প্রশ্ন ও প্রত্যাশা

১৩ জুলাই ২০২২

তেল আবিবে পা রেখে চার দিনের মধ্যপ্রাচ্য সফর শুরু করছেন জো বাইডেন৷ ইসরায়েল থেকে ফিলিস্তিন হয়ে সরাসরি যাবেন সৌদি আরবে৷ নানা আশা, আশঙ্কা এবং প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের এ সফর৷

https://p.dw.com/p/4E4gF
USA Mexiko Präsident Joe Biden und Andrés Manuel López Obrador Treffen
ছবি: Susan Walsh/AP Photo/picture alliance

এ মুহূর্তে দুই দেশেই শোভা পাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের পতাকা৷ ইসরায়েলের রাজধানী এখন নিরাপত্তার চাদরে ঢকা৷ ১৫ হাজারেরও বেশি ইসরায়েলি পুলিশ আর স্বেচ্ছাসেবী রয়েছেন নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্বে৷ জনজীবন থমকে গেছে প্রায়৷ এক পথচারী বললেন, ‘‘(প্রেসিডেন্ট বাইডেন আসছেন) এটা আমাদের জন্য খুব গৌরবের ব্যাপার- তবে জেরুসালেমবাসী হিসেবে আমাদের জন্য এ বড় দুর্ভোগেরও, কারণ, নগর পুরোপুরি রুদ্ধ থাকবে এবং আমরা কেউ ঘর থেকে বের হতে পারবো না৷'' তিনি মনে করেন, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী পরিবর্তনের কয়েকদিনের মধ্যে সফরে আসা বাইডেনের জন্য খুবই সাহসী সিদ্ধান্ত৷ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এ পথচারীর আশা, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের এ সফর মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর মধ্যে সম্পর্কোন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে৷

মিত্রবদল?

যুক্তরাষ্ট্র আর ইসরায়েলের সুসম্পর্কের কথা প্রায়ই উঠে আসে বাইডেনের কথায়৷ তেল আবিবে তাকে স্বাগত জানাবেন ইসরায়েলের বর্তমান তত্বাবধায়ক সরকারের অন্তর্বর্তীকালীন প্রধানমন্ত্রী ইয়াইর লাপিদ৷ অথচ দুই সপ্তাহ আগেই প্রধানমন্ত্রী ছিলেন নাফতালি বেনেট৷ তার আমন্ত্রণেই বাইডেনের এই ইসরায়েল সফর৷

এই দুই সপ্তাহের মধ্যে ইসরায়েলে পট পরিবর্তন হয়েছে৷ এমন সময়ে প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রথম মধ্যপ্রাচ্য সফরে গিয়ে আরব দেশগুলোর সঙ্গে ইসরায়েলের বৈরিতায় কি কোনো পরিবর্তন আনতে পারবেন ৭৯ বছর বয়সি মার্কিন প্রেসিডেন্ট?

USA Washington Saudi-Arabien Journalist Jamal Khashoggi
জামাল খাশগজি হত্যার কারণে সৌদি সরকারের বিরুদ্ধে একসময় রীতিমতো তোপ দাগানো জো বাইডেন সেই প্রসঙ্গে এখন নীরবছবি: Yasin Ozturk/AA/picture alliance

পরিবর্তনের একটা আবহ অবশ্য ইতিমধ্যে কিছুটা তৈরি হয়েছে৷ বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে বাইডেন যখন সর্বশেষ ইসরায়েলে গিয়েছিলেন তখনকার তুলনায় পরিস্থিতি বেশ অন্যরকম৷ একটা পরিবর্তন তো খুবই উল্লেখযোগ্য আর তা হলো, ইসরায়েলের সঙ্গে সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন এবং আরব লিগের অন্যান্য সদস্য দেশের ‘আব্রাহাম চুক্তি' স্বাক্ষর৷ স্বাক্ষরকারী দেশগুলোর মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের এ উদ্যোগ শুরু হয়েছিল ডনাল্ড ট্রাম্পের আমলে৷ তবে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে তার বিদায়ের পরে৷

নেসেটের সাবেক সদস্য এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষক সেনিয়া স্ভেতলিনা মনে করেন, মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রকে শান্তি স্থাপনের ভূমিকায় আরো সক্রিয় হতে হবে৷ তার আশঙ্কা, যুক্তরাষ্ট্র কালক্ষেপন করলে অন্য কোনো শক্তি সেই শূন্যস্থান দখল করে নিতে পারে৷

তিনি মনে করেন, পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির ক্ষেত্রে ইরানের অবস্থান শুধু ইসরায়েলের জন্য নয়, মধ্যপ্রাচ্যের কিছু দেশের জন্যও দুশ্চিন্তার৷ 

গত রবিবার ইসরায়েলের অন্তর্বর্তীকাালীন প্রধানমন্ত্রী ইয়াইর লাপিদ-ও ইরানের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘(বাইডেনের) এ সফরে চ্যালেঞ্জ এবং সম্ভাবনা দু ধরনের বিষয় নিয়েই আলোচনা হবে৷ তবে আলোচনায় সবার আগে এবং সবার ওপরে অবশ্যই থাকবে ইরান ইস্যু৷''

Berlin | Gedenk-Graffiti für die in Jenin getötete palästinensische Journalistin Shireen Abu Akleh
পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি বাহিনীর অভিযানের খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে গুলিতে নিহত হন শিরিন আবু আকলেহ৷ বাইডেন এ বিষয়েও নীরব৷ছবি: Christoph Strack/DW

বাইডেনের কৌশল

সৌদি আরব সবসময় বলে এসেছে, স্বাধীন, সার্বভৌম ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত তারা ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নের পথে যাবে না৷ কিন্তু দুই দেশের সম্পর্কের অচলাবস্থা দীর্ঘদিন ধরে চলে আসায় এবং পরিবর্তনের বড় কোনো আভাস কখনো দেখা না যাওয়ায় ইসরায়েল প্রশ্নে সৌদি আরবের কঠোরতা খানিকটা কমেছে বলে বিশ্লেষকরা মনে করেন৷

এ পরিস্থিতিতে দুই দেশের সম্পর্কে আরো পরিবর্তন দেখার আশা নিয়েই মধ্যপ্রাচ্য সফর শুরু করছেন জো বাইডেন৷ গত শনিবার দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট-এ প্রকাশিত লেখায়ও সে কথাই বলেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট৷

তাই কয়েক মাস আগে সৌদি সাংবাদিক জামাল খাশগজি হত্যার কারণে সৌদি সরকারের বিরুদ্ধে রীতিমতো তোপ দাগানো জো বাইডেন সেই প্রসঙ্গে এখন নীরব৷

ইসরায়েল থেকে সৌদি আরব যাওয়ার আগে বাইডেন ঝটিকা সফরে পূর্ব তীরের ফিলিস্তিনি হাসপাতালে যাবেন বলেও ধারণা করা হচ্ছে৷ শুক্রবার ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের সঙ্গে সাক্ষাতেরও কথা আছে তার৷ বাইডেন-মাহমুদ আলোচনায় কোন কোন বিষয় প্রাধান্য পাবে? ফিলিস্তিনিদের গণদাবি এক এবং অভিন্ন আর তা হলো- পূর্ব তীরে ইসরায়েলিদের বসতি স্থাপন বন্ধ করা৷ এক্ষেত্রে বাইডেনের একটু বাস্তবধর্মী ভাবনা দরকার বলে মনে করেন সায়মন রিসাওয়াই৷ ২০ বছর বয়সি এই ফিলিস্তিনি ছাত্র বলেন, ‘‘ফিলিস্তিনি জনগণ আসলেই এটা চায়৷ কারণ, আমাদের অবস্থা দিন দিন আরো খারাপ হচ্ছে এবং সারা বিশ্ব আমাদের দিকে একেবারেই মনযোগ দিচ্ছে না৷ কেউ একটুও সামনের দিকে তাকাচ্ছে না৷'' মিরাজ আসাফ নামের আরেক ফিলিস্তিনি মনে করেন, ফিলিস্তিনের বাস্তব অবস্থা মিডিয়ায় ঠিকভাবে উঠে আসে না৷ তার মতে, ‘‘এখানে যা ঘটছে মিডিয়া তা বেশ অন্যভাবে প্রকাশ করে৷''

সাংবাদিক হত্যার বিষয়ে বাইডেনের নীরবতা

ওয়াশিংটন পোস্টে লেখা মতামতে ফিলিস্তিন এবং ইসরায়েলকে আর্থিক সহায়তা দেয়ার বিষয়টিও উল্লেখ করেছেন বাইডেন৷ সেখানে তিনি জানান, ফিলিস্তিনিদের সহায়তায় তার প্রশাসন প্রায় ৫০০ মিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছে৷ তবে ইসরায়েলকে দিয়েছে চার বিলিয়ন ডলারেরও বেশি, যা কিনা ইতিহাসে সর্বোচ্চ৷

তবে পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি বাহিনীর অভিযানের খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে গুলিতে নিহত শিরিন আবু আকলেহ-র বিষয়ে বাইডেন কড়া কোনো পদক্ষেপ নেননি৷ সাংবাদিক শিরিনের পরিবার এ বিষয়ে বাইডেনের উদ্দেশ্যে একটি খোলা চিঠি লিখেছে৷ গণমাধ্যমে প্রকাশিত সেই চিঠিতে শিরিনের স্বজনরা বাইডেনের নীরবতায় হতাশা প্রকাশ করে জবাবদিহিতা এবং একজন সংবাদকর্মী হত্যার বিচার সুনিশ্চিত করায় ভূমিকা রাখার দাবি জানিয়েছেন৷

তানিয়া ক্র্যামার/ এসিবি