বাইডেনের মধ্যপ্রাচ্য সফর, কিছু প্রশ্ন ও প্রত্যাশা
১৩ জুলাই ২০২২এ মুহূর্তে দুই দেশেই শোভা পাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের পতাকা৷ ইসরায়েলের রাজধানী এখন নিরাপত্তার চাদরে ঢকা৷ ১৫ হাজারেরও বেশি ইসরায়েলি পুলিশ আর স্বেচ্ছাসেবী রয়েছেন নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্বে৷ জনজীবন থমকে গেছে প্রায়৷ এক পথচারী বললেন, ‘‘(প্রেসিডেন্ট বাইডেন আসছেন) এটা আমাদের জন্য খুব গৌরবের ব্যাপার- তবে জেরুসালেমবাসী হিসেবে আমাদের জন্য এ বড় দুর্ভোগেরও, কারণ, নগর পুরোপুরি রুদ্ধ থাকবে এবং আমরা কেউ ঘর থেকে বের হতে পারবো না৷'' তিনি মনে করেন, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী পরিবর্তনের কয়েকদিনের মধ্যে সফরে আসা বাইডেনের জন্য খুবই সাহসী সিদ্ধান্ত৷ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এ পথচারীর আশা, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের এ সফর মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর মধ্যে সম্পর্কোন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে৷
মিত্রবদল?
যুক্তরাষ্ট্র আর ইসরায়েলের সুসম্পর্কের কথা প্রায়ই উঠে আসে বাইডেনের কথায়৷ তেল আবিবে তাকে স্বাগত জানাবেন ইসরায়েলের বর্তমান তত্বাবধায়ক সরকারের অন্তর্বর্তীকালীন প্রধানমন্ত্রী ইয়াইর লাপিদ৷ অথচ দুই সপ্তাহ আগেই প্রধানমন্ত্রী ছিলেন নাফতালি বেনেট৷ তার আমন্ত্রণেই বাইডেনের এই ইসরায়েল সফর৷
এই দুই সপ্তাহের মধ্যে ইসরায়েলে পট পরিবর্তন হয়েছে৷ এমন সময়ে প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রথম মধ্যপ্রাচ্য সফরে গিয়ে আরব দেশগুলোর সঙ্গে ইসরায়েলের বৈরিতায় কি কোনো পরিবর্তন আনতে পারবেন ৭৯ বছর বয়সি মার্কিন প্রেসিডেন্ট?
পরিবর্তনের একটা আবহ অবশ্য ইতিমধ্যে কিছুটা তৈরি হয়েছে৷ বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে বাইডেন যখন সর্বশেষ ইসরায়েলে গিয়েছিলেন তখনকার তুলনায় পরিস্থিতি বেশ অন্যরকম৷ একটা পরিবর্তন তো খুবই উল্লেখযোগ্য আর তা হলো, ইসরায়েলের সঙ্গে সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন এবং আরব লিগের অন্যান্য সদস্য দেশের ‘আব্রাহাম চুক্তি' স্বাক্ষর৷ স্বাক্ষরকারী দেশগুলোর মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের এ উদ্যোগ শুরু হয়েছিল ডনাল্ড ট্রাম্পের আমলে৷ তবে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে তার বিদায়ের পরে৷
নেসেটের সাবেক সদস্য এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষক সেনিয়া স্ভেতলিনা মনে করেন, মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রকে শান্তি স্থাপনের ভূমিকায় আরো সক্রিয় হতে হবে৷ তার আশঙ্কা, যুক্তরাষ্ট্র কালক্ষেপন করলে অন্য কোনো শক্তি সেই শূন্যস্থান দখল করে নিতে পারে৷
তিনি মনে করেন, পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির ক্ষেত্রে ইরানের অবস্থান শুধু ইসরায়েলের জন্য নয়, মধ্যপ্রাচ্যের কিছু দেশের জন্যও দুশ্চিন্তার৷
গত রবিবার ইসরায়েলের অন্তর্বর্তীকাালীন প্রধানমন্ত্রী ইয়াইর লাপিদ-ও ইরানের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘(বাইডেনের) এ সফরে চ্যালেঞ্জ এবং সম্ভাবনা দু ধরনের বিষয় নিয়েই আলোচনা হবে৷ তবে আলোচনায় সবার আগে এবং সবার ওপরে অবশ্যই থাকবে ইরান ইস্যু৷''
বাইডেনের কৌশল
সৌদি আরব সবসময় বলে এসেছে, স্বাধীন, সার্বভৌম ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত তারা ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নের পথে যাবে না৷ কিন্তু দুই দেশের সম্পর্কের অচলাবস্থা দীর্ঘদিন ধরে চলে আসায় এবং পরিবর্তনের বড় কোনো আভাস কখনো দেখা না যাওয়ায় ইসরায়েল প্রশ্নে সৌদি আরবের কঠোরতা খানিকটা কমেছে বলে বিশ্লেষকরা মনে করেন৷
এ পরিস্থিতিতে দুই দেশের সম্পর্কে আরো পরিবর্তন দেখার আশা নিয়েই মধ্যপ্রাচ্য সফর শুরু করছেন জো বাইডেন৷ গত শনিবার দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট-এ প্রকাশিত লেখায়ও সে কথাই বলেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট৷
তাই কয়েক মাস আগে সৌদি সাংবাদিক জামাল খাশগজি হত্যার কারণে সৌদি সরকারের বিরুদ্ধে রীতিমতো তোপ দাগানো জো বাইডেন সেই প্রসঙ্গে এখন নীরব৷
ইসরায়েল থেকে সৌদি আরব যাওয়ার আগে বাইডেন ঝটিকা সফরে পূর্ব তীরের ফিলিস্তিনি হাসপাতালে যাবেন বলেও ধারণা করা হচ্ছে৷ শুক্রবার ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের সঙ্গে সাক্ষাতেরও কথা আছে তার৷ বাইডেন-মাহমুদ আলোচনায় কোন কোন বিষয় প্রাধান্য পাবে? ফিলিস্তিনিদের গণদাবি এক এবং অভিন্ন আর তা হলো- পূর্ব তীরে ইসরায়েলিদের বসতি স্থাপন বন্ধ করা৷ এক্ষেত্রে বাইডেনের একটু বাস্তবধর্মী ভাবনা দরকার বলে মনে করেন সায়মন রিসাওয়াই৷ ২০ বছর বয়সি এই ফিলিস্তিনি ছাত্র বলেন, ‘‘ফিলিস্তিনি জনগণ আসলেই এটা চায়৷ কারণ, আমাদের অবস্থা দিন দিন আরো খারাপ হচ্ছে এবং সারা বিশ্ব আমাদের দিকে একেবারেই মনযোগ দিচ্ছে না৷ কেউ একটুও সামনের দিকে তাকাচ্ছে না৷'' মিরাজ আসাফ নামের আরেক ফিলিস্তিনি মনে করেন, ফিলিস্তিনের বাস্তব অবস্থা মিডিয়ায় ঠিকভাবে উঠে আসে না৷ তার মতে, ‘‘এখানে যা ঘটছে মিডিয়া তা বেশ অন্যভাবে প্রকাশ করে৷''
সাংবাদিক হত্যার বিষয়ে বাইডেনের নীরবতা
ওয়াশিংটন পোস্টে লেখা মতামতে ফিলিস্তিন এবং ইসরায়েলকে আর্থিক সহায়তা দেয়ার বিষয়টিও উল্লেখ করেছেন বাইডেন৷ সেখানে তিনি জানান, ফিলিস্তিনিদের সহায়তায় তার প্রশাসন প্রায় ৫০০ মিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছে৷ তবে ইসরায়েলকে দিয়েছে চার বিলিয়ন ডলারেরও বেশি, যা কিনা ইতিহাসে সর্বোচ্চ৷
তবে পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি বাহিনীর অভিযানের খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে গুলিতে নিহত শিরিন আবু আকলেহ-র বিষয়ে বাইডেন কড়া কোনো পদক্ষেপ নেননি৷ সাংবাদিক শিরিনের পরিবার এ বিষয়ে বাইডেনের উদ্দেশ্যে একটি খোলা চিঠি লিখেছে৷ গণমাধ্যমে প্রকাশিত সেই চিঠিতে শিরিনের স্বজনরা বাইডেনের নীরবতায় হতাশা প্রকাশ করে জবাবদিহিতা এবং একজন সংবাদকর্মী হত্যার বিচার সুনিশ্চিত করায় ভূমিকা রাখার দাবি জানিয়েছেন৷
তানিয়া ক্র্যামার/ এসিবি