বাংলার কৃষকের জার্মান জয়
১৪ জুলাই ২০১৪আমজাদ প্রায় তিন কি.মি. দীর্ঘ জার্মানির পতাকা তৈরি করে জার্মানির প্রতি তাঁর ভালবাসা প্রকাশ করেন৷ সেই পতাকার প্রদর্শনী হয়ে গেল মাগুরা স্টেডিয়ামে, শনিবার বিকেলে৷ ১৯৮৭ সালে দুরারোগ্য এক অসুখে আক্রান্ত হলে কৃষক আমজাদ হোসেন (৬৫) চিকিত্সার জন্য বিভিন্ন পথ্য ব্যবহার করেও কোনো সুফল পাননি৷ শেষে জার্মানি থেকে আনা ওষুধ সেবনে সুস্থ হয়ে ওঠেন তিনি৷ তারপর থেকেই জার্মানির প্রতি অনুরাগ তাঁর৷
আর এই অনুরাগ ও কৃতজ্ঞতাবোধ থেকে ২০০৬ সালের বিশ্বকাপ ফুটবলের সময় প্রায় ৩৫০ গজ লম্বা জার্মানির একটি পতাকা তৈরি করেন তিনি৷ ২০১০ সালের বিশ্বকাপের আগে পতাকাটি প্রায় সাত হাজার গজ লম্বা করেন আমজাদ৷ ঐ বছর গ্রামের লোকজন নিয়ে পতাকাটি মাগুরা শহরের নোমানী ময়দানে নিয়ে প্রদর্শন করেন৷
আর এবারের বিশ্বকাপের আগে পতাকাটি প্রায় তিন কিলোমিটার দীর্ঘ করেন তিনি৷ পতাকা তৈরিতে তাঁর খরচ হয়েছে ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা৷ এক যুগ ধরে তিনি অল্প অল্প করে ওই পতাকা তৈরি করেছেন৷ অভাবের সংসারে এজন্য তাঁকে নানা গঞ্জনাও সহ্য করতে হয়েছে৷ বিক্রি করেছেন চাষযোগ্য জমি৷
এ খবর সংবাদ মাধ্যমে জানতে পেরে আকৃষ্ট হয় ঢাকার জার্মান দূতাবাস৷ ঢাকায় জার্মানির শার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স ড. ফ্যার্ডিনান্ড ফন ভেহে শনিবার বিকেলে মাগুরায় যান আমজাদের তৈরি করা তিন হাজার গজ দীর্ঘ পতাকাটি দেখতে৷ মাগুরা স্টেডিয়ামে তাঁর সেই পতাকার প্রদর্শনী হয়৷ আমজাদের গ্রামের লোকেরাই সাজিয়ে তোলেন দীর্ঘ পতাকাটি৷ ড. ফ্যার্ডিনান্ড ফন ভেহে তা ঘুরে ঘুরে দেখেন৷
দেখার পর সেখানে জার্মানির ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত আমজাদ হোসেনকে জার্মান ফুটবল দলের অফিসিয়াল ফ্যান ক্লাবের আজীবন সদস্যপদ দেয়ার ঘোষণা দেন৷ পাশাপাশি তার হাতে তুলে দেয়া হয় শুভেচ্ছা স্মারক, জার্মান জাতীয় দলের পতাকা, জার্সি ও একটি ফুটবল৷
অন্যদিকে আমজাদ হোসেন জার্মান ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূতের হাতে কুলা, বাঁশি, ডালাসহ কিছু উপহার সামগ্রী তুলে দেন৷ এ সময় মাগুরা জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা ও জার্মান উন্নয়ন ব্যাংক বাংলাদেশের সেক্টর বিশেষজ্ঞ মেহেদী হাসান উপস্থিত ছিলেন৷
রাষ্ট্রদূত পরে ঘোড়ামারা গ্রামে আমজাদ হোসেনের বাড়িতেও যান৷জার্মানির প্রতি আমজাদের ভালোবাসায় কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘‘আমি অভিভূত৷ ভালোবেসে জার্মানির এত বড় পতাকা এর আগে কেউ তৈরি করেছে বলে আমার জানা নেই৷ বাংলাদেশের একজন কৃষক ওই পতাকা তৈরি করায় তাঁর প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ৷’’
মাগুরার ঘোড়ামারা গ্রামের আমজাদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘কোনো লাভের আশায় আমি জার্মানির সুবিশাল এ পতাকা তৈরি করিনি৷ জার্মানির প্রতি কৃতজ্ঞতা এবং জার্মান ফুটবল দলের প্রতি ভালবাসা থেকেই এ কাজ করেছি৷’’ জার্মানির ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূতকে ধন্যবাদ জানিয়ে আমজাদ বলেন সামনের বিশ্বকাপে তিনি আরো বড় পতাকা তৈরি করবেন৷ এর আগে শনিবার দুপুরে ঘোড়ামারা গ্রাম থেকে আমজাদ মোটর সাইকেল শোভাযাত্রা নিয়ে মাগুরা শহরে আসেন৷ তাঁর সঙ্গে গ্রামবাসীই বহন করে আনে লাল-কালো-হলুদের দীর্ঘ জার্মান পতাকা৷
গ্রামের লোকজন জানান, তারা আমজাদের এই কাজকে প্রথম প্রথম 'পাগলামী' মনে করলেও পরে তার দৃঢ়তা এবং ভালবাসায় তাঁরা মুগ্ধ হন৷ তাঁরা পতাকা প্রদর্শনীতে সহায়তাও করেন৷ গ্রামবাসী জানান, আমজাদের কারণে তাদের ঘোড়ামারা গ্রামে জার্মান ফুটবল দলের ভক্ত অনেক বেড়েছে৷