বাংলাদেশের জন্য বৃষ্টির পানিই যে ‘আইসবার্গ’
২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৪বাংলাদেশের মতো বিশুদ্ধ পানীয় জল বিশ্বের অনেক দেশেই দুষ্প্রাপ্য৷ এই যেমন দূষণের কারণে সেখানকার নলকূপগুলোর পানিতে রয়েছে আর্সেনিকের সমস্যা৷ সত্তরের দশকে প্রায় ৪০ লাখ কূপ বসানো হয়েছিল বাংলাদেশে৷ কিন্তু ১৯৯৩ সালে তার মধ্যে বহু কূপের পানিতে আর্সেনিক ধরা পড়ে৷ অর্থাৎ সেই জল পরিণত হয় ‘অপেয়' পানিতে৷
কিন্তু বাংলাদেশে তো বরফ নেই৷ সুতরাং বঙ্গোপসাগরের ‘আইসবার্গ' ধরে পানি সংগ্রহ করার প্রশ্নও ওঠে না৷ তাই তখন ‘গ্রাউন্ডওয়াটার', মানে ভূগর্ভস্থ পানি ছেড়ে ‘সার্ফেস ওয়াটার' বা ভূপৃষ্ঠের পানিতে ফিরতে হয় মানুষকে৷
এরপর ২০০৪ সালে একবার বলা হয়েছিল যে, বাংলাদেশের ৯৮ শতাংশ মানুষ ‘উন্নততর' পানির উৎসের সঙ্গে যুক্ত৷ একটি নিম্ন আয়ের দেশের পক্ষে এহেন একটা পরিসংখ্যান সত্যিই চমকপ্রদ৷ কিন্তু তারপর আবারো সংবাদমাধ্যমে উঠে আসে সেই ‘আর্সেনিক' সমস্যা৷
ঢাকার পানি সরবরাহের ৮২ শতাংশ অবশ্য আসে গ্রাউন্ডওয়াটার থেকে; সেই ভূগর্ভস্থ পানি আর্সেনিক মুক্ত৷ কিন্তু এক্ষেত্রে সমস্যা রাজধানীর জনসংখ্যা বৃদ্ধি, শহরের সম্প্রসারণ এবং পানির ব্যবহার৷ বিশেষজ্ঞরা জানান, ঢাকার নীচে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর বছরে দুই থেকে তিন মিটার নেমে যাচ্ছে৷ বলতে কি, শহরটির ভূগর্ভস্থ পানির উচ্চতা গত চার দশকে ৫০ মিটার নেমে গেছে৷ অর্থাৎ, আজ পানি পেতে হলে অন্তত ৬০ মিটার মাটি খুঁড়তে হবে৷
প্রশ্ন হলো, তাহলে ঢাকা তথা বাংলাদেশে বিশুদ্ধ পানীয় জলের সন্ধান কি একেবারেই মিলবে না?
বাংলাদেশে ডিপ টিউবওয়েল বসিয়ে ইলেকট্রিক পাম্প দিয়ে সেচের জল তোলাটা সাধারণ ব্যাপার৷ সরকার একবার পরিকল্পনা করছিল, সেই পানি পানীয় জল হিসেবে বিক্রি করা যায় কিনা৷ আবার ছোটখাটো কারখানার জন্যও সেই পানি বিক্রি করা যেতে পারে৷ আসলে পানি ব্যাপারটা সার্বজনীন: পানি সকলের প্রয়োজন; পানির উৎস আছে, তেমন ব্যবহারও আছে; আর আছে ময়লা পানি এবং পানির দূষণ৷ সর্বক্ষেত্রেই প্রয়োজন পরিবর্তন ও সচেতনতার৷
যেমন বাংলাদেশের জন্য বৃষ্টির পানিই কিন্তু ‘আইসবার্গ' হয়ে উঠতে পারে৷ অঞ্চলভেদে এখানে বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাতের হার ২০০-২৫০ বিলিয়ন কিউবিক মিটার৷ এর মধ্যে উপকূল ও পাহাড়ি অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বেশি৷ এ সব অঞ্চলে বৃষ্টির পানি সংগ্রহ করলে সুফল দেবে বৈকি!
এই পানি ধরে রাখা বা সংরক্ষণ করা গেলে, তা থেকেই সুপেয় পানির ব্যবস্থা করা যেতে পারে৷ পানি বিশেষজ্ঞ ফিরোজ আহমেদ বলেন, ‘‘বাংলাদেশে বছরে সুপেয় পানির চাহিদা ১৬০ বিলিয়ন কিউবিক মিটার৷ তাই বৃষ্টির পানি সংগ্রহ করলে বেশির ভাগ পানির কাজই আমরা সেই পানি দিয়ে করতে পারি৷ মোকাবিলা করতে পারি আর্সেনিক সমস্যারও৷''
বলা বাহুল্য, এক্ষেত্রে বরফ গলানোরও প্রয়োজন নেই৷ কারণ আকাশ থেকে সেটা তো গলেই পড়ছে!
বেসরকারি সংগঠন ‘ওয়াটার এইড বাংলাদেশ' বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় বা বুয়েট-এর সহযোগিতায় সেরকমই একটা কাজ শুরু করেছে৷ তবে এর জন্য যে আরো সচেতনতা, পানির আরো সদ্ব্যবহার প্রয়োজন৷
অরুণ শঙ্কর চৌধুরী/ডিজি