বাংলাদেশে শিশু পর্নোগ্রাফি
১৩ জুন ২০১৪সিআইডি যে তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে, তাঁদের প্রধান টিপু কিবরিয়া (৪৭) একজন শিশু সাহিত্যিক হিসেবে পরিচিত৷ তবে তাঁর আসল নাম টিআইএম ফখরুজ্জামান৷ তাঁকে তাঁর মালিবাগের বাসা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়৷ আটক অন্য দু'জন হলেন নুরল আমিন ওরফে নুরু এবং শাহারুল ইসলাম খান ওরফে মজু৷
সিআইডি-র বিশেষ পুলিশ সুপার মো. আশরাফুল ইসলাম ডয়চে ভেলেকে জানান, আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোল-এর তথ্যের ভিত্তিতে এই তিনজনকে আটক করা হয়েছে৷ তবে তাঁদের জঙ্গে জড়িত আরো একজনকে এখানো আটক করা যায়নি৷ তবে আটকের চেষ্টা চলছে৷
তিনি জানান, টিপু কিবরিয়া শিশুদের, বিশেষ করে ছেলে শিশুদের দিয়ে পর্নো ছবি তৈরি এবং তা দেশের বাইরে বিক্রি করে আসছিলেন৷ এ সব পর্নো ছবি দেশের বাইরে তাঁরা পাঠাতেন ইন্টানেটের মাধ্যমে৷ ঢাকার মুগদায় তাঁদের একটি স্টুডিও আছে৷ সেখানেই এ সব পর্নো ছবি তৈরি হতো৷ শুধু তাই নয়, দরিদ্র শিশুদের নানা প্রলোভন আর কৌশলে কাজে লাগানো হতো৷
সিআইডি মুগদায় তাঁদের স্টুডিও থেকে কম্পিউটারের হার্ডডিস্ক, সিপিইউ, ল্যাপটপ, ক্যামেরা ও শতাধিক পর্নো সিডি উদ্ধার করা করেছে৷ এছাড়া সেখান থেকে ১২ বছরের এক ছেলেকেও উদ্ধার করা হয় বলে জানান পুলিশ সুপার মো. আশরাফুল ইসলাম৷ উদ্ধার করা শিশুটিকে নাকি সোমবার কমলাপুর থেকে ছবি তোলার কথা বলে নিয়ে এসেছিলেন টিপু৷
সিআইডি-র অতিরিক্ত ডিআইজি শাহ আলম ডয়চে ভেলেকে জানান, আটক চক্রটি জার্মানি, যুক্তরাজ্য, সৌদি আরব, অস্ট্রেলিয়া ও সুইজারল্যান্ডে শিশুদের পর্নোগ্রাফি বিক্রি করত৷ পর্নোগ্রাফি বিক্রির জন্য যোগাযোগ ও টাকা লেনদেনের কাজ করতেন শাহারুল৷ এক জার্মান ও এক সৌদি নাগরিকের সঙ্গে তাঁর আর্থিক লেনদেনের প্রমাণ পেয়েছে সিআইডি৷
সিআইডি-র এই কর্মকর্তা জানান, ইন্টারপোল তাদের জানিয়ে আসছিল যে বাংলাদেশ থেকে শিশুদের পর্নোগ্রাফি বিদেশে পাচার হচ্ছে৷ ইন্টারপোল ২০০৫ সাল থেকে বাংলাদেশের শিশু পর্নোগ্রাফি বিদেশে পাচারের প্রমাণ পায়৷ তারা দীর্ঘদিন ধরে এ বিষয়ে নজরদারি করছিল৷ চলতি বছর ইন্টারপোল নিশ্চিত হয় যে, এগুলো বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা থেকে পাচার হচ্ছে এবং সেই ভিডিও দেখেই টিপু কিবরিয়াকে শনাক্ত করা হয়৷ ১৫ দিন আগে ইন্টারপোল সিআইডি-কে সুনির্দিষ্ট তথ্য দিলে, সিআইডি টিপু কিবরিয়ার অবস্থান করতে সমক্ষম হয়৷ এরপর তাঁকে গ্রেপ্তার করে বাকি দু'জনকে তাঁর দেয়া তথ্যমতে আটক করা হয়৷ টিপু কিবরিয়া শিশুদের নিয়ে ৫০টির ওপরে বই লিখেছেন৷ তিনি একজন ‘ফ্রিল্যান্স' আলোকচিত্রী৷
অতিরিক্ত ডিআইজি শাহ আলম জানান, ঐ চক্রের আরেক সহযোগিকে এখনো গ্রেপ্তার করা যায়নি৷ তাঁকে গ্রেপ্তার করা গেলে বাংলাদেশে শিশু পর্নোগ্রাফির ব্যাপারে আরো তথ্য পাওয়া যাবে৷ পলাতক এই ব্যক্তি মূলত শিশু জোগাড়ের কাজ করত৷ আর টিপু কিবরিয়া শিশু সাহিত্যিক এবং ফ্রিল্যান্স আলোকচিত্রী হওয়ার সুবাদে নিম্নবিত্ত শিশু এবং শিশু সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সহজেই যোগাযোগ তৈরি করতে পারতেন৷
তিনি জানান, বাংলাদেশে এ ধরনের পর্নোগ্রাফির সঙ্গে আরো কোনো চক্র জড়িত থাকতে পারে৷ এই চক্রের সঙ্গে জড়িত আন্তর্জাতিক চক্রের পরিচয় তারা জানতে পেরেছেন এবং ইন্টারপোল-কে এ ব্যাপারে এরই মধ্যে তথ্য দেয়া হয়েছে৷
আটক তিনজনকে চার দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়েছে ইতিমধ্যেই৷ তার মধ্যে নুরুল শিশু পর্নোগ্রাফিতে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে৷ বাকি দু'জনকে জিজ্ঞাসবাদ করা এখনও অব্যাহত৷ উদ্ধার করা শিশুটিও আদালতে জবানবন্দি দিয়েছে৷ তাছাড়া আটক তিনজনের বিরুদ্ধে পর্নোগ্রাফি আইনে মুগদা থানায় একটি মামলা করা হয়েছে৷