1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বাংলাদেশে মাদকের ব্যাপকতা ও ভয়াবহতা

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
১৮ জুন ২০১৮

বাংলাদেশে মাদকের চাহিদা আছে তাই সরবরাহও আছে৷ কিন্তু সরবরাহ বন্ধ করা না গেলে চাহিদা বাড়তেই থাকবে৷ আর বাংলাদেশকে মাদক পাচারের রুট হিসেবেও ব্যবহার করা হচ্ছে৷

https://p.dw.com/p/2zlvm
ছবি: AFP/Getty Images/F. K. Godhuly

২০১৫ সালের মে মাসে চট্টগ্রাম বন্দরে একটি তরল কোকেনের চালান ধরা পড়ে৷ খানজাহান আলি লিমিটেড নামে একটি প্রতিষ্ঠানের ঠিকানায় বলিভিয়া থেকে আসা একটি কন্টেনারে ১০৭ ড্রাম সানফ্লাওয়ার তেলের মধ্যে দুই ড্রাম তরল কোকেন পাওয়া যায়৷ পরে ল্যারেটরি টেস্টেও কোকেনের ব্যাপারে নিশ্চিত হয় বাংলাদেশের শুল্ক গোয়েন্দা কর্তৃপক্ষ৷ এই ঘটনায় দায়ের করা মাদক আইনের মামলাটি এখন আদালতে বিচারের অপেক্ষায় আছে৷ বাংলাদেশে কোকেন সংক্রান্ত অপরাধে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড৷

এই ঘটনার পর ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান বাংলাদেশের মাদক চোরাচালান এবং ব্যবসা নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে৷ তাতে বাংলাদেশকে মাদক চোরাচালানের রুট হিসেবে চিহ্নিত করা হয়৷

তাতে বলা হয়, দক্ষিণ এশিয়া বা এশিয়ার বাজারে বিভিন্ন ধরনের মাদক নিয়ে যাওয়ার জন্য নিরাপদ রুট হিসেবে বাংলাদেশকে ব্যবহার করা হচ্ছে৷ এ অঞ্চলের বন্দরগুলোর দুর্বল নিরাপত্তাব্যবস্থার কারণেই চোরাচালানের রুট হিসেবে এ পথ পাচারকারীদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে৷

বাংলাদেশের পুলিশ কর্মকর্তা মোহাম্মদ কামরুজ্জামানকে উদ্ধৃত করে দ্য গার্ডিয়ান জানায়, ‘‘ভারতে পাচার করার পথে চট্টগ্রামে এ সব কোকেন ধরা পড়ে৷’’ তিনি বলেন, ‘‘এ চালানের কাগজপত্র থেকে জানা গেছে, চালানটি ভারতের যে কোনো বন্দরে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত ছিল৷ এ অঞ্চলে ব্যাপকহারে মাদক চোরাচালান কিছু দিন ধরে বেড়েছে৷ তিন মাসে দক্ষিণ অ্যামেরিকা ও আফ্রিকা থেকে আসা বিপুল পরিমাণ কোকেন ভারতের বাজারে প্রবেশ করেছে৷ এছাড়া একই সময়ে কাঠমান্ডুতেও প্রচুর পরিমাণে কোকেন জব্দ করা হয়েছে৷ তবে জাতিসংঘ মনে করছে, দক্ষিণ এশিয়াকে রুট হিসেবে ব্যবহার করে আরও প্রচুর কোকেন পাচার হচ্ছে, যা ধরাই পড়ছে না৷ গার্ডিয়ান বলছে, সম্ভবত ল্যাটিন অ্যামেরিকার একটি সংঘবদ্ধ চক্র যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের বাজারে নিজেদের চোরাচালানের রুট আড়াল করতেই দক্ষিণ এশিয়াকে পাচারের পথ হিসেবে ব্যবহার করছে৷ এ অঞ্চলের বন্দরগুলোর দুর্বল নিরাপত্তাব্যবস্থার সুযোগ নিয়েই এ কাজ করছে তারা৷ এছাড়া মেক্সিকোর সিনালোয়া অথবা প্যাসিফিক কার্টেলের মতো চক্রগুলো এশিয়াকে মাদকের একটি বড় বাজার হিসেবে দেখছে৷’’

২০১২ সালে ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ২৬ কেজি হেরোইনের একটি চালান ধরা পড়ে৷ এর কয়েক বছর আগে এই বিমানবন্দরেই ২০ কেজি হেরোইনের একটি চালানসহ একজন ব্রিটিশ নাগরিক গ্রেপ্তার হন৷ ওই মামলায় ব্রিটিশ নাগরিকের শাস্তিও হয়৷ পরে অবশ্য সাধারণ ক্ষমায় মুক্ত হয়ে তিনি দেশে ফিরে যান৷ এলিয়েডা ম্যাকগর্ড নামের ওই বৃটিশ তরুণী ছিলেন হোরোইন বহনকারী৷ মূল পাচারকারিদের তখন চিহ্নিত করা যায়নি৷ আর তখনও মাদক চোরাচালানের আন্তর্জাতিক রুট হিসেবে বাংলাদেশের নাম উঠে আসে৷

১৬ কোটি মানুষের দেশ বাংলাদেশে এখন মাদকসেবীর সংখ্যা ৭০ লাখ৷ আর এখানে এখন মাদক হিসেবে ব্যবহারের শীর্ষে রয়েছে ইয়াবা নামের এক ধরনের উত্তেজক ট্যাবলেট৷ এছাড়াও হেরোইন, গাঁজা এবং ফেনসিডিলের ব্যবহারও উল্লেখযোগ্য৷

২০১৪ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত এই চার বছরে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর মোট হেরোইন উদ্ধার করেছে ৪৮ কেজি, গাঁজা ১৬ হাজার কেজি, ফেনসিডিল দেড় লাখ বোতল, ইয়াবা ট্যাবলেট ৫০ লাখ পিস৷ এর বাইরে পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি এবং কোস্টগার্ড বিপুল পরিমাণ মাদকদ্রব্য উদ্ধার করেছে৷

মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, এই আইনে ২০১৭ সালে সারাদেশে মোট মামলা হয়েছে ১,০৬,৫৩৬টি৷ এই মামলাগুলো মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি এবং কোস্টগার্ডের অভিযোগ, আটক এবং মাদকদ্রব্য উদ্ধারের ভিত্তিতে করা হয়েছে৷ আর এ সংখ্যা ২০১৬ সালের তুলনায় প্রায় দ্বিগুন৷

যে পরিমাণ মাদকদ্রব্য ধরা পড়ে, তা বিক্রি হওয়া মাদকের মাত্র ১০ শতাংশ৷ আর ৯০ শতাংশ মাদকই ধরা পড়ে না৷ জাতিসংঘের মাদক নিয়ন্ত্রণ সংস্থা (ইউএনওডিসি)-র মতে, বাংলাদেশে বছরে শুধু ইয়াবা ট্যাবলেটই বিক্রি হচ্ছে ৪০ কোটির মতো, প্রতিটির দাম দুইশ' টাকা হিসেবে যার বাজারমূল্য প্রায় আট হাজার কোটি টাকা৷

২০১৭ সালে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণের বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০০৮ সালের তুলনায় ২০১৬ সালে ইয়াবার ব্যবহার ৮০ শতাংশ বেড়েছে৷ আর ২০১৫ সালের তুলনায় ২০১৬ সালে বেড়েছে ৪৬ শতাংশ৷ ২০১২ সালে মোট মাদকসেবীর মধ্যে ইয়াবা আসক্তের সংখ্যা ছিল ৫ দশমিক ৭৭ শতাংশ, ২০১৬ সালে তা হয়েছে ৩১ দশমিক ৬১ শতাংশ৷

২০১০ সালে বাংলাদেশে মাদকসেবীর সংখ্যা ছিল ৪৬ লাখ, বর্তমানে তা বেড়ে হয়েছে ৭০ লাখ৷ ৭০ লাখের মধ্যে ১৫ বছরের বেশি বয়সের মাদকসেবী আছে ৬৩ দশমিক ২৫ শতাংশ৷ তাদের মধ্যে ৭০ ভাগের বয়সই ১৫ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে৷

মাদকাসক্তের সংখ্যা বিবেচনায় বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বের সব দেশের মধ্যে সপ্তম৷ মাদকাসক্তরা মাদকদ্রব্য কেনায় বছরে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা ব্যয় করে৷

বাংলাদেশে মাদকের ব্যবহার কমছে না কেন? এই প্রশ্নের উত্তর প্রায় সবারই জানা৷ বাংলাদেশে মাদকদ্রব্যের অবৈধ অর্থনীতির আকার এখন বেশ বড়৷ যদি বড় ব্যবসায়ী বলা হয়, তাহলে সেরকম মাদক ব্যবসায়ী আছে পাঁচ হাজারেরও বেশি৷ সরকারের তালিকায় শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী ১৪১ জন৷ তাদের মধ্যে সংসদ সদস্য, রাজনৈতিক নেতা, পুলিশ ও মাদক নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা থেকে শুরু করে অনেক প্রভাবশালী ব্যক্তিই আছেন৷ মাদকের ক্যারিয়ার বা খুচরা বিক্রেতা আছে কয়েক হাজার৷ কোনো কোনো মাদকসেবী আবার একই সঙ্গে খুচরা বিক্রেতা হিসেবেও কাজ করেন৷

বাংলাদেশের শুধু শহরাঞ্চল নয়, গ্রাম এলাকায়ও পৌছে গেছে মাদক৷ আর ঢাকাসহ শহরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো মাদকসেবী এবং ব্যবসায়ীদের বড় কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে৷ চলমান মাদকবিরোধী অভিযানের মধ্যেও ঢাকার বসুন্ধরা এলাকার কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালিয়ে গত ১১ জুন শতাধিক মাদকসেুবীকে আটক এবং ইয়াবাসহ বিপুল পরিমাণ মাদক উদ্ধার করা হয়৷

মাদকসেবীদের চিকিৎসা দিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার কাজ করেন জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইন্সটিউটের অধ্যাপক ডা. তাজুল ইসলাম৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘প্রধান তিনটি কারণে বাংলাদেশে মাদক ভয়াবহ পর্যায়ে পৌঁছেছে৷ ১. চাহিদার সঙ্গে পর্যাপ্ত জোগান, ২. মানসিকভাবে বিষাদগ্রস্ত এবং কৌতূহল এবং ৩. হিরোইজম৷ মাদক সকল অপরাধের মূলে কাজ করে৷’’

প্রধান তিনটি কারণে বাংলাদেশে মাদক ভয়াবহ পর্যায়ে পৌঁছেছে: ডা. তাজুল ইসলাম

তিনি বলেন, ‘‘মাদকের চাহিদা আছে, তাই সরবরাহও আছে৷ আর এই সরবরাহ বন্ধ করতে না পারলে এর ব্যবহার বন্ধ করা যাবে না৷ সরবরাহ বন্ধের দায়িত্ব সরকারের৷ সরকার তার দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠানগুলোকে দিয়ে সরবরাহ বন্ধ করতে পারছে না বা মাদক সরবরাহ বন্ধ হচ্ছে না৷ বাকি দায়িত্ব সমাজ ও পরিবারের৷ যদি সরবরাহ বন্ধ করা না যায়, তাহলে সমাজ ও পরিবার দায়িত্ব পালন করলেও মাদক ব্যবসায়ীরা তাদের ব্যবসার স্বার্থেই এর চাহিদা তৈরির জন্য যা যা করা প্রয়োজন, তাই করবে৷’’

বাংলাদেশে মাদক নিয়ন্ত্রণের জন্য কাজ করে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর৷ এর বাইরে পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি এবং কোস্টগার্ড মাদক নিয়ন্ত্রণ এবং মাদকের বিরুদ্ধে অভিযানে কাজ করে৷

মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের স্থল এবং জল সীমান্ত থেকে এই সময়ের আলোচিত মাদক ইয়াবা পাচার হয়ে আসে৷ দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বেশির ভাগ দেশে ইয়াবা সরবরাহ করে মিয়ানমার৷ মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে ইয়াবা পাচার শুরু ২০০৬ সাল থেকে৷ ২০১২ সালে চীন ও থাইল্যান্ডের মধ্যে চুক্তির পর মিয়ানমারের মাদক উৎপাদনকারীদের জন্য ঐ সব দেশে পাচার কঠিন হয়ে পড়ে৷ তখন তারা বাংলাদেশকেই মাদক পাচারের প্রধান রুট হিসেবে ব্যবহার করতে শুরু করে৷

এছাড়া ভারত সীমান্ত থেকে ফেনসিডিল ও অন্যান্য মাদক পাচার হয়ে আসে৷ আকাশ পথও ব্যবহার করে মাদক পাচারকারীরা৷ আর বাংলাদেশের অভ্যন্তরে আছে তাদের সুবিস্তৃত নেটওয়ার্ক৷

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক জামাল উদ্দিন আহমেদ অবশ্য মনে করেন, মাদকের চাহিদা এবং জোগান দু'টি বিষয়ই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘মাদকের চাহিদা বন্ধ করা গেলে জোগান থাকলেও কোনো লাভ নেই৷ কেউ মাদক কিনবে না৷ আমরা এখন সাপ্লাই চেইন ধ্বংসের জন্য সমন্বিত অভিযান চালাচ্ছি৷ কিন্তু মাদকের বিরুদ্ধে অভ্যন্তরীণভাবেও জনসচেতনতা গড়ে তুলতে হবে৷ মাদকের ব্যাপারে অনেকের ভুল ধারণা আছে৷ কেউ কেউ এটাকে ফ্যাশন এবং হিরোইজম হিসেবে নেয়৷ এটার কুফল আমাদের বুঝাতে হবে৷’’

সব সংস্থা মিলে ২০১৭ সালে অন্যান্য মাদকের সঙ্গে আলোচিত মাদক ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধার করেছে চার কোটি ৮০ হাজার পিস৷ মাদক মামলায় মোট আসামি করা হয়েছে ১,৮২,৮৩২ জনকে৷

কেউ কেউ এটাকে ফ্যাশন এবং হিরোইজম হিসেবে নেয়: জামাল উদ্দিন আহমেদ

কিন্তু ২০১৭ সালে মাত্র ২৫৩৯টি মামলা আদালতে নিস্পত্তি হয়েছে৷ এ সব মামলার ২৬৮০ জন আসামির মধ্যে বেশিরভাগই খালাস পেয়েছেন৷

বাংলাদেশের মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের হিসেব অনুযায়ী, ২০১৭ সালে মাদক আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে মোট ১১৬১২টি৷ মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ওই বছরে শাস্তি পেয়েছেন ১০৬৫ জন আর খালাস পেয়েছেন ১৬১৫ জন৷

জামাল উদ্দিন বলেন, ‘‘আমাদের মাদক আইনের কিছু সীমাবদ্ধতা আছে৷ মাদকের জন্য আলাদা ট্রাইব্যুনাল গঠন করা প্রয়োজন৷ আমরা আইন সংস্কার ও ট্রাইব্যুনাল গঠনের জন্য কাজ করছি৷’’

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পর্যাপ্ত জনবল নেই, তা সত্য৷ তবে মাদক নিয়ন্ত্রেণ পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি এবং কোস্টগার্ডও কাজ করে৷ আমরা সবাই মিলে মাদক নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছি৷’’

বাংলাদেশে মাদকবিরোধী অভিযানে এ পর্যন্ত গ্রেপ্তার করা হয়েছে প্রায় ২০ হাজার৷ আর কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছেন প্রায় দেড় শতাধিক ব্যক্তি৷ কিন্তু এখনো মাদক চোরাচালানের কোনো গডফাদার আটক বা বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে বলে খবর পাওয়া যায়নি৷

দেশের বিভিন্ন থানা এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, স্থানীয়ভাবে যারা মাদক ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত, তারা এখনো ধরা-ছোঁয়ার বাইরে৷ যাদের আটক করা হচ্ছে, তারা মাদকসেবী ও সাধারণ খুচরা বিক্রেতা৷ যারা মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করেন বা মূল পাচারকারী, তারা গ্রেপ্তার হচ্ছেন না৷ তাদের কেউ এলাকা ছেড়ে পালিয়েছে আবার কেউ রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী হওয়ায় এলাকায়ই আছেন৷ মাদক আইনের ফাঁকের কারণে তাদের ধরাও যাচ্ছে না বলে পুলিশ জানায়৷ মাদক ব্যবসার সঙ্গে কোনো কোনো এলাকার পুলিশ সদ্যদের সঙ্গে যোগাযোগ থাকায় অভিযান দেখানোর জন্য সাধারণ মানুষকে হয়রানির অভিযোগও পাওয়া যাচ্ছে অনেক৷ অভিযানের মধ্যেই টেকনাফের মাদকের গডফাদার বলে পরিচিত সরকার দলীয় সংসদ সদস্য আমানুর রহমান বদি তার দুই সহযোগীকে নিয়ে সৌদি আরবে ওমরাহ করতে চলে গেছেন৷

মাদক একেবারেই থাকবে না, এই নিশ্চয়তা দেয়া সম্ভব নয়: মাসুদুর রহমান

সাধারণ মানুষের ধারণা, বাংলাদেশে মাদকের বিস্তারের আইন-শঙ্খলা বাহিনী ও মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের এক শ্রেণির কর্মকর্তা এবং রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী একটি গ্রুপের হাত আছে৷ তারাই মাদক ব্যবসার মূল নিয়ন্ত্রক৷ তাদের আইনের আওতায় আনা না গেলে মাদক নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়৷

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (মিডিয়া) মাসুদুর রহমান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘মাদক কখনোই নির্মূল করা সম্ভব নয়৷ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব৷ মাদক একেবারেই থাকবে না, এই নিশ্চয়তা দেয়া সম্ভব নয়৷ আমরা মাদকের সরবরাহ বন্ধ করতে সব জায়গায় কাজ করছি৷ মাদকের মূল গডফাদার থেকে শুরু করে এর বিক্রেতা, পাচারকারী, সরবরাহকারী ও ব্যবহারকারী সবার বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নিচ্ছি৷ তবে মাদকের বিরুদ্ধে ব্যাপক আন্দোলন ও জনসচেতনতাও গড়ে তুলতে হবে৷ আমরা এই কাজও শুরু করেছি৷’’

অধ্যাপক ড. তাজুল ইসলাম মনে করেন, ‘‘বাংলাদেশে মানসম্পন্ন মাদক নিরাময় কেন্দ্রও গড়ে তুলতে হবে৷ যেসব নিরাময় কেন্দ্র আছে, সেগুলো মানসম্পন্ন নয়৷ প্রয়োজনীয় এবং দক্ষ চিকিৎসকও নেই৷’’

প্রিয় পাঠক, আপনি কিছু বলতে চাইলে লিখুন নীচে মন্তব্যের ঘরে...

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য