1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

এইচআইভি সংক্রমণ

৫ জুন ২০১২

বাংলাদেশে এইচআইভি সংক্রমণের হার কম থাকলেও বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন এটি ধীরে ধীরে চুপিসারে মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়তে পারে৷

https://p.dw.com/p/157lN
ছবি: Bernd Müller

মূলত সাধারণ মানুষের মধ্যে এইচআইভি সংক্রমণের বিষয়টি পর্যবেক্ষণ না করার ফলেই এমনটি ঘটতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে৷

১৬ কোটি মানুষের বাংলাদেশে সরকারি হিসাবে বর্তমানে এইচআইভি বহন করছে দুই হাজার পাঁচ শ' তেত্রিশ জন৷ ২০১১ সালে প্রকাশিত সরকারি সমীক্ষার প্রতিবেদন অনুযায়ী, সুঁই-সিরিঞ্জের মাধ্যমে মাদক সেবনকারী তথা আইডিইউ, পেশাদার যৌন কর্মী, সমকামী নারী-পুরুষ ও অভিবাসী জনগোষ্ঠীর মাঝে এই ভাইরাসের সংক্রমণ লক্ষ্য করা গেছে৷ তবে সমীক্ষাটি বাংলাদেশের ৩৬টি ভৌগোলিক এলাকার বাছাইকৃত ২,৮৯৪ জনের রক্ত পরীক্ষা করে তৈরি করা হয়৷ ফলাফলে দেখা গেছে, বাংলাদেশে ০.৭ শতাংশ মানুষের দেহে এইচআইভি'র সংক্রমণ৷ তবে এইচআইভি সংক্রমণে সহায়ক সিফিলিস নামক যৌন রোগের হার তিন শতাংশ৷ এছাড়া পার্বত্য অঞ্চলের যৌন কর্মীদের মধ্যে সিফিলিসের হার সবচেয়ে বেশি: ১২.৫ শতাংশ৷ চট্টগ্রামের যৌন কর্মীদের ১০.৩ শতাংশ এবং সিলেটের আবাসিক হোটেল ভিত্তিক যৌন কর্মীদের ৯.৩ শতাংশ সিফিলিস রোগে আক্রান্ত৷

তবে সরকারি হিসাবে এইচআইভি সংক্রমিত মানুষের সংখ্যা কম দেখে আত্মতৃপ্তিতে ভোগার কোন অবকাশ নেই বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা৷ তাঁরা মনে করছেন, যেহেতু এইচআইভি সংক্রমণে সহায়ক সিফিলিস জাতীয় যৌন রোগের হার অনেক, তাই এইচআইভি ভাইরাস দ্রুত এবং নীরবে মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়তে পারে৷ আর এই ভাইরাসের সংক্রমণকে বাড়িয়ে দিচ্ছে আইডিইউ ও যৌন কর্মীদের সংখ্যা বৃদ্ধি, কনডোম ব্যবহারের নিম্নহার, অধিক সংখ্যক তরুণ অভিবাসীর এক স্থান থেকে কিংবা এক দেশ থেকে অন্য স্থান বা অন্য দেশে গমন এবং সর্বোপরি ভারতের সাথে দীর্ঘ সীমান্ত৷ কারণ প্রতিবেশী দেশ ভারতে এইচআইভি বহণকারীর সংখ্যা ২৪ লাখ৷ এছাড়া মিয়ানমার এবং নেপালে এইচআইভি সংক্রমণের হার বেশি হওয়ায় ঐ দেশগুলোতে যাতায়াতকারী অভিবাসীদের মাধ্যমেও এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে৷

এইচআইভি/এইডস ও যৌনরোগ প্রতিরোধে বাংলাদেশে কর্মরত বেসরকারি সংস্থাগুলোর জোট হাসাব-এর নির্বাহী পরিচালক ড. আমজাদ আলী বার্তা সংস্থা আইপিএস'কে বলেছেন, ‘‘সরকারি হিসাবে যে তথ্য উঠে এসেছে তার মধ্যে রয়েছে শুধুমাত্র স্বেচ্ছায় রক্ত পরীক্ষা করতে আসা মানুষের হিসাব৷ ফলে এখনও অনেকেই এই হিসাবের বাইরে রয়ে গেছে৷'' ভারতের সাথে বাংলাদেশের দীর্ঘ সীমান্ত দিয়ে চোরাইপথে মানুষের যাতায়াত এবং অভিবাসীদের হার বৃদ্ধির কথা উল্লেখ করে আমজাদ আলী বলেন, ‘‘সাধারণ মানুষের মাঝে এইচআইভি সংক্রমণের হার প্রতিবেদনে উল্লিখিত হারের চেয়ে অনেক বেশি হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে৷''

এইচআইভি/এইডস সংক্রমিত মানুষের পরিচর্যাকারী বেসরকারি সংস্থা আশার আলো সোসাইটি'র নির্বাহী পরিচালক হাবিবা আখতার বলেন, ‘‘এখন পর্যন্ত সরকারি হিসাবের অন্তর্ভুক্ত সবাই শুধুমাত্র উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর সদস্য৷ কিন্তু গৃহবধু কিংবা বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের হিসাব কি তারা করেছে? এমনকি দেশে ফিরে আসা অভিবাসীদের এবং পতিতালয় ভিত্তিক যৌনকর্মীদেরও কোন তথ্য সরকারি হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি৷'' তিনি আক্ষেপের সঙ্গে বলেন, ‘‘দেখুন, ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং থাইল্যান্ডের মতো দেশগুলোও প্রথমদিকে সাধারণ মানুষের মাঝে এই ভাইরাসের সংক্রমণের কথা অস্বীকার করেছিল৷ কিন্তু এখন তাদের কী অবস্থা?''

রাজধানী ঢাকার কেন্দ্রীয় অঞ্চলে সিরিঞ্জের মাধ্যমে মাদক সেবনকারীদের দেহে এইচআইভি সংক্রমণের হার মাত্র তিন বছরে ১.৪ শতাংশ থেকে বেড়ে প্রথমে ৪ এবং পরে ৮.৯ শতাংশে পৌঁছয় বলেও সরকারি হিসাব থেকে জানা গেছে৷ ফলে সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে এইচআইভি/এইডস প্রতিরোধে এখনই কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের সুপারিশ করেন সংশ্লিষ্ট উন্নয়ন কর্মী ও বিশেষজ্ঞরা৷

প্রতিবেদন: হোসাইন আব্দুল হাই (আইপিএস)

সম্পাদনা: অরুণ শঙ্কর চৌধুরী

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য