ভারতের তদন্ত দল আসার খবরটি ভুয়া?
৮ জুলাই ২০১৬গুলশান এবং শোলাকিয়ার ঘটনা তদন্তে বাংলাদেশে ভারতের ন্যাশনাল সিকিউরিটি গার্ড (এনএসজি)-এর একটি বিশেষ তদন্ত টিমের সদস্যরা ঢাকায় আসছেন বলে একদিন আগে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম খবর দিলেও, একদিন পর ভারতীয় সংবাদমাধ্যম খবরটিকে গুজব বলে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে৷ এ নিয়ে ঢাকায় ভারতীয় দূতাবাসের ডেপুটি হাইকমিশনার ড. আদর্শ সোয়াইকা ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এ বিষয়ে কোনো তথ্য আমাদের জানা নেই৷ এনএসজি-র সদস্যরা আসবেন কি আসবেন না – এখনও পর্যন্ত আমার কাছে এ সংক্রান্ত কোনো খবরই নেই৷''
এদিকে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ভিকা স্বরূপকে উদ্ধৃত করে জানিয়েছে, ‘‘ভারতের এনএসজি টিম বাংলাদেশে আসার যে খবর সংবাদমাধ্যমে ছাপা হয়েছে, তা সঠিক নয়৷ ভারত থেকে বাংলাদেশে কোনো নিরপত্তা টিম যাওয়ার খবর ভুয়া৷''
অথচ ঠিক একদিন আগে ভারতের রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত সংবাদ সংস্থা পিটিআই জনিয়েছিল, ‘গুলশান ও শোলাকিয়ার হামলা তদন্তে এনএসজি-র একটি দলকে বাংলাদেশে পাঠাতে সম্মত হয়েছে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার৷' তারা জানায়, ‘বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এনএসজি-কে তদন্তের সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ার অনুরোধ বিবেচনায় নেওয়ার পরই ভারত তাদের ঢাকায় পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়৷'
খবরে আরো বলা হয়, ঘটনার প্রাথমিক তদন্তের কাজে তারা বাংলাদেশে যাচ্ছেন৷ গুলশানে সংঘটিত হামলার ‘স্পট' খতিয়ে দেখবে তারা৷ সে সময় বাংলাদেশের কমান্ডো গার্ডরা নাকি তাদের সঙ্গে থাকবেন৷ তারপর শোলাকিয়ায় গিয়ে সেখানকার ঘটনার তদন্তও করবেন৷ ঘটনার ‘বিশ্লেষণ ও পর্যালোচনা' করতে সামনে বেশ কিছুদিন ঢাকায় থাকবেন তাঁরা৷
খবরে বলা হয়েছিল, ন্যাশনাল সিকিউরিটি গার্ডের সদস্যরা শুক্রবার বাংলাদেশে আসবেন৷ কিন্তু ডয়চে ভেলের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সূত্রে যোগাযোগ করে কোনো ভারতীয় নিরাপত্তা টিমের আসারই খবর জানা যায়নি৷ বার বার যোগাযোগ করেও এ বিষয়ে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি৷
বাংলাদেশের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করবে ভারত
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ শুক্রবার বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলীকে লেখা এক চিঠিতে জানান, ‘‘সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলায় বাংলাদেশের সঙ্গে থাকবে ভারত৷ কাজ করবে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে৷''
ঐ চিঠিতে তিনি বলেন, ‘‘ভারত সরকারের পক্ষ থেকে আমি এই হামলার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি৷ হামলায় নিহতদের জন্য হৃদয়ের অন্তঃস্থল থেকে শোক ও সমবেদনা জানাচ্ছি আমি৷ আর যাঁরা আহত হয়েছেন, তাঁদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করছি৷''
প্রসঙ্গত, ১ জুলাই গুলশানের হলি আর্টিজান ক্যাফেতে হামলার ঘটনায় ২০ জন নিহত হন৷ এঁদের ন'জন ইটালীয়, সাতজন জাপনি, একজন ভারতীয়, একজন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক এবং বাকি দু'জন বাংলাদেশি৷ এছাড়া দুই পুলিশ সদস্য এবং উদ্ধার অভিযানে ছ'জন জঙ্গি নিহত হয়৷
গুলশান ও শোলাকিয়ার হামলার পিছনে রয়েছে একটাই চক্র
অন্যদিকে বৃহস্পতিবার, বাংলাদেশের কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় ঈদ জামাতের অদূরে এক হামলায় নিহত হয় চারজন৷ ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি মাহফুজুল হক নুরুজ্জামান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এই চারজনের মধ্যে একজন হামলাকারী৷ নাম আবির রহমান৷ ২০১০ সালে বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল টিউটোরিয়াল থেকে এ লেভেল পাস করে ঢাকার নর্থ সাউথ ইউনিভর্সিটিতে পড়াশোনা করছিল সে৷ তবে গত আটমাস ধরে তার কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না৷
শোলাকিয়ার ঘটনায় ১২ জন আহত হয়৷ আটক করা হয় আটজনকে৷ ডিআইজি জানান, ‘‘গুলশানে যারা হামলা চালিয়েছে, ধারণা করছি শেলাকিয়ায় হামলা সেই একই চক্রেরই কাজ৷ আমরা এ দু'টি ঘটনার মিল পেয়েছি৷''
শোলাকিয়ার ইমাম মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসউদ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এই ঘটনার সাথে জামাত-শিবির জড়িত থাকতে পারে৷ তবেই যে-ই থাকুক, যারা হামলা চালানোর নির্দেশ দিয়েছে তারা ইসলামের শত্রু৷ তারা তারুণদের ভুল পথে পরিচালিত করছে৷''
তবে গুলশান হামলায় জড়িত জঙ্গিরা ভারতের ড. জাকির নায়েকের অনুসারী বলে যে অভিযোগ উঠেছে, সে ব্যাপারে সরাসরি কোনো সন্তব্য করেননি শোলাকিয়ার ইমাম৷ তিনি শুধু বলেছেন, ‘‘আমি ড. জাকির নায়েকের বক্তব্য শুনিনি৷ তবে যে অভিযোগ উঠেছে তা নিয়ে তদন্ত হতে পারে৷''
বাংলাদেশে সন্ত্রাসবাদ প্রতিহত করার জন্য কি বিদেশি সহায়তার দরকার? লিখুন নীচের ঘরে৷