1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বাংলাদেশে পুরুষ ধর্ষণ এবং ‘বিচারহীনতা’

সুলাইমান নিলয় ঢাকা
১ এপ্রিল ২০২২

ধর্ষণের কথা ভাবলে এর শিকার যে পুরুষরাও হতে পারেন, তা চট করে মাথায় আসে না৷ আইনি কাঠামো, সামাজিকভাবে প্রতিরোধের ক্ষেত্রগুলোতেও তাই গুরুত্ব পায় না ‘পুরুষ-ধর্ষণ’৷ এমনকি এটাকে অনেক ক্ষেত্রে ধর্ষণ হিসাবে স্বীকারই করা হয় না৷

https://p.dw.com/p/49LIS
প্রতীকী ছবিছবি: DWL. Ndinda

সম্প্রতি এক প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষকে ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়েছেন রংপুরের পীরগাছা থানার পুলিশ কর্মকর্তা স্বপন কুমার রায়৷ পাশাপাশি ২০১৭ সালে ধর্ষণের পর এক ছাত্রের মৃত্যুর ঘটনায় খাগড়াছড়িতে এক হাফেজি মাদ্রাসার শিক্ষকের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ৩০ লাখ টাকা জরিমানা হয়েছে৷

শৈশবে একবার সংঘবদ্ধ ধর্ষণ এবং আরো দুইবার ধর্ষণসহ নানাভাবে যৌন নিপীড়নের শিকার হওয়া কওমি মাদ্রাসার এক সাবেক ছাত্র খাগড়াছড়ির রায় প্রসঙ্গে ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, এভাবে বিচারের ঘটনা তিনি এর আগে কখনোই শোনেননি৷

পুরুষ ধর্ষণের পরিসংখ্যান

মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের তথ্য বলছে, দেশে ২০১৭ সালে ছেলে শিশু ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ২০টি, ২০১৮ সালে ৭টি, ২০১৯ সালে ৩৭টি, ২০২০ সালে ৫২ এবং ২০২১ সালে ৭৮টি৷

সংস্থাটির কর্মকর্তা নার্গিস আক্তার ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরা পত্রিকার মাধ্যমে এই ঘটনাগুলো সম্পর্কে জানতে পেরেছি৷ অধিকাংশ ঘটনাই মাদ্রাসাতে ঘটেছে৷ সম্প্রতি পুলিশের এসআই কর্তৃক রংপুরে পুরুষ ধর্ষণের ঘটনাও ঘটেছে৷’’

তিনি মনে করেন, ‘‘অনেকেই বিচারের দিকে ধাবিত হয় না৷ লোকলজ্জ্বার ভয়ে অভিযোগটা করে না৷’’

রংপুর  খাগড়াছড়িতে যা ঘটেছে

রংপুরের পীরগাছা থানার এসআই স্বপ্ন কুমার রায়ের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগে গত ১৮ মার্চ মামলা করেছেন ৪৮ বছর বয়সি এক ভ্যানচালক৷

ডয়চে ভেলের কন্টেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম এক প্রতিবেদনে ওই ভ্যানচালককে উদ্বৃত করে জানায়, ১৬ মার্চ রাতে তাকে হুমকি দিয়ে বাসায় নিয়ে যান স্বপন৷ এরপর খাদ্যদ্রব্যের সাথে চেতনানাশক খাইয়ে অজ্ঞান করে ফেলেন৷ এক পর্যায়ে চালান যৌন নির্যাতন৷ সকালে ভ্যানচালক সেই বাসা থেকে বের হয়ে আসতে পারলেও দ্রুত অসুস্থ হয়ে পড়েন৷ এক পর্যায়ে তাকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়৷

মামলা দায়েরের দিন স্বপনের ধর্ষণের বিচারের দাবিতে পীরগাছা বাজারের চারমাথা অবরোধ করে বিক্ষোভ করে এলাকাবাসী৷ এক পর্যায়ে তারা থানাও ঘেরাও করে৷

অভিযোগ ওঠার পর ওই পুলিশ কর্মকর্তাকে প্রত্যাহার করে প্রথমে পুলিশ লাইন্সে যুক্ত করা হলেও পরে বিক্ষোভের মুখে তাকে গ্রেপ্তার করে আদালতে নেয়া হয়৷ আদালত তাকে কারাগারে পাঠায়৷

কওমি মাদ্রাসাগুলো ধর্ষণ বন্ধে ২০১৯ সালে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লেখা শুরু করেছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী মীর হুযাইফা আল-মামদূহ৷ এক সময় কওমি মাদ্রাসার শিক্ষার্থী ছিলেন তিনি৷

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘কওমি মাদ্রাসায় এই ধরনের অপরাধ সংঘটিত হলে অভিযুক্তরা বাঁচার জন্য ধর্মকে ব্যবহার করেন৷’’

২০১৭ সালে রমজান মাসে খাগড়াছড়ির দীঘিনালা উপজেলার ছোট মেরুং আল ইকরা হিফজুল কোরআন মাদ্রাসার এক ছাত্র ধর্ষণের শিকার হয়ে মৃত্যুবরণ করেন৷ সেই ঘটনায় মাদ্রাসার শিক্ষক মো. নোমান মিয়া ওরফে রোমান (২২)-কে গত ২৩ মার্চ ওই জেলার একটি আদালত যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়৷ পাশাপাশি ভিক্টিমের পরিবারকে ৩০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়ার নির্দেশও দেয়া হয় দণ্ডিতকে৷

রায়ের পর রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বিধান কানুনগো রায় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘‘এমন রায় সমাজে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে৷’’

কওমি মাদ্রাসায় পড়ার সময় ধর্ষণের শিকার হওয়া এক ব্যক্তির সাথেও কথা বলেছে ডয়চে ভেলে৷ এই রায়কে ব্যতিক্রম হিসাবে মানছেন তিনিও৷ রায় প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘আমি বোধহয় আপনার মুখে প্রথম শুনলাম যে, এ রকম একটা জাজমেন্ট আসছে৷’’

তার মতে, ধর্ষণের শিকাররা সব ক্ষেত্রে বিচারপ্রার্থী হলে অনেক বেশি ঘটনা এবং মামলার খবর জানা যেতো৷ তিনি বলেন, ‘‘যে পুরুষ বা ছেলেগুলো এসবের সম্মুখীন হয়, তাদের মধ্যে এক ধরনের লজ্জা থাকে৷ তারা মনে করে, আমি তো অনেক ছোট হয়ে যাচ্ছি৷ লজ্জার কারণে তারা প্রথমত প্রকাশ করতে চায় না৷ ছোট থাকতে এসব ঘটনার শিকার ব্যক্তিরা বড় হয়েও প্রকাশ করছে না৷’’

তিনি আরো বলেন, ‘‘হুজুররা যেহেতু এসবে জড়িত থাকে, পাওয়ার প্র্যাকটিসের ক্ষেত্রে হুজুররা মাদ্রাসা পরিসরে বেশ ভালো পাওয়ার প্র্যাকটিস করে৷ তাই ঘটনাগুলো যেন বাইরে প্রকাশ না হয়, সেটা তারা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে৷ তাই এসবের ক্ষেত্রে আদালত তো দূর, সামাজিক ক্ষেত্রেও ঘটনাগুলো যায় না৷’’

পুরুষ ধর্ষণ, নাকি বলাৎকার

বাংলাদেশে ধর্ষণের বিচার মূলত আবর্তিত হয় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন এবং দণ্ডবিধিকে কেন্দ্র করে৷ তবে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে ধর্ষণের সংজ্ঞা দেয়া হয়নি৷ বরং আইনের সংজ্ঞা অংশে দণ্ডবিধির ৩৭৫ ধারাকে রেফার করা হয়েছে৷

এই ধারায় ৫ ধরনের ‘পেনিট্রেশনকে’ ধর্ষণ বলা হয়েছে, সবগুলোতেই একজন নারীর সাথে সংঘটিত পুরুষের অপরাধকে চিহ্নিত করা হয়েছে৷

এ প্রসঙ্গে আইন ও সালিশ কেন্দ্রের কর্মকর্তা নার্গিস আক্তার ডয়চে ভেলেকে বলেন, অপরাধ এক হলেও ছেলেশিশু হলে বলাৎকার আর মেয়েশিশু হলে ধর্ষণ ব্যবহার করতে হচ্ছে৷

এর আগে একটি লেখায় তিনি বলেছেন, ‘‘ইংরেজ শাসনামল হতে আমাদের দেশে বলাৎকার এবং সমকামিতাকে দণ্ডবিধির ৩৭৭ ধারার অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়৷’’

সম্প্রতি পুরুষ ধর্ষণ নিয়ে হাই কোর্টে একটি রিট দায়ের করা হয়েছে৷ রিটকারীদের আইনজীবী তাপস কান্তি বল ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘রিটটা আমরা করেছিলাম মজিবুর রহমান মিয়া সাহেবের কোর্টে৷ কিন্তু শুনানি করতে পারিনি৷’’

‘‘দণ্ডবিধির ৩৭৫ সেকশনকে আমরা চ্যালেঞ্জ করে বলেছি, সেই ডেফিনিশনটা কেবল ভ্যাজাইনাল পেনিট্রেশনকে রিকগনাইজ করে৷ কিন্তু শব্দটা যদি কেবল পেনিট্রেশন হয়, সেক্ষেত্রে শরীরের যে কোনো জায়গায় পেনিট্রেট করলেই সেটা ধর্ষণ হিসাবে বিবেচিত হবে৷ আমরা আইনে থাকা ধর্ষণের সংজ্ঞার জেন্ডার নিউট্রালাইজেশন দাবি করেছিলাম৷’’

তাপস বলেন, ‘‘নারী ও শিশু নির্যাতন আইনটাতো কেবল নারীদের জন্য৷ সেখানে কিছু বলার নেই৷’’

হাই কোর্টের রায় উপেক্ষিত

বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির এক রিটে ২০০৯ সালে হাই কোর্ট একটি রায় দেয়৷ কর্মক্ষেত্র ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যৌন অপরাধ প্রতিরোধে এই রায়কে মাইলস্টোন হিসাবে বিবেচনা করা হয়৷

এই রায়ে যৌন অপরাধের সংজ্ঞায়নও করা হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে যৌনতাড়িত অযাচিত শারীরিক স্পর্শ, প্রশাসনিক, কর্তৃত্বমূলক ও পেশাগত ক্ষমতাকে ব্যবহার করে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনের চেষ্টা, যৌন সুবিধা নেয়ার অনুরোধ বা দাবি, পর্নগ্রাফি প্রদর্শন, যৌন ইঙ্গিত, অশোভন ইঙ্গিত, যৌন উদ্দেশ্যপ্রণোদিত কৌতুক, অবমাননাকর ভাষায় টিজ করা, স্টক করা, যৌন উদ্দেশ্যে চিঠি, টেলিফোন কল, ফোন কল, এসএমএস, আঁকাআঁকি, কার্টুন, চেয়ার-টেবিল-বেঞ্চ-নোটিশ বোর্ড বা অফিস, ফ্যাক্টরি, ক্লাস রুম, ওয়াশ রুমের ওয়ালে লেখালেখি, ব্ল্যাকমেইল ও ক্যারেক্টার অ্যাসাসিনেশনের জন্য ছবি বা ভিডিও ধারণ৷ ভালোবাসার প্রস্তাবে অস্বীকার করায় হুমকি প্রদান, যৌন সম্পর্ক স্থাপনের চেষ্টা, যৌন হয়রানির উদ্দেশ্যে খেলাধুলা বা সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে বাধা প্রদান প্রভৃতি৷

ওই রায়ে বলা হয়, বাংলাদেশের সরকারি বেসরকারি সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও কর্মক্ষেত্রে একটি অভিযোগ কমিটি থাকতে হবে৷ অভিযোগ গ্রহণের পর যারা তদন্ত করবেন এবং সুপারিশ দেবেন৷ ৫ সদস্যের এই কমিটির অধিকাংশ সদস্য  হবে নারী এবং সুযোগ থাকলে একজন নারীকেই প্রধান রাখতে হবে৷

এছাড়া কমিটির অন্তত দুই জন থাকবে প্রতিষ্ঠানের বাইরে থেকে, এরা সেক্সুয়াল অ্যাবিউজ ও জেন্ডার ইস্যুতে কাজ করা ব্যক্তি হলে ভালো হয়৷

কমিটি থেকে প্রতিবেদন পেলে দায়ী ব্যক্তি ওই প্রতিষ্ঠানে চাকুরিরত হলে তাকে সাসপেন্ড এবং শিক্ষার্থী হলে ক্লাস থেকে দূরে রাখা যেতে পারে৷

যৌন নিপীড়নের ক্ষেত্রে মিসকন্ডাক্ট হিসাবে বিবেচনা করে ডিসিপ্লিনারি রুল অনুসারে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে এতে৷ পাশাপাশি অপরাধটি যদি বাংলাদেশের আইনে বিচার্য হয়, তাহলে যথাযথ কোর্ট বা ট্রাইব্যুনালে বিষয়টি নিয়ে যেতে হবে৷

সরকারি,বেসরকারি সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও কর্মক্ষেত্রে এই গাইডলাইন কঠোরভাবে পালন করার বিষয়টিও উল্লেখ করে দেয় হাই কোর্ট৷

এই রায়টি কতটা বাস্তবায়ন হয়েছে, সেটা নিয়ে ২০১৮ সালে একটি গবেষণা হয় বেসরকারী সংস্থা অ্যাকশনএইডের উদ্যোগে৷ সেই গবেষণায় অংশ নিয়েছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক তাসলিমা ইয়াসমীন৷

তিনি বলেন, ‘‘শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানি বন্ধের জন্য প্রত্যেকটি প্রতিষ্ঠানে একটি করে অভিযোগ কমিটি থাকতে হবে, সেখানে বিভিন্ন ধরনের প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে, যাতে করে যৌন হয়রানি না হয়৷ প্রশিক্ষণের বিষয় ছিল৷ এই বিষয়গুলো আসলে কতটুকু মানা হচ্ছে প্রতিষ্ঠানগুলোতে-সেটা আমরা দেখতে চেয়েছিলাম৷’’

এই ধরনের একটি নির্দেশনা যে রয়েছে এবং এটি যে বাধ্যতামূলক, এই বিষয়টিই অনেকের জানা নেই: তাসলিমা ইয়াসমীন

‘‘তখন আমরা দেখেছিলাম, এই ধরনের একটি নির্দেশনা যে রয়েছে এবং এটি যে বাধ্যতামূলক, এই বিষয়টিই অনেকের জানা নেই৷ সবখানেই আমরা সিনিয়র ম্যানেজমেন্ট লেভেলেই কথা বলেছি৷ তারা জানেনই না, এ ধরনের একটি গাইডলাইন রয়েছে৷ কেবল বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ক্ষেত্রে দেখেছি, তারা জানেন, কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই খুব একটা প্র্যাকটিকালি কাজ করছে না৷’’

‘‘গত তিন-চার বছরে সচেতনতার দিক থেকে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে৷ মাল্টিন্যাশনাল, সরকারি অনেক জায়গায় কমিটি করা হয়েছে৷’’

‘‘সচেতনতাটা বেড়েছে৷ যতটুকু হয়েছে, সেটাও আমাদের কর্মক্ষেত্রের তুলনায় নগণ্য৷ যেগুলো হয়েছে, সেটাও কাগজে-কলমে করে রাখার জন্য করে রাখা৷ অথবা সেটা ফাংশনাল কিনা, সেটা দেখার জন্য কোনো মেকানিজম নেই৷’’

এই রায় কওমি মাদ্রাসাকে একজেম্পট করে কি-না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এই রায় কাউকেই একজেম্পট করে না৷

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘কওমি মাদ্রাসাগুলো রেসিডেন্সিয়াল প্রতিষ্ঠান৷ সেখানে আবাসিক ব্যবস্থা রয়েছে৷ সেখানে আরো বেশি গুরুত্ব সহকারে দেখা দরকার৷’’

তবে এ বিষয়ে একটা আদর্শ অবস্থানে পৌঁছাতে একটি আইন করা প্রয়োজন বলে মত ব্যক্ত করেন তিনি৷

তিনি বলেন, লিগ্যাল ফ্রেমওয়ার্কের পাশাপাশি ইম্প্লিমেন্টেশন ম্যাকানিজম একইসাথে তৈরি করতে হবে৷

এই রায় বাস্তবায়ন না হওয়ায় আইন ও সালিশ কেন্দ্র সম্প্রতি আরেকটি রিট দায়ের করেছে হাই কোর্টে৷

এই মামলায় আইন ও সালিশ কেন্দ্রের আইনজীবী সৈয়দা নাসরিন ডয়চে ভেলেকে বলেন, হাই কোর্টের রায়ের পরও কোনো এনফোর্সমেন্ট হচ্ছিল না৷ সরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কোথাও দেখা যায় না৷ দুয়েকটা আন্তর্জাতিক সংগঠন এটা মেনে চলে৷ এটা নিয়ে কোনো গাইডলাইন বা আইনও বাংলাদেশ সরকার করেনি৷ এই নিষ্ক্রিয়তাকে চ্যালেঞ্জ করেই এই রিটটা করা হয়েছে৷ আদালত আগের রায় বাস্তবায়নে সরকার কী করেছে, সেটা জানাতে অন্তর্বর্তীকালীন নির্দেশনা দেয়া হয়েছে৷

তিনি মনে করেন, ‘‘বাস্তবায়নের অগ্রগতি প্রতিবেদন দেয়ার সময় হলে সরকার বলতে বাধ্য হবে, তারা কী কী করেছে৷ আগের রায়কে বাস্তবায়ন করতে আর কোনো বিকল্প ছিল না৷ তাই আমরা এই রিটটা করি৷’’

সাক্ষাৎকারের এক পর্যায়ে তিনি বলেন, ‘‘রিটটা ফাইল করার আগে অনেকগুলো প্রতিষ্ঠানকে আমরা লিগ্যাল নোটিশ দিয়েছিলাম৷ বাংলাদেশ ব্যাংকেও  যৌন হয়রানি প্রতিরোধে কমিটি নেই৷ আপনাকে আরো ইন্টারেস্টিং জিনিস বলি, আমাদের সুপ্রিম কোর্ট, বার কাউন্সিলেও ছিল না৷ আমাদের নোটিশের পর সুপ্রিম কোর্টে কমিটি হয়েছে৷’’

কওমি মাদ্রাসায় ধর্ষণের বিচার কোন পথে

কওমি মাদ্রাসায় ছেলে ধর্ষণের বিচার নিয়ে এ পর্যন্ত সবচেয়ে বড় আলোড়নটি তৈরি হয়েছিল ২০১৯ সালে৷ তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মীর হুযাইফা আল-মামদূহ বিষয়টি নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে লেখা শুরু করেছিলেন৷ হুযাইফা নিজেও এক সময় কওমি মাদ্রাসার শিক্ষার্থী ছিলেন৷

ওই সময় দুনিয়াজুড়েই ‘মি টু’ আন্দোলন চলছিল৷ সামাজিক মাধ্যমে শুরু করা আন্দোলনে হুযাইফাও বিভিন্ন ভিক্টিমের বক্তব্য ফেসবুকে প্রকাশ করতে থাকেন৷ #me_too লিখে কয়েকজন নিজের ফেসবুকেও তার সাথে ঘটা যৌন অপরাধের বর্ণনা দেন৷

এই আন্দোলনের পর হুযাইফার মা চাকরি হারান৷ হুযাইফার মা একটি মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করতেন৷ হুযাইফা নিজে চাকরির অফার পেয়েও শেষ পর্যন্ত ঢাকা থেকে প্রকাশিত মূলধারার একটি পত্রিকায় যোগ দিতে পারেননি৷ তিনি মনে করেন, আন্দোলনের কারণেই তাকে বঞ্চিত হতে হয়েছে৷

আত্মীয়-স্বজনসহ নানা জায়গা থেকে তিনি প্রতিরোধের মুখে পড়েছেন৷ শেষ পর্যন্ত হুযাইফা ফেইসবুক আইডিটি হারান৷

মীর হুযাইফা আল-মামদূহ
মীর হুযাইফা আল-মামদূহছবি: Getty Images/AFP/M. Uz Zaman

মাদ্রাসায় ধর্ষণ সংঘটিত হলে ভেতরে কী ধরনের প্রতিক্রিয়া হয়-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘প্রথমত শিক্ষকরা এটা চেপে যান৷ এটা নিয়ে কথা বললে সেটাকে মাদ্রাসা বন্ধের ষড়যন্ত্র হিসাবেও অনেকে দেখেন৷ মাদ্রাসা রক্ষা, ইসলাম রক্ষার কথা বলে চেপে যান৷’’

পুরুষদের ধর্ষণকারীদের বিচারের আওতায় আনতে কী করা উচিত- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘বিচারের আওতায় আনার আগে এই জিনিস যে অপরাধ, এর সাথে যে ইসলামের যোগসূত্র নেই এবং হুজুররা যে মানুষ, অন্য যে কোনো মানুষের মতো সে পাপ করে, সে পাপ করলে যে ধরিয়ে দিতে হবে-এই ব্যাপারগুলো আগে ছড়িয়ে দিতে হবে৷এটা না করতে পারলে তারা চেপে যেতে থাকবে৷’’

‘‘আর মাদ্রাসাগুলোকে জবাবদিহিতার জায়গায় আনতে হবে৷ প্রত্যেকটা মাদ্রাসায় একটা করে সেল থাকতে হবে, যেখানে বাচ্চারা নির্দ্বিধায় বলতে পারবে যে, আমার সাথে এটা ঘটেছে৷ বড় রকমের পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে বিচারের বিষয়টা আসবে৷’’

মাদ্রাসায় হাই কোর্টের রায় অনুসারে এখনো কোনো কমিটি করা হয়নি বলেও মন্তব্য করেন তিনি৷

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যৌন হয়রানি প্রতিরোধে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে মাঝে মাঝেই হাই কোর্টের রায়ের কথা মনে করিয়ে দেয় বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন বা ইউজিসি৷ এ বিষয়ে সবাইকে একটি করে অভিযোগ কমিটি গঠন এবং বছর বছর সেই কমিটির প্রতিবেদন ইউজিসিতে জমা দেয়ার তাগিদও দেয়া হয়৷

কওমি মাদ্রাসায় এমন কোনো ব্যবস্থাপনা গড়ে উঠেছে কিনা, জানতে ডয়চে ভেলের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয় সম্মিলিত কওমি বোর্ড আল-হাইআতুল উলয়া লিল-জামিআতিল কওমিয়া বাংলাদেশের চেয়ারম্যান মাওলানা মাহমুদুল হাসানের সাথে৷

তিনি জানান, এ বিষয়ে তার সাথে কথা না বললেই ভালো হয়৷

এ কথা জানিয়েই তিনি ফোন কেটে দেন৷ পরে আর ফোন ফোন ধরেননি৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য