নারী সাইকেল আরোহী বাড়ছে
১৫ মার্চ ২০১৭ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ডেপুটি কমিশনার মোস্তাক আহমেদ গত সোমবার পুলিশ কনেস্টবল লুৎফাকে নিয়ে ফেসবুকে পোস্টটি দেন৷ আর সেখানে সাইকেল চালানো অবস্থায় লুৎফার একটি ছবি দিয়ে তিনি লেখেন, ‘‘পুলিশে পরিবর্তন, বিস্মিত, অভিভূত আমি!! আজ সকালে আমি অফিসে আসার সময় মগবাজার মোড়ে দেখলাম একজন নারী কনস্টেবল সাইকেল চালিয়ে অফিসে যাচ্ছেন৷ তাঁর কাধে ব্যাগ, মাথায় হেলমেট৷ আমি গাড়ি টান দিয়ে সামনে এসে কথা বললাম৷ নাম লুৎফা, শিল্পাঞ্চল থানায় দায়িত্ব পালন করেন৷ আবাসস্থল থেকে কর্মস্থল দূরে থাকায় সাইকেল চালিয়ে তিনি কর্মস্থলে যাচ্ছেন৷ আমার ১৬ বছরের চাকরি জীবনে আমি বাংলাদেশ পুলিশে বহু ইতিবাচক পরিবর্তন দেখেছি৷ কিন্তু ব্যাগ কাঁধে হেলমেট পরে এক নারী সহকর্মীর কমর্স্থলে গমন সত্যি আমাকে বিস্মিত অভিভূত করেছে৷ আমি বিশ্বাস করি, লুৎফার এ রূপ কর্মস্থলে গমন বাংলাদেশ পুলিশের পরিবর্তন ও উন্নয়নের এক অবিস্মরণীয় মাইলফলক৷ তাঁর সহকর্মী হতে পেরে আমি গর্বিত৷''
বাংলাদেশে গত এক দশক ধরে নারীদের মধ্যে সাইকেল ব্যবহারের প্রবণতা বাড়ছে৷ বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের স্কুল ছাত্রীরা সাইকেল ব্যবহার করছেন স্কুলে যাওয়া-আসার জন্য৷ বিভিন্ন বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের নারী কর্মী, স্বাস্থ্যকর্মীরাও সাইকেল ব্যবহার করছেন৷ এছাড়া ছাত্রীদের সাইকেল কেনার জন্য আর্থিক সহায়তা দিতে এগিয়ে আসছে বিভিন্ন ব্যাংক ও এনজিও৷
ঢাকায় নিয়মিত সাইকেল চালিয়ে যাঁরা কাজে যান বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যান, তাঁদেরই একজন মাহজাবির ফেরদৌস প্রভা৷ প্রভা একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী৷ তিনি টিউশনিও করেন৷ ডয়চে ভেলেকে প্রভা বলেন, ‘‘বাইসাইকেল আমার খরচ এবং সময় দু'টোই বাঁচিয়ে দিয়েছে৷ জ্যামে বসে থাকতে হয় না৷ আর একবার সাইকেল কেনার পর খরচ বলতে তেমন আর কিছু নেই৷''
তিনি আরো বলেন, ‘‘পাবলিক বাসের ধাক্কাধাক্কি আর নানা হয়রানি থেকে বাইসাইকেল আমাকে মুক্তি দিয়েছে৷''
প্রভা মনে করেন, ‘‘ঢাকায় প্রধানত ছাত্রীরাই বাইসাইকেল চালান৷ কিছু কর্মজীবী নারীও চালান৷ আর বাইসাইকেল চালাতে পথে-ঘাঁটে সামাজিক কিছু সমস্যা হয়৷ কিন্তু সহযোগিতার মনোভাব এখন বাড়ছে৷ কত নারী বাইসাইকেল চালায় তা ঠিক বলা না গেলেও প্রতিদিনই এদের সংখ্যা বাড়ছে৷ তারা গ্রুপ করে চালাচ্ছে৷ ক্লাবও করছে৷ সাইকেল চালানোর প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও আছে৷''
প্রভা জানালেন, তিনি সাইকেল নিয়ে দূরে ভ্রমণেও যান৷ ঢাকার বাইরেও যান৷ তিনি আরো জানান, দলবেঁধে সাইকেলে ঘুরতে পছন্দ করেন তিনি৷
মিরপুরের আতিক নোমান চাকরি ও পড়াশোনা করেন৷ মিরপুর এলাকায় যাঁরা বাইসাইকেল চালান তাঁদের নিয়ে একটি সংগঠন গড়ে তুলেছেন৷ নাম-মিরপুর রাইডার্স৷ সাইকেল চালানোর ভালো দিক সম্পর্কে জানাতে গিয়ে নোমান বলেন, ‘‘খরচ নেই, পুলিশের ঝামেলা নেই, জ্যামের কষ্ট নেই৷ তাই বাইসাইকেল হলো আমার কাছে সবচেয়ে স্মার্ট এবং সাশ্রয়ী বাহন৷ এটা পরিবেশ দূষণ করে না৷ ট্রাফিক জ্যাম কমায় এবং ট্রাফিক জ্যামকে পরাজিত করে৷'' নোমানের মতে সাইকেলের আরেকটা সুবিধা হলো, ‘‘সাইকেল খুব কম জায়গা দখল করে৷ তাই সাইকেল যত বেশি হবে, ট্রাফিক জ্যাম কমবে৷''
‘বিডি সাইক্লিস্ট' নামে সংগঠনটি বাইসাইকেল আরোহীদের সবচেয়ে বড় সংগঠন৷ সারাদেশে এর সদস্য সংখ্যা ৭০ হাজার৷ আর ঢাকায় সদস্য ২৫ হাজার ৷ নোমান বলেন, ‘‘ধরে নেয়া যায় ঢাকায় কমপক্ষে ২৫ হাজার সাইকেল আরোহী আছে৷ তবে বাস্তবে এই সংখ্যা আরো বেশি হবে৷ এবং দিন দিন সাইকেল আরোহী বাড়ছে৷ আর নারীরাও উৎসাহী হচ্ছেন৷''
ঢাকায় নাগরিকদের কর্মস্থল থেকে অফিস গড়ে ১০ থেকে ১৫ কিমি. দূরে৷ আর এই দূরত্ব যেতে ট্রাফিক জ্যামের কারণে দেড়-দুই ঘণ্টা লেগে যায়৷ কিন্তু বাইসাইকেলে সর্বোচ্চ ৩০ মিনিট সময় লাগে৷ তার মানে হলো, বাস্তবে যান্ত্রিক যানবাহনের চেয়ে বাইসাইকেলের গতি এখন বেশি৷ নোমান জানান, ‘‘একটি সাধারণ মানের বাইসাইকেলের দাম এখন ৬ থেকে ১০ হাজার৷ ব্যস, এই খরচের পর অনেকটা নিরাপদ এবং দ্রুত ভ্রমণের নিশ্চয়তা দেয় বাইসাইকেল৷''
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশে বাইসাইকেলের আলাদা কোনো রেজিস্ট্রেশন এবং আরোহীর ড্রাইভিং লাইসেন্স লাগে না৷
নারী কনেস্টবল লুৎফাও ডয়চে ভেলেকে একইরকম কথা বলেন, ‘‘আমি আমার প্রয়োজনে সাইকেল চালাই৷ যথাসময়ে অফিসে যাওয়ার জন্য আমি সাইকেলে চড়ি৷ পাবলিব বাসে জ্যামের কারণে সময়ের ঠিক নাই৷ স্কুটি হলে ভালো হতো৷ আমার অত টাকা নাই, তাই সাইকেল ব্যবহার করি৷''
তিনি আরো বলেন, ‘‘আমি কীভাবে চলবো, তা আমার সিদ্ধান্তের ব্যাপার, আমার মনের ব্যাপার৷ সমাজ কী বলল, সেদিকে তাকিয়ে থাকলে চলবে না৷''
বন্ধু, কেমন লাগলো প্রতিবেদনটি? জানান আমাদের, লিখুন নীচের ঘরে৷